শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

নতুন বছরে নতুন করে স্বপ্ন দেখার প্রত্যাশা নিয়ে রাজশাহীতে উদযাপিত হলো পহেলা বৈশাখ

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : বিগত বছরের সব অপ্রাপ্তি আর গ্লানি মুছে দিয়ে জীর্ণ ও পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে। নতুন বছরে নতুন করে স্বপ্ন দেখার প্রত্যাশা নিয়ে রাজশাহীতে বাংলা নববর্ষকে বরন করা হলো। বর্ষ বরনের প্রস্তুতি বিশ কিছুদিন থেকে শুরু হয়েছিল। চৈত্রের শেষ দিনে রাতের বেলায় বাংলালিংকের উদ্যোগে ফায়ার ব্রিগেড মোড় হতে পদ্মা নদীর পাড় লালনশাহ মঞ্চ পর্যন্ত আল্পনার রংয়ে রাঙ্গিয়ে নববর্ষকে বরণ শুরু হয়। ভোর থেকেই নানা বয়েসী মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। সবার ঠিকানা ছিল নগরীর বিভিন্ন স্থানের আয়োজন গুলোয়। লোকজ মেলা, গান, কবিতা, শোভাযাত্রা, নাচ, রক্তদানসহ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার পান্তা ইলিশের পাশাপাশি আয়োজন ছিল খিচুড়ি ডিমের। সকাল বেলায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কলেজিয়েট স্কুল হতে শোভাযাত্রা বেরিয়ে রিভারভিউ স্কুলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে লোকজ মেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে। সাদাশাড়ি লালপাড় কিংবা সাদার সাথে লাল মিলিয়ে থ্রিপিস আর বৈশাখী শাড়ি পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় নামে নগরবাসী। প্রচন্ড তাপাদহ তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। প্রায় সবার গন্তব্যস্থল ছিল পদ্মা পাড়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দিকে। বরাবরের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের আয়োজন ছিল নজরকাড়া। গোটা ক্যাম্পাস মেতে উঠেছিল বাংলা নববর্ষ বরণের আয়োজনে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরপুর ছিল। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থবেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সমান শিক্ষার্থী নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলনা। শিক্ষা নগরী রাজশাহী হওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে দেড়লাখ শিক্ষার্থী। এরাই উৎসবকে জমজমাট করে রাখে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শোভাযাত্রায় নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার ক্ষণিকের জন্য লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় প্রবেশ মুল্য ফ্রি করে দেয়ায় সেখানে ভীড় জমে। দুপুরের চড়ারোদ্র আর জুম্মার নামাজের বিরতি দিয়ে ফের শুরু হয় বর্ষবরনের কর্মসুচি। বেলা একটু পড়ে এলে তাপাদহের কারনে আটকে থাকা মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বেরিয়ে আসে। সবাইকে সাথে নিয়ে ছুটির এ দিনটিকে ভাগাভাগি করে নিতে। পদ্মা বাধ আর বিশাল বালিচরের বুকে মানুষের ঢল নামে। চারিদিকে রং-বেরংয়ের পোশাক নানা বয়েসী মানুষ আর মানুষ। মরা পদ্মায় পানির স্রোত না থাকলেও শুস্ক বালিচরে ছিল মানুষের স্রোত। মুক্ত মঞ্চগুলোয় নির্দেশনা মোতাবেক বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করলেও মানুষের অবস্থান কমেনি। বিকেল পাঁচটার পর পদ্মা পাড়ের বিনোদন স্পট গুলোয় যাবার পথে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে ওদিকে আর যেতে দেয়নি। সন্ধ্যার পরও মানুষ ধীরে ধীরে ঘরে ফিরতে শুরু করে। ফিরতে গিয়ে পড়তে হয় বিড়ন্বনায়। মানুষের তুলনায় যানবাহন ছিল কম। আবার যানবাহন গুলোয় অনেক দুরে থামিয়ে দেয়া হয়। বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে যানবাহন মেলে। সুযোগ বুঝে অটোরিক্সা রিক্সা সবাই ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে। দিনভর ভালই ব্যবসা হয়েছে পদ্মা বাঁধের আশেপাশের খাবার দোকান অস্থায়ী শসা, ডাব, কলা, আখেররস, শরবত, তরমুজ, বাদাম, চানাচুর, ফুচকা, হালিম, বারোভাজা, আইসক্রীম, ওয়ালাদের। খৈমুড়ি বাতাসা নাড়– মুড়কির বিক্রিও মন্দ ছিলনা। দুপুর ও বিকেলে ফাষ্টফুডের দোকান গুলো ছিল জমজমাট। হাসপাতাল কারাগারে বৈশাখী খাবার পরিবেশন করা হয়। নববর্ষের সব অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্নে রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা ছিল নজরে পড়ার মত। পুরো নগরী ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। ফলে খুব সুন্দর ভাবে শেষ হয় নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। উপজেলা গুলোতেও ছিল নানা আয়োজন। গোদাগাড়ীর পদ্মা চরে বসেছে বৈশাখী মেলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন