এসএম রাজা, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী সরদারপাড়া গ্রামের মৃত হাজি নকিম উদ্দিন সরদারের তৃতীয় পুত্র এসএম রবিউল ইসলাম বেকারত্বের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে আজ তিনি একজন সফল পোল্ট্রি খামারি। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে রবিউল সপ্তম। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও বিএ পরীক্ষা দেয়া হয়নি। নিজ বসতবাড়ির পাশেই পোল্ট্রি খামার করে তার সংসারের অর্থের যোগান দেন রবিউল। রবিউল নিজে পোল্ট্রি খামার করে এলাকার অন্যান্য বেকার যুবকদেরও পোল্ট্রি খামারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রবিউল জানান, বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন রবিউল, অর্থের সঙ্কট হওয়াতে যুব উন্নয়ন থেকে পোল্ট্রি, গবাদি পশু ও মাছের ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে নিজ বাড়িতেই ২০০০ সালে লেয়ার জাতের ২৫০টি মুরগি পালন শুরু করেন। সেই থেকে আর থেমে থাকেননি রবিউল। মুরগি পালন করে তিনি গোটা বছরের পারিবারিক ডিমের ও মুরগির চাহিদা মেটানোর পর ডিম ও মুরগি বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয়ও করতে থাকেন। এরপর থেকে তিনি তার খামার প্রসারিত করতে থাকেন। বর্তমানে তার খামারে ২১ হাজার মুরগি রয়েছে এর মধ্যে ৮ হাজার সোনালি ও দুই হাজার বয়লার। প্রতিদিন তিনি ১১ হাজার ডিম বিক্রি করে থাকেন। রবিউল বলেন, বর্তমানে খামারে ১৪ জন নিয়মিত শ্রমিক রয়েছে। ডিম বিক্রির টাকা থেকে যে মুনাফা পেয়েছি তা দিয়ে চার বিঘা জমি ক্রয় করেছি। হাজি নকিম উদ্দিন সরদার পোল্ট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী রবিউল আরও বলেন, ইতোমধ্যে এলাকার বেকার যুবকদের নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ চালু করেছি। তিনি বলেন, মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব একটি বড় মাপের বায়োগ্যাস প্লান্ট করেছি এতে নিজের পরিবারের রান্নার কাজ শেষ করে অন্য নয়টি পরিবারে সাপ্লাই দিতে পেরেছি। এতে কিছুটা হলেও রান্নার কাজে দেশের গাছ, কাঠ বেঁচে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা এবং পোল্টি খামার দেখে এলাকার অনেক বেকার ছেলে পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামার করে তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। রবিউল বলেন, সহজ শর্তে কোনো ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে আগামীতে একটি হ্যাচারি ও বড় মাপের গবাদি পশুর খামার স্থাপন এবং খামারটি আরও বেশি প্রসারিত করতে চাই। একই সাথে এলাকার বেকার ছেলেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এতে বেকারত্ব ঘুচবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করার জন্য আহ্বান জানান। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, রবিউল ইসলাম পোল্ট্রি খামার করে সে এখন ঈশ্বরদীর একজন মডেল খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী সরদার পাড়া গ্রামের মৃত হাজি নকিম উদ্দিন সরদারের তৃতীয় পুত্র রবিউল ইসলাম বেকারত্বের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে আজ তিনি উপজেলার মধ্যে একজন বড় ও সফল পোল্ট্রি খামারি। রবিউল পোল্ট্রি খামার করে কিছুটা হলেও দেশের মুরগি ও ডিমের চাহিদা পূরণ করছেন। সেই সঙ্গে পুষ্টির যোগানও দিচ্ছেন। রবিউল সঠিক পদ্ধতিতে পোল্ট্রি খামার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রবিউলের দেখা দেখি ওই এলাকার যুবকদের মধ্যে পোল্ট্রি খামারের প্রতিযোগিতা চলে এসেছে। রবিউল এভাবে তার পোল্ট্রি খামারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারলে আগামীতে আরও ভালো করবে বলে আশা পোষণ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন