শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

একই বাড়িতে ৯ চাক-মৌমাছির গুঞ্জরনে মুখরিত আঙ্গিনা

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি- দাঁড়াও না একবার ভাই, ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে- দাঁড়াবার সময়তো নেই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতার সদাব্যস্ত এই মৌমাছিরা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দল বেঁধে মধু আহরণের জন্য ছুটে যায়। আবার মধু নিয়ে চাকে ফিরে আসে। এ সময় সারা বাড়ি মৌমাছির গুঞ্জরনে মুখরিত হয়ে উঠে। মৌমাছির মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্যের দেখা মিলেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া (বি-পাড়া) উপজেলার কান্দুঘর গ্রামের ফারুক মাস্টারের বাড়িতে। একটি নয়, দুইটি নয়- ৯টি মধুচাক ঘিরে গত ২৫ বছরে বাড়িটি ওই গ্রামে মৌমাছিবান্ধব বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি খাদ্যের নাম বলতেই চলে আসবে মধুর নাম। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মধু তৈরির কৃতিত্ব পুরোটাই মৌমাছি নামের ছোট্ট একটা প্রাণীর। আর এ মৌমাছি সামাজিক প্রাণী। মধু ও মোম উৎপাদন এবং ফুলের পরাগায়নের জন্য মৌমাছিরা প্রসিদ্ধ। মৌমাছিরা গ্রামের মানুষের ভালমন্দ বুঝে চাক বাঁধে। আগেকার এমন প্রবাদের রেশ এখনো গ্রামগঞ্জে মিলবে। তা না হলে কী ফারুক মাস্টারের মতো একজন ভালো মানুষের বাড়িতে ২৫ বছর ধরে লাখ লাখ মৌমাছি বাস করতে পারতো? ১৯৯১ সালের কোন এক সন্ধ্যায় ফারুক মাস্টারের টিনশেডের ঘরের বারান্দায় গুনগুন করছিল শ’খানেক মৌমাছি। রাত শেষে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফারুক মাস্টারের স্ত্রী রিনা আক্তার দেখতে পান ঘরের বারান্দার কাঠের সিলিংয়ে বিশাল এক মৌচাক। দেখেই প্রথমে ভয় পেয়ে ঘরের ভেতর গিয়ে স্বামী ফারুক মাস্টারকে জানান। স্বামী-স্ত্রী মৌচাকের কাছে গেলেন। ভাবলেন কামড় দিয়ে শরীরে হুল বসিয়ে দেয় কিনা। কিন্তু মৌমাছিরা কামড়ায়নি। স্বভাবে শান্ত মৌমাছিরা গুনগুন করেই যাচ্ছিল। একমাসের মধ্যে ওই ঘরের বারান্দায় আরো ৮টি মৌচাকে বাসা বাঁধে মৌমাছিরা। এভাবে টানা ২৫ বছর ৯টি মৌচাক ঘিরে ফারুক মাস্টারের ঘরে মৌমাছিদের নিরাপদ বসত গড়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ব্রাহ্মণপাড়ার কোন গ্রামে অন্য আর কারো বাড়িতে একসঙ্গে এত মৌচাক নেই। এ উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। তাই মৌমাছির আনাগোনা বেশি। মৌমাছিবান্ধব বাড়ির কর্তা কান্দুঘর বি.বি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মৌমাছি আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি। আমার ঘরের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে এতোগুলো মৌমাছির বাসা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নেয়ামত। সর্দি-কাশি ছাড়াও শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রাণালী পরিষ্কার করে শরীর ঝরঝরে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মধুর জুড়ি নেই। আয়ুর্বেদ ওষুধ সেবনে মধু অপরিহার্য। বর্তমানে আমার ঘরের বারান্দায় ৯টি মৌচাক রয়েছে। এসব চাক থেকে সংগৃহীত মধু বিক্রি না করে নিজেদের জন্য রেখে বাকি মধু আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের খেতে দেই। আমার ঘরে মৌমাছিরা বাসা বাঁধায় এটা গোটা পরিবারের জন্য আশীর্বাদ মনে করছি।’ ফারুক মাস্টারের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, ‘মৌমাছিরা প্রায় ২৫ বছর ধরে ঘরের বারান্দায় বাসা বেঁধে বসবাস করছে। আমরা মৌমাছিদের কখনো বিরক্ত করি না। আবার মৌমাছিগুলো আমাদের কাউকে আক্রমণও করে না।’ ফারুক মাস্টারের চাচাতো ভাই কলেজছাত্র মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘প্রাকৃতিক এই মৌমাছি রক্ষায় সরিষা ও সূর্ষমুখি চাষের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত এবং মধু সংগ্রহে আগুনের ধোঁয়ার পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে একসময় গ্রামগঞ্জ থেকে মৌমাছিরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন