দিদারুল আলম রাজু, খাগড়াছড়ি থেকে : খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি গুচ্ছগ্রামের প্রাক্তন প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে বাতিলকৃত কার্ডের রেশন আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া এলাকার দরিদ্র মানুষের কার্ড বাতিল করে নিজের ছেলে ও ভাইয়ের নামে পরিবর্তন করার চেষ্টা এবং কার্ড করে দেয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ২০১৫ সালে উল্টাছড়ি গুচ্ছগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া ওই গুচ্ছগ্রামের ৫টি রেশন কার্ড বাতিল করে সেইসব কার্ড নতুন করে পাঁচজনের নামে পরিবর্তনের আবেদন করেন। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা গুচ্ছগ্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রস্তাবিত ৫টি কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাতিলকৃত রেশন কার্ডের অনুক‚লে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের উপ-বরাদ্দকৃত রেশন ফেরত দেয়ার জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ওই নির্দেশনার তোয়াক্কা করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প চেয়ারম্যান। জুলাই হতে সেপ্টেম্বর মাসের রেশন ফেরত না দিয়ে উপরন্তু বাতিলকৃত কার্ডের অনুক‚লে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত আরও মোট নয় মাসের রেশন উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া। এছাড়া হতদরিদ্র মানুষের কার্ড বাতিল করে ৫১২৫নং কার্ডটি তার ছোট ছেলে তোফাজ্জল হোসেনের নামে এবং ৫২৪৮নং কার্ডটি তার খালাতো ভাই নুর আলমের নামে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব দেন প্রকল্প চেয়ারম্যান। আর প্রস্তাবকৃত অন্যদের কাছ থেকেও কার্ড পরিবর্তনের নামে মোটা অংকের উৎকোচ নেন তিনি। ৫৪৩১ নং কার্ডের প্রস্তাবনা দেয়া হয় উপজেলা সদরের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা মৃদুল দেব এর নামে। অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা হওয়া সত্তে¡ও তার নামে কার্ড পরিবর্তনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। মৃদুল দেব জানান, ‘কার্ড পরিবর্তন করে দেবে বলে প্রকল্প চেয়ারম্যান হানিফ মিয়ার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের ২০১৪ সালের শেষ দিকে আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার নিয়েছে। অথচ আমার নামে কার্ড পরিবর্তন করা হয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। টাকা চাইলে আবু তাহের আমাকে বলে, পরিবর্তনের জন্য ডিসি অফিসে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উল্টাছড়ি গুচ্ছগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ওই ৫টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে জানায়নি। এছাড়া হানিফ মিয়া আরও বলেন, তিনি কেবল কাগজে-কলমেই প্রকল্প চেয়ারম্যান। গুচ্ছগ্রামের যাবতীয় বিষয়াদি দেখভাল করতেন তার ছেলে আবু তাহের। তবে পানছড়ি উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, ‘কার্ড বাতিল হয়েছে জানিয়ে ওই ৫টি কার্ডের অনুক‚লে উপ-বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য ফেরত দেয়ার জন্য প্রকল্প চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেয়া হলেও তিনি খাদ্যশস্য ফেরত দেয়নি।’ পানছড়ি উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, ‘আমি কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। যেহেতু বিষয়টি আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সময়ের সেহেতু খতিয়ে দেখতে হবে এবং জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন