শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অসময়ে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় শতশত একর জমির পাকা ধান, পাট, কাউনের ফসল নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। এ অবস্থায় ঋণ মওকুফে সরকারি সহায়তা চেয়েছে তারা। জানা যায়, উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মাচাবান্ধা এলাকার কৃষকরা কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই গ্রামের দক্ষিণে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী অপেক্ষাকৃত নীচু জমি রয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কৃষকরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এসব জমিতে ধান, পাট, কাউন ও ভুট্টা আবাদ করে। কিন্তু অসময়ে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বয়ে যাওয়া ভারী বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির কারণে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। জমির সাথে সংযোগ সুইচ গেটটি মেরামত না করায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৮শ’ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে ঋণের বোঝা নিয়ে কৃষক রয়েছে চরম অশান্তিতে। মাচাবান্ধা এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান (৫০) জানান, আমি উদ্দীপন এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে ধানচাষ করি। সম্পূর্ণ ফসল আমার নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমি কিস্তি দিবো কিভাবে, আর ছেলেমেয়েদের বা কি খাওয়াবো। কৃষক জহুরুল ইসলাম (৭০) জানান, ৫টি এনজিও থেকে ৯৪ হাজার টাকা ঋণ আছে তার। এবার ৩ বিঘা জমিতে ধান, পাট ও কাউন আবাদ করেছেন। শিলাবৃষ্টির কারণে জমি থেকে পাটও পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি উদ্দীপন থেকে ১২ হাজার টাকা, বুরো বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজার, একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ৩০ হাজার, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন থেকে ২০ হাজার এবং টিএমএসএস থেকে ১২ হাজার টাকাসহ মোট ৯৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ওই গ্রামের মিনারা বেগম (৪০) জানান, ৪টি এনজিও থেকে তিনি ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। দেড় বিঘা জমিতে ধান ও ৪৫ শতক জমিতে পাট লাগিয়েছেন। তারও এবার কপাল পুড়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন এই পরিবারগুলো। মিনারা বেগম জানান, সরকার আগামো না দেকলে বানে ভাইসা যাওন লাগবো। তোমরা আমাগো দিকটা একটু দেখো। বেসরকারি সংগঠনগুলোর নীতিমালার মধ্যে একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রদানের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ থাকলেও এখানে এসব মানা হয়নি। দরিদ্র মানুষ নিজেদের বাঁচাতে এক এনজিও’র কিস্তি শোধ করতে আরেক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তারা মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখলেও অসময়ের বৃষ্টি তাদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। এই এলাকায় ব্রাক, আশা, ব্যুরো বাংলদেশ, উদ্দীপন, টিএমএসএস, একটি বাড়ি একটি খামার, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনসহ একাধিক এনজিও থেকে গ্রামের মানুষ ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, ওই এলাকায় প্রায় ৬ থেকে ৭ হেক্টর জমিতে ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি সরকারকে অবগত করা হয়েছে। এখন আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন