শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জীর্ণ ভবনে চলছে ইউপির কার্যক্রম যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন দ্বিতল ভবনটির চারিদিকে ছোট-বড় ফাটল ধরেছে। মাঝে মধ্যেই ছাদ থেকে খসে পড়ে প্লাস্টার। বর্ষায় চুঁইয়ে পড়া পানি মেঝেতে জমে বিনষ্ট করে আলমারিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এমনই একটি পরিবেশে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। না, এক-দুই মাস বা বছর নয়। যুগ যুগ ধরে এখানে চলে আসছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরসহ আরো কয়েকটি দপ্তরের কাজ। কিন্তু কিছুই যেন করার নেই কর্তৃপক্ষের। সরকারি খাস জায়গাটি ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ না হওয়ায় এখানে গড়ে তোলা যাচ্ছে না নতুন ভবনও। ফলে এ দুরাবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে না। স্থানীয় সূত্রে কুমিরা ইউপি ভবনের এ দুরাবস্থার কথা জেনে সরেজমিনে বড়কুমিরা বাজারে অবস্থিত ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির চারপাশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে শ্যাওলা জমে কর্দমাক্ত রূপ নিয়েছে এটি। একই অবস্থা ভেতরের ছাদের। সেখান থেকে খসে পড়ছে প্লাস্টার। পরিদর্শনকালে ইউপি ভবনে সেবা নিতে আসা কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কোন কাজে ইউনিয়ন পরিষদে আসা হলে ভেতরে প্রবেশ করতে ভয় পান তারা। কারণ, যেকোন মুহূর্তে এই ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে বলে তাদের আশংকা। উপজেলার আর কোন ইউনিয়ন পরিষদের এই দূরাবস্থা নেই বলে দাবি করেন তারা। কুমিরা ঘাটঘর এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাধীনতারও অনেক আগে এই ইউপি ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল। এতদিনে ভবনের ইট-বালি খসে পড়তে শুরু করেছে। ফাটল ধরেছে চারপাশেই। এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জনসম্পৃক্ত দপ্তর। তবুও এটি সংস্কার না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এখানে কাজ চালাতে গিয়ে খুবই ভয় লাগে বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শোভন কান্তি ভৌমিক বলেন, দলিল পত্র থেকে জানা গেছে, বড়কুমিরা মৌজার বি.এস ১০৩৩ দাগের ৬২ শতক ভূমি একজন দানশীল ব্যক্তি জনস্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদকে দান করেছিলেন। কিন্তু জায়গাটি খাস হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে এখানে দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়েছিল। সেই থেকে এই ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলে আসছে। এ দীর্ঘ সময়ে এটি ফেটে, প্লাস্টার উঠে দারুন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখন এখানে বসে কাজ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও উপায় নেই করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জায়গাটি খাস হয়ে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হয়নি। ফলে এখানে সরকারিভাবে কোন ভবনও নির্মাণ করা যায়নি। কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, বহু বছর ধরে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে। বিগত দিনে কোন চেয়ারম্যান এখানে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জনগণের এই ভবনটি নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন। চেয়ারম্যান মোর্শেদ বলেন, আমি যেকোন উপায়ে এই ভবনটি নির্মাণ করে দিয়ে যেতে চাই। এরজন্য প্রথমে খাস হয়ে যাওয়া জায়গাটি বরাদ্দ নেওয়া দরকার। ইতিমধ্যে আমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি ইউনিয়ন পরিষদের অনুক‚লে বরাদ্দ দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। ইতিমধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রহুল আমিন জায়গাটি পরিষদকে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে সুপারিশও করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যদি জায়গা বরাদ্দ পাই তাহলে এখানে অত্যাধুনিক একটি ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করব। এই পরিষদের কৃষি, প্রাণী সম্পদ দপ্তরসহ ২২টি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরের কাজ চলে এখানে। বর্তমানে তাদের কেউ বসার জায়গা পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না। এর ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারউপর যারা আসেন তারা থাকেন আতংকে। চেয়ারম্যান মোর্শেদ আরো বলেন, এ ভবনেরই এক কক্ষে কয়েক বছর আগেও কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো। কিন্তু এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে ফাঁড়ি স্থানান্তর করে পালিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু আমাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই। তাই জন সাধারণের কথা চিন্তা করে এ জায়গাটি কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন বলেন, খাস জায়গাটি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য বরাদ্দের আবেদন পেয়েছি। আমরা ৩০ শতক জায়গা পরিষদে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন