চট্টগ্রাম ব্যুরো : কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের জা’মিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশবিশেষ।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানে এ স্বীকৃতি অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। দেশে এ স্বীকৃতি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে স্বীকৃতি দেয়া নয়, বরং দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক শক্তিকে স্বীকৃতি প্রদান। দেশে ৪৮ হাজার কওমি মাদরাসায় ৮৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি কারো করুণা নয় বরং এটি বিশাল সংখ্যাধিক্যের অধিকারী ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার।
মুফতি ইজহার বলেন, সা¤প্রতিক কওমি সনদের স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থের বলি হওয়ার যেমন সুযোগ নেই তেমনিভাবে সরকারবিরোধী চেতনাকে পুঁজি করে কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে যুগান্তকারী এ পদক্ষেপকে অযৌক্তিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এটির স্বীকৃতি চলমান দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশবিশেষ। যা মূলত শুরু হয়েছিল, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। জোট সরকার তাদের ক্ষমতার প্রান্তিককালে এসে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৫ বছরেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয় এবং ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে এসে তারা কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদানে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এক শ্রেণির ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলার তথাকথিত সুশীল ব্যক্তি, সংস্থা ও মিডিয়ার একাংশ কওমি সনদের ‘স্বীকৃতির বিরুদ্ধে অযাচিত আস্ফালন’ করে চলেছে উল্লেখ করে মুফতি ইজহার বলেন, আমরা তাদের এহেন চেঁচামেচির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কওমি স্বীকৃতির বিষয়কে যারা জাতির জন্য অশনিসংকেত বলে প্রচারণা চালাচ্ছে আমরা মনে করি তাদের উগ্র ও জনবিচ্ছিন্ন ধর্মহীন সেক্যুলার চেতনাই বরং জাতির জন্য অশনিসংকেত।
কওমি মাদ্রাসাগুলো আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এবং সরকারের কোনরূপ তত্ত্বাবধান ব্যতীত মানবসম্পদের ক্ষেত্রে যে বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করছে তা এক অকল্পনীয় মহাবাস্তবতা। যে বাস্তবতাকে বারবার দুঃখজনকভাবে সেক্যুলার তথাকথিত সুশীলমহল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর উল্টো বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে কওমি মাদরাসার নিরীহ চারিত্রিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যাতে নতুন প্রজন্মকে তার ধর্মীয় অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আস্থাহীন করে তোলা যায়।
আমরা মনে করি, স্বীকৃতির মাধ্যমে ওলামায়ে কেরাম মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে শিক্ষার হার যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনিভাবে উন্নয়নের সম্ভাবনার দিগন্তগুলোও আরো সম্প্রসারিত হবে। ওলামা ও আধুনিক সমাজের মাঝে সহঅবস্থান দৃঢ় হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় ও সামাজিক পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে। সংঘাত ও মনস্তাত্তি¡ক বিভেদের আধার ধীরে ধীরে তিরোহিত হবে। সমাজতাত্তিক এহেন বাস্তব ইঙ্গিতগুলোকে না বুঝার ভান করে উগ্র ধর্মবিদ্বেষী গোষ্ঠী দূরত্ব ও বঞ্চনার উপাদানগুলো বজায় রেখে জাতিকে বিভক্ত করে রাখতে চায়। এরাই মূলত বিশৃংখলার উস্কানিদাতা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি হারুণ ইজহার চৌধুরী, জা’মিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান, মুফতি এনামুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন