মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বানের পানিতে মিশেছে কৃষকের চোখের পানি

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান : সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান এখন পানির নিচে। যেদিকে চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। যেন দিগন্ত বিস্তৃত সাগর। ক’দিন আগেও কাঁচাপাকা ধানের বিপুল সমারোহে অন্যরকম দৃশ্য ছিল হাওর এলাকার। কৃষকরা ছিল স্বপ্নের আবেশে বিভোর। কিছুদিনের মধ্যেই ঘরে উঠবে সোনালী ধান। এই ধানের জন্যই ছিল তাদের অপেক্ষা। চাষাবাদে তাদের অপরিমেয় শ্রমই নয়, বড় অংকের অর্থও ব্যয় হয়েছে। আশা ছিল, ধানে সারা বছরের খোরাকি, সংসারের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ, ধারদেনা শোধ-সব কিছুই নিশ্চিত হবে। ভাগ্যের ফেরে এখন তাদের সব স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। এক গভীর শূন্যতা তাদের আঁকড়ে ধরেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় তারা এখন দিশাহারা।
চৈত্র মাসে বৃষ্টি হয়, তবে এমন ভারী ও অবিরাম বৃষ্টি সচরাচর হয় না। কৃষকরা তাই কল্পনাও করতে পারেনি, ভারী বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে ধেয়ে আসা ঢল এভাবে তাদের একমাত্র ফসল ডুবিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। বর্ষায় পানি বাড়ে, বন্যা হয়। এতে ফসল, সহায়-সম্পদ ও বাড়িঘরের ক্ষতি হয়। অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু আগাম বন্যায় এত বিরাট ক্ষতি দেখা যায় না। আর ১৫/২০ দিনের মধ্যেই ধান পেকে যেত। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে এই বিরাট ক্ষতি হতো না। এ সুযোগটি কৃষকরা পায়নি। তাদের পাওয়া ধন কেড়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এই আকস্মিক-অকাল বন্যা।
লাগাতার বৃষ্টি এই সয়লাবের একমাত্র কারণ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে নেমে আসা অপ্রতিরোধ্য ঢল। পানির তোড়ে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে, কোথাও বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে ধানক্ষেতে। দেখতে দেখতে ধান চলে গেছে পানির নিচে। পানি সরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। দশক দুই আগে এরকমই এক চৈত্র মাসে বৃষ্টি ও ঢলে ভেসে গিয়েছিল হাওর এলাকা। তখনও তৈরি হয়েছিল অনড় জলাবদ্ধতা। তাতে এক ছটাক ধানও ঘরে তোলা সম্ভবপর হয়নি কৃষকদের পক্ষে। এত বছর বছর সেই দুর্ভাগ্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ-পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন। গোটা হাওর এলাকার ৮০ শতাংশ এখন পানির নিচে। যদি বর্ষণ থামে, ভারত থেকে ঢল কমে যায় তাহলে কিছু ধান হয়তো রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। তবে এ সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। খবর পাওয়া গেছে, ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রায় প্রতিদিনই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির পানি সুরমা, কুশিয়ারা ও অন্যান্য নদী ছাপিয়ে ঢুকে পড়ছে জনপদে, হাওর এলাকায়। চৈত্র মাসে এমন বারিপাত বহুদিন এই অঞ্চলে হয়নি। বর্ষণ সহসা কমে যাবে, এমন আলামত দেখা যাচ্ছে না। এর অর্থ দাঁড়ায়, বন্যা পরিস্থিতির আশু উন্নতি হচ্ছে না এবং ধান বাঁচানোর সুযোগও আর থাকছে না।
কথা উঠেছে, হাওর এলাকার বেড়িবাঁধ নিয়ে। বেড়িবাঁধগুলো যদি ঠিকঠাক থাকতো তবে এতবড় বিপর্যয় হয়তো ঘটতে পারতো না। বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়া কিংবা বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়া থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, বাঁধ ঠিকমত তৈরি করা হয়নি। বাঁধ সংস্কারের কাজও ভালোমতো হয়নি। হাওর এলাকার ধান রক্ষা করাসহ জনপদ সুরক্ষার জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি বছর বাঁধ সংস্কার ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাঁধ সংস্কার-মেরামতের কাজ যথাসময়ে করা হয়নি। যতটুকু কাজ হয়েছে, তাও মানমতো হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ গায়েব করে দিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জে এবার বোরো আবাদ হয়েছে প্রায় সোয়া দু’লাখ হেক্টরে। ৪২টি হাওরের রক্ষাবাঁধ সংস্কার ও মেরামতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কথা ছিল, গৃহীত প্রকল্পগুলো পিআইসি ও ঠিকাদাররা যথাক্রমে ফেব্রæয়ারি ও মার্চের মধ্যে শেষ করবে। এই সময়সীমায় কাজ শেষ হয়নি। এর ফল দাঁড়ালো, কৃষকদের ধান গেল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাকাও গেল। শুধু সুনামগঞ্জ নয়, অন্যান্য জেলার হাওর এলাকার চিত্রও কমবেশি একই রকম। হাওর এলাকার কৃষকরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। বলেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকমতো ও যথাসময়ে বাঁধ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করলে তাদের এভাবে ফসল হারাতে হতো না। এমন বিপদ-বিপাক ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হতো না। বলা বাহুল্য, এই বান-বন্যা, ফসলহানি এবং লাখ লাখ কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এড়িয়ে যেতে পারে না। অবশ্যই বোর্ডকে এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আমরা আশা করবো, এ ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরের প্রশ্ন, এখন লাখ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কি হবে? আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত তারা কি করবে, কিভাবে তাদের দিন কাটবে? অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা এই, হাওর এলাকার কৃষকদের এই মহাদুর্দিনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তার উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। ফসল রক্ষার জন্য কেউ তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি। এখন তারা কিভাবে বালবাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকবে, সে ব্যাপারে কারো কোনো দায়দায়িত্ব আছে বলেও মনে হচ্ছে না। সরকারকে এ মুহূর্তেই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। প্রথমত, নিঃস্ব-নিঃসম্বল কৃষকদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে তাদের সেই কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। তৃতীয়ত, তাদের ঋণ ও ধারদেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে উৎপাদনক্ষতি হয়েছে তা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার ওপর অনিবার্যভাবেই চাপ বৃদ্ধি করবে। ব্যাপক উদ্যোগে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিই কেবল এই চাপ কমাতে পারে। সর্বোপরি, ভবিষ্যতে যাতে কৃষকদের এরকম মুসিবতে পড়তে না হয়, ধানের ভান্ডার বলে কথিত হাওর এলাকায় আর ফসলহানি না হয় সে জন্য বেড়িবাঁধ উঁচু ও শক্ত করে নির্মাণ করতে হবে। প্রতি বছর সংস্কার-মেরামতের কাজ যথাসময়ে মানসম্পন্নভাবে করার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
কয়েকটি জেলার হাওর এলাকার কৃষকরা যখন তাদের একমাত্র ফসল ধান হারিয়ে পথে বসেছে ঠিক তখনই উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার কৃষকরা একই ভাগ্যবরণের আশংকায় পতিত হয়েছে। তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা তীরবর্তী জনপদগুলোতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রামের পর গ্রাম এবং উঠতি ফসলের ক্ষেত বন্যায় ভেসে গেছে। তিস্তা পাড়ের কৃষকদের যে ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার কোনো উপায় নেই। তিস্তায় হঠাৎ এই পানি বৃদ্ধি, বন্যা ও ফসলহানির কারণ কিন্তু ভারী বর্ষণ নয়। ভারত থেকে নেমে আসা বিপুল পানিরাশিই এই বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ। সীমান্তের ওপারে বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রচুর। এখনও হচ্ছে। সেই পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে। খবর পাওয়া গেছে, তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব গেট এক সাথে খুলে দেয়া হয়েছে। ভারতের পানিতে তিস্তা ভেসে গেছে। ডুবে গেছে গ্রাম-জনপদ ও ফসলের ক্ষেত। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, কদিন আগেও তিস্তা পাড়ের কৃষকরা পানির জন্য হাহাকার করেছে। পানির অভাবে ক্ষেতে সেচ দিতে পারেনি, চাষাবাদ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে কিংবা বিকল্প ফসল আবাদে উৎসাহিত হয়েছে। এখন তাদের বহু শ্রম, কষ্ট ও অর্থ ব্যয়ের ফসল বানের পানিতে হারিয়ে গেছে। তাদের চোখের পানি আর বানের পানি একাকার হয়ে গেছে।
এটা বাংলাদেশের মানুষের অনিবার্য ভাগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে শুকিয়ে মরবে, আর বর্ষায় ডুবে মরবে। ভারত এই ব্যবস্থাই পাকাপাকি করেছে। ভারত দু’দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ, গ্রোয়েন, স্পার নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ কারণে শুকনো মৌসুমে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তার মতো বড় নদীগুলোও পানিশূন্য হয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। এদের শাখা নদীগুলোর অবস্থা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আরো শোচনীয়। পানির অভাবে কেবল কৃষিই নয়, শিল্প, নৌ যোগাযোগ, মাটি, প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, আবহাওয়া সব কিছুতেই বিপর্যয়কর প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হচ্ছে। খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিস্তা সেচ প্রকল্প ও গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পসহ যেসব সেচ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে সেসব সেচ প্রকল্প ইতোমধ্যেই প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় যেখানে লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব সেখানে এবার মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় মাত্র কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিস্তা ও পদ্মাকেন্দ্রিক এই দুটি সেচ প্রকল্পের এই করুণ হালের একমাত্র কারণ শুকনো মৌসুমে এই দুটি নদীতে পানি আসে না। উজান থেকে যথাক্রমে গজলডোবা ও ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি সরিয়ে নেয়। গঙ্গার পানি বণ্টনে একটি চুক্তি থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ কখনোই পানি পায় না। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি নেই। চুক্তি অনুযায়ী পানি পাওয়ার তাই প্রশ্ন নেই। কিছুদিন আগেও তিস্তায় মাত্র কয়েকশ কিউসেক পানি ছিল। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তি করার মহড়া অনেক দিন ধরে চলছে। শেষ পর্যন্ত আশা করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি ভারত সফরের সময় চুক্তিটি হবে। এটা বাংলাদেশের এক নম্বর ইস্যু। অথচ ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, চুক্তি হচ্ছে না। তবে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এই দফা ভারত সফরের সময় অন্তত ৩৩টি চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে জানানো হয়েছে। এত চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও তার মধ্যে বাংলাদেশের এক নম্বর ইস্যুটির ব্যাপারে কোনো চুক্তি এমনকি কোনো সমঝোতা স্মারকও হচ্ছে না। এর চেয়ে মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে!
বাংলাদেশের মানুষ শুধু গঙ্গা-তিস্তা নয় সব অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়। এটা কারো দান নয়, অধিকার। ভাটির দেশের মানুষকে এই অধিকার থেকে উজানের কোনো দেশ বঞ্চিত করতে পারে না। কিন্তু সরকার যখন এই অধিকার নিয়ে ভাবে না তখন তাদের অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা কে দেবে? অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ওপর বাংলাদেশ ও তার জনগণের ভবিষ্যৎ বিশেষভাবে নির্ভর করে। কবে এই ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভব হবে, কেউ বলতে পারে না। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নারাজিকে দায়ী করা হয়। এই সেদিনও তিনি বলেছেন, তিস্তায় পানি নেই। বলেছেন আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গকে দেখবেন তারপর দেখবেন বাংলাদেশকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তিস্তা নিয়ে কোনো চুক্তি হলেও পানি পাওয়া যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশকে বিদ্যমান বাস্তবতা ও ভারতের নীতি কৌশলের দিকটি মাথায় রেখেই পানি নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পানির কারণে বাংলাদেশ দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত, শুকনো মৌসুমে পানি না পেয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বর্ষায় ভারতীয় পানির আগ্রাসনে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশকে এমন পানিনীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে যাতে অবশ্যই এ দ্বিমুখী ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার পর্যাপ্ত উপায় ও ব্যবস্থা থাকে।
আগাম অকাল বর্ষণ ও ভারতীয় পানিতে বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের হাওর এলাকা এবং উত্তরাঞ্চলের তিস্তা তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা যে ক্ষতি ও বিপণœতার শিকারে পরিণত হয়েছে তা উপেক্ষা বা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন কৃষকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে যাতে তারা উঠে দাঁড়াতে পারে। এই সঙ্গে ফসলহানির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সামনে বর্ষাকাল। বন্যার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ জন্য এখনই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন