আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) আসন্ন নির্বাচন আগামী বছরের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে রয়েছে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী। রাজপথের বিরোধী দল অগোছালো বিএনপি। প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আগেভাগেই প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। ফলে এক বছর আগেই নগরবাসীর আলোচনায় এসেছে কেসিসি নির্বাচন। সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি (আনারস) এক লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন এক লাখ ২০ হাজার ৫৮ ভোট। জাতীয় পার্টি সমর্থিত শফিকুল ইসলাম মধু দোয়াত-কলম প্রতীকে জামানত হারিয়েছিলেন। ১৬ লক্ষাধিক মানুষের বসতি খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। আসন্ন নির্বাচনে ভোটার বাড়বে। গত নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন, সংরক্ষিত ১০টি মহিলা আসনে ৪৫ জন ও ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন।
কেসিসি নির্বাচনের পরের বছর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন রামপাল-মংলা কেন্দ্রিক হওয়ায় কেসিসি’র মেয়র প্রার্থী হিসেবে আসতে পারে নতুন মুখ।
অপরদিকে, অপ্রতিরোধ্য দুর্গ খ্যাত বিএনপি এখনো অগোছালো। ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর বিএনপিসহ প্রায় সব অঙ্গসংগঠনে রয়েছে বিরোধ। এ অবস্থার অবসান না হলে কেসিসি নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব হারাতে পারে বলে মন্তব্য নেতাকর্মীদের। রাজনৈতিক দু’টি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালতে রিট করে এক বছর ১৯ দিন পর গত বছরের ২১ নভেম্বর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান তিনি। কিন্তু ক্ষমতা ফিরে পেলেও রাজনৈতিক ও আর্থিক চাপে বিভিন্ন প্রকল্প দাখিল করলেও মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি একটিও। ফলে রাজনৈতিক ও আর্থিক চাপে ইশতিহারে প্রতিশ্রæত ২১ দফা বাস্তবায়নে সফল হননি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠন ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ে বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। খুলনা মহানগর বিএনপি’র সকল প্রস্তুতি শুরু করেছি। বিএনপি’র ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি আছে; তবে অঙ্গ সংগঠনের কমিটি নেই। সেগুলোর কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। গত নির্বাচনে ৪১ কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ২৪টি আসন। বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হবে।
অন্যদিকে, আসন্ন কেসিসি নির্বাচনে সদ্য যোগদানকারী মুশফিকুর রহমানকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওইদিন গত ১৪ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউসে কেক কেটে নির্বাচনী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এখন স্থানীয় পর্যায়ে চলছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণাও। কেসিসি নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে চালাচ্ছেন আগাম প্রচার-প্রচারণা।
এর মধ্যে, দলীয় কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ তরিকুল ইসলাম ও যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক গাউসুল আজমের নেতৃত্বে তিন শতাধিক নেতাকর্মী। নগর জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত কেসিসিতে আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থী এসএম এ রব হত্যা মামলার আসামিকে (মেয়র প্রার্থী ঘোষণা) সমর্থনের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করেন তারা। এর নেতিবাচক প্রভাব কেসিসি নির্বাচনে পড়বে মন্তব্য নেতাকর্মীদের।
এদিকে, কেসিসি’র আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক কাসেমী। গত ৬ এপ্রিল নগরীর বাবরী চত্বরের সমাবেশে তারসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুলাহ জানান, মে মাসের শেষভাগে রংপুর সিটি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা আছে। বাকি রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটির নির্বাচন আগামী বছরের শুরুতে করা লাগতে পারে। আশা করছি সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে পাঁচ সিটি নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। কুমিল্লা সিটির চেয়ে আমরা ছয় সিটির নির্বাচন আরো সুন্দর করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন