শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে : চারিদিকে ফসলের বির্স্তীণ মাঠ, সবুজ ক্ষেতে কৃষকের ঘাম ঝরানো হলুদের ছঁটায় যখন ধানের ছোট ছোট দানা বাসা বাধতে শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বøাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে বোরো ক্ষেতের ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষককুল। শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবারও ব্যাপক হারে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বৈশাখের শুরুতে অধিকাংশ মাঠের ধান বের হয়ে কিছু ধান পাকতেও শুরু করেছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা রোপনে কৃষকের চোখে-মুখে বাম্পার ফলন আর পাকা ধান গোলায় তোলার বুকভরা স্বপ্ন,সপ্তাহ খানেক আগে বøাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমনে মাঠকে মাঠ ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকের সেই মুখের হাসি এখন বোবা কান্নায় পরিনত হয়েছে। কৃষি বিভাগ এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকের মাঝে লিফলেট বিতরণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আক্রান্ত ক্ষেতে তাদের দেয়া পরামর্শে প্রতিষেধক হিসেবে ট্রাইসাইক্লোজল গ্রæপের ছত্রাকনাশক মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করছেন কৃষকরা । কিন্তু আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও কৃষকের কোন লাভ হচ্ছেনা । স্প্রে করার পরেও এক থেকে দু,দিনের মধ্যেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ধান ক্ষেতে। মুহূর্তেই ধান সাদা হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,অধিকাংশ জমিতেই সদ্য বের হওয়া বোরো ধানের শীষগুলো শুকিয়ে দুই-একদিন যেতে না যেতে সাদা হয়ে যাচেছ,কোথাও আবার পাতাসহ শুকিয়ে যাওয়া ধান গাছ দেখা যাচ্ছে,কৃষক বলছেন মাত্র কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের পর হঠাৎ করেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। বেতদিঘী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান মিন্টুর দেড় বিঘা জমির বোরো ধানের সম্পূর্ণ শীষ সাদা হয়ে গেছে। একই অবস্থা আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন,শামীম হোসেন ও এনামুল হকের। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের হিসেব অনুযায়ী যাদের নিজস্ব জমি আছে তার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৫থেকে ৬হাজার টাকা,কিন্তু অন্যের জমি বর্গা কিংবা ৮হাজার টাকায় বন্দোবস্ত নিয়ে যে কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন তাদের জমি চাষ,বীজ সার,সেচ,কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরীসহ বিঘাপ্রতি প্রায় ১৪হাজার টাকা খরচ হলেও ধান ঘরে তোলার পর কাঁটা-মাড়াই এর টাকা উঠা নিয়ে শংকায় আছেন কৃষক। আলাদীপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান,কয়েকদিন আগে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ক্ষেতে বøাষ্ট ছত্রাকের আক্রমন দেখা দেয়ার খবর শুনার পর দুদিন যেতে না যেতেই তার নিজের ক্ষেতে বøাষ্ট রোগের আক্রমন দেখা দেয়। এ রোগে ফলন্ত ধানের শীষগুলো দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে একই অবস্থা তার পাশের বোরো ক্ষেতের। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের কোনো পরামর্শই কাজে লাগছেনা বলে দাবী করেন তিনি। ওই কৃষক আরও জানালেন,সময়মত বøক-সুপারভাইজাররা মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিলে হয়তোবা এত বেশী ক্ষতি হতোনা। পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের কৃষক সাজু ফকির বলেন,ধান লাগানোর কিছুদিন পর পাতায় এক ধরণের চোখ দেখা দেয়,চোখের পাশে কয়েকটি সাদা দাগ,কয়েকদিন যেতে না যেতেই ধানের ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে শীষের নীচের গিট শুকিয়ে যেতে দেখলে এটা নেক বøাষ্ট রোগের লক্ষণ বলে জানা যায় কিন্তু বøক সুপারভাইজাররা কখনও এ রোগ সম্পর্কে তাদের কোন প্রকার সচেতনা বা পরামর্শ দিতে আসেননি বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামিম আশরাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ক্ষেত বøাষ্ট রোগে আক্রান্ত হবার কথা স্বীকার করে জনান,মেঘাছন্ন আকাশ,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি,দিনে গরম এবং রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে এ রোগের আক্রমন বৃদ্ধি পায়। তবে তিনি মাঠ পরিদর্শন করে এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ফিলিয়া,বøাষ্টিন,নাটিবো,ট্রুপার ইমিনেন্ট,কারিশমা এর যে কোন একটি ছত্রাক নাশকের সাথে কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের এমকোজিম,নোইন,গেন্ডাজিম,কিউবি,এগ্রিজিম,আরবা বা টার্বো স্প্রে করার পরামর্শ দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন