শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গরু নেই হাটে, ইজারা মূল্য কমছে ৪ কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : দেশের উত্তরাঞ্চলের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। দুর্ভিক্ষ কিংবা মঙ্গাকে জয় করে এ জনপদের মানুষ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে। জেলার সাথে ভারতের প্রায় ২৭০ কিঃমিঃ সীমান্ত। ভারতের সীমান্ত গলে অবৈধভাবে আসা হাজার হাজার গরু, মহিষ, ছাগল করিডোরের মাধ্যমে বৈধতা পায়। এসব ভারতীয় গবাদিপশুকে ঘিরে সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি পশুর হাটের ইজারা মূল্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কিন্তু প্রশাসনিক নানা জটিলতায় ভারতীয় গবাদিপশু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর হাট কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গত ১৪২৩ বঙ্গাব্দের হাট ইজারা মূল্য ছিল ৪ কোটির ৫৩ লাখ টাকা। শুধুমাত্র ভারতীয় গরু না আসায় ইজাদারের লোকসান হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। ফলে চলতি ১৪২৪ বঙ্গাব্দে ৭ দফা ইজারা দরপত্র আহŸান করলেও সর্বোচ্চ দর উঠেছে মাত্র ৫৩ লাখ টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ৪ কোটি টাকা কম। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাট প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভারতীয় গরু আমদানি শূন্যের কোটায়। হাটে পেরিফেরির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ না করা, হাটের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা এবং নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নতুন নতুন বিট/খাটাল স্থাপনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাট ইজারাদারকে লোকসান গুনতে হয় কয়েক কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেও সুফল মেলেনি। যাত্রাপুর হাটের ইজারাদার ওমর ফারুক জানান, ভারতীয় গরু নির্ভর এ হাটের ১৪২৩ বাংলা সনের ইজারা মূল্য ছিল (১৫ ভাগ ভ্যাট এবং ৫ ভাগ আয়করসহ) ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩১ টাকা। কিন্তু শুরু থেকে হাটের পেরিফেরি সীমানা নির্ধারণ করে না দেয়ায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাটের জন্য ৩ একর জমি ভাড়া নিতে হয়। এছাড়া সীমানা নির্ধারণ করে না দেয়ার জটিলতার সুযোগ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪শ দোকানের টোল তোলা সম্ভব হয়নি। একই সাথে স্থানীয় দোকানপাট থেকে খাজনা আদায় করা যায়নি। এতে গচ্ছাগেছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। একই সাথে গত বন্যায় হাট ডুবে যাওয়ায় এবং ভাঙনে হাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ভারতীয় গরু নির্ভর এ হাট হওয়ায় যাত্রাপুর হাটে সরকার বিট চালু করে। অথচ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নতুন করে এ হাটের চারপাশে ভারতীয় আন্তর্জাতিক সীমানা সংলগ্ন দই খাওয়ার চর, নারায়াণপুরে বিট/খাটাল স্থাপন করা হয়। ফলে এসব বিটের গবাদিপশু আর যাত্রাপুর হাটে আসতে দেয়া হয় না। যাত্রাপুর হাটে আসার পথে কালিয়ার চর ও চিতুলিয়া নামক স্থানে শাখা নদী পারাপারে কৃষকদের কৃষি পণ্য ও গবাদিপশু প্রতি টোল আদায়ে বাধ্য করে এবং যাত্রাপুর হাটে যেতে একটি চক্র বাধার সৃষ্টি করে। ফলে তারা আর যাত্রাপুর হাটে আসতে পারে না। যাত্রাপুর হাটের অন্যতম অংশীদার আব্দুল জব্বার জানান, স্থানীয় প্রশাসন হাট ইজারার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আয় করলেও ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম স্বার্থ রক্ষা করেনি। বরং সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। নতুন বিট স্থাপনে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা যাত্রাপুর হাট ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধিরও আবেদন করেছি। তা না হলে এ হাটের সাথে সম্পৃক্ত শতাধিক ব্যবসায়ীর পরিবার মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। ব্যাংক ঋণ ও ধারদেনার জর্জরিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন বছরে ইজারাদার নিয়োগ সংক্রান্ত দরপত্রে প্রথম ৬ দফায় কেউ অংশগ্রহণ করেননি। যাত্রাপুর হাট ইজারার প্রথম দরপত্র ক্রয়ের শেষ দিন ধার্য ছিল ১৫ ফেব্রæয়ারি, দ্বিতীয় দফা ২৭ ফেব্রæয়ারি, তৃতীয় দফা ৮ মার্চ, ৪র্থ দফা ১৫ মার্চ, ৫ম দফা ২২ মার্চ, ৬ষ্ঠ দফা ৫ এপ্রিল এবং ৭ম দফা ১২ এপ্রিল। ৭ম ডাকে দর উঠেছে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা। ফলে কাক্সিক্ষত দরে ইজারাদার নির্ধারণ করতে না পাড়ায় এখন অফিস থেকে ইতোমধ্যে এ হাটকে খাস কালেকশনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, ইজারাদারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও আইনত মেয়াদ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজারের পেরিফেরি (সীমানা নির্ধারণ) ও দোকানদারদের খাজনা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন