রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সড়কসহ পুরনো দরবার শরীফ ও বাড়িঘর ধসে পড়ছে খালে

৫ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : মিরসরাই পৌর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ৭টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের রাস্তাটি ধসে পতিত হয়েছে আমির আলী খালে। শুধু এই লতিফীয়া সড়কই নয় এই অঞ্চলের কয়েক শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মৃতিমন্ডিত খানকায়ে লতিফীয়া দরবার শরীফের একাংশ ধসে পড়ছে খালে। ইতোমধ্যে একটি গেইট ও সাইডওয়াল ধসে গেছে। অবশিষ্ট অংশও ধসে পড়ার অপেক্ষায়। কিন্তু এই জনভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতির দায়িত্ব কে নেবে এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। বিধ্বস্ত সড়ক ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই সদরের লতিফীয়া গেট হয়ে মাওলানা আব্দুল লতিফ সড়কটি দিয়ে কোয়ার্টার কিলোমিটার গেলে লতিফীয়া বাড়ির দক্ষিণ পার্শ¦স্থ ব্রিজ হয়ে পশ্চিম দিকে অন্তত, ৫ শত ফুট এলাকাজুড়ে সিসি ঢালাই করা পুরো রাস্তা ধসে পার্শ¦স্থ আমির আলী খালে পতিত হয়েছে। এর মধ্যে সামান্য অংশজুড়ে চলছে আরসিসি ওয়াল নির্মাণ কাজ। পুরো রাস্তা খালে পতিত হয়েও ঘটনা শেষ নয়। এর পার্শ্বের প্রাচীন কয়েক শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতিমÐিত লতিফীয়া দরবারের লতিফীয়া মাদরাসার মরহুম অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম লতিফীর ঘর, গেইট এবং সাইডওয়ালের বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যে পতিত হয়েছে খালে। জনগণের এসব ক্ষয়ক্ষতি ও সর্বসাধারণের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে রাস্তাটির পার্শ¦স্থ খালের পাড় দিয়ে চলাচলকারী পথচারী তারাকাটিয়ার আবুল হোসেন (৪৮) বলেন, ‘বাবুরে আমরা কি কমু, আমনেরাই তো দেখতেছেন, আমরা এই রাস্তা দিয়ে না চললে আধাকিলোমিটারের পথ অন্তত, ৭ কিলোমিটার দূর পথ দিয়ে সদর বাজারে যেতে হবে। এখন এইভাবে কতদিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে বুঝতে পারছি না। জনৈক আজিজুল হক বলেন, এভাবে পুরো রাস্তা ড্রেজার দিয়ে কেটে ফেলে দেয়া এটাকি উন্নয়ন নাকি ভোগান্তির জন্য বুঝতে পারছি না, আবার বৃষ্টি হলেই তারাকাটিয়া, মিঠানালা, সৈয়দপুর, ঘীনাল, কিছমত জাফরাবাদ মানুষের দুর্ভোগ কি করে লাঘব হবে তা ভেবেও এখন থেকেই আতঙ্কে আছি আমরা। বিধ্বস্ত এলাকায় হুমকির মুখে পার্শ¦বর্তী মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা এভাবে ইচ্ছেকরে আমাদের ঘরবাড়িসহ খালে পতিত করে রাস্তা ও খালকাটার উন্নয়নের কথা আর শুনি নাই। এগুলো কেন ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ এসে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে না আমরা বুঝতে পারছি না। ক্ষতিগ্রস্ত লতিফী পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এলাকাবাসী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত লতিফীয়া খানকায়ে গত ১০২ বছর ধরে অদ্যাবধি প্রতি বছর কয়েকটি ওরশ শরীফে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত: ১০ হাজার ভক্তকুল এখানে নিজেদের ধর্মীয় আদর্শের অনুসারী হিসেবে এখানে আসেন। এই জনপদের ঐতিহ্যমÐিত উক্ত ইসলামী আবেগপূর্ণ সমাগম-এর কেন্দ্র উক্ত দরবারের বিষয়ে কারো স্বেচ্ছাচারী খামখেয়ালিপূর্ণ এমন কর্মকাÐের জের হিসেবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে উদাসীন মনোভাব মুসলমান ধর্মপ্রাণের মধ্যে ও যথেষ্ট বৈরী সম্পর্কের সূত্রপাত বলে মনে করেন। তিনি এই বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এই বিষয়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী স্থানীয় সরকারের এমজিএসপি’র স্থানীয় তদারকি কর্মকর্তা প্রকৌশলী সমর মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন পর পর রুটিন মাফিক উক্ত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে যা যা নির্দেশনা দিয়েছি তার কোনোটিই মানেননি ঠিকাদার। তিনি বলেন, সিসি ঢালাইয়ের স্থানটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা ২০ ফুট করে শ্রমিক দ্বারা কাটা এবং কাটার সময় প্রোটেকশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কোনো প্রকার প্রোটেকশন ব্যবস্থা না করায় এমন অবস্থা। আবার বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়সহ সকল নির্দেশনাই আমরা প্রকল্পাধীন গাইড বহিতে নোট ও নির্দেশনা দিয়েছি। এর কোনোটিই না মানার দায়দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ নেবে না। এর জন্য তিনি ঠিকাদারের লোকবলসহ নানান সীমাবদ্ধতাকেই দায়ী করেন। তবে আবার এই বিষয়ে উক্ত এমজিএসপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মোজাক্কা জাহের বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগণের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় তার নির্দেশনাও দেয়া আছে, তবু ও বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত ছিলাম না, এখন থেকে যথাশিগগিরই সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ-এর উদ্যোগ নেয়া হবে তিনি জানান। মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা, মিরসরাই পৌর এলাকার জনগণের কাছে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করতেই এমন জনভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রবণতা। আবার উক্ত প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এমএ রশিদের পক্ষে তত্ত¡¡াবধানকারী সাবেক পৌর মেয়র ঠিকাদার এম শাহজাহান বলেন, আমাকে অনেক কম মূল্যে এই কাজ নিতে হয়েছে। তাই প্রকল্প ব্যয় সংকুলান করতে ও কাজের নির্ধারিত ছক পূরণ করতে ড্রেজার ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে এভাবে ক্ষয়ক্ষতি ও ভোগান্তির দায়দায়িত্বের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন