রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বেকার হচ্ছে পাতির তৈরি মাদুরের শত শত কারিগর

প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের দখলে বাজার

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে : বগুড়ার আদমদীঘিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেশিনের তৈরি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুর এখন স্থানীয়সহ দেশের হাটবাজারগুলো দখল করে নিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় চাষ করা পাতির তৈরি মাদুর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে মাদুর তৈরি কাজে জড়িত শত শত নারী, পুরুষ শ্রমিক। রঙিন প্লাস্টিকের পাইপের নকশা আঁকা বাহারি রঙের ভারতীয় প্রযুক্তির পাতির তৈরি মাদুর দেখতে সুন্দর ও টিকসই হওয়ায় সারাদেশে এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এর চাহিদা ও উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার হেলালিয়ার ছাতনী ও এর আশপাশে ভারত থেকে প্লাস্টিকের পাইপ তৈরি এবং মাদুর তৈরি ৮ থেকে ১০টি মেশিন আমদানি করে এসব তৈরির জন্য কারখানা বসানো হয়েছে। এর চাহিদা মেটাতে রাত দিন কারখানাগুলো চলছে। এতে স্থানীয় চাষ করা পাতির চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে বাজারে এর ভালো দাম না পাওয়ায় স্থানীয় চাষিরা পাতি চাষ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক সময় স্থানীয় ইরিবোরো ধানের চেয়ে পাতি চাষ ছিল লাভজনক। এখানে দুই প্রকার পাতির চাষ হতো জলপাতি ও স্থল পাতি। জলপাতি মোটা এটাকে চিরে মাদুর তৈরি করতে হয়, আর স্থলপাতি চিকন এটা চিরা লাগে না। হাওর, ডোবা, নদী-নালাসহ উঁচ নিচু জমিসহ যে কোন স্থানে পাতি চাষ করা হতো। পাতি চাষ করতে জমিতে অল্প পরিমাণ সার দিতে হয়, তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। পাতি চাষে ইরিবোরোর চেয়ে খরচ লাগে কম। পাতি লাগানোর পর তিন বার কাটা লাগে, তিন বারে হেক্টর প্রতি ফলন হয় সাড়ে ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে ইরিবোরো চাষের চেয়ে পাতি চাষ করে লাভবান হতেন অনেকে। সংসারের কাজের ফাঁকে শত শত নারী, পুরুষসহ এলাকার বেকার যুবকরা স্থানীয় চাষ করা পাতির মাদুর তৈরির কাজ করতো। আবার অনেকে পাতি ও মাদুরের খুচরা এবং পাইকারী ব্যবসা করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এনেছে। প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার সান্তাহার শহর পার্শ্ববর্তী হেলহালিয়ায় মাদুরের বিশাল হাট বসে। এখন হাটবাজারে স্থানীয় পাতির তৈরি মাদুর বিক্রি কমে গেছে। এখন প্লাস্টিকের পাইপের তৈরি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও বেড়ে গেছে। এই হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসে এবং লাখ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। এখানকার তৈরি মাদুর সুন্দর, টেকসই দামেও কম হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ট্রেন পথ ও সড়ক পথে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মাদুর যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন