মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রাথমিক শেষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এখন

মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যায় ১৭ বছরের জেসমিন

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
চাঁদের মতো সুন্দর, দেখলে মনে হবে শিশু। কিন্তু তার বয়স ১৭ ছুঁই ছুই করছে। এই বয়সে মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত করে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই যুবতীর নাম জেসমিন। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছে থাকায় এভাবে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে সবেমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে। উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বালাপাড়া জিকরুল হকের বড় মেয়ে সে। অপর ১ ছেলে ও ১ মেয়ে ভালো থাকলেও সে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফলে প্রতিটি কাজ পরিবারের লোকের সাহায্য ছাড়া করতে পারে না। লেখাপড়ায় অদম্য ইচ্ছের কারণে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পূর্ব বাগিচা মোলাপাড়া আনন্দ স্কুল থেকে ২০১৫ সালে ৫ম শ্রেণি পাস করেন। এখন তার বয়স ১৭ বছর চলছে। দূরবর্তী স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। যাতায়াত করবে কিভাবে সে চিন্তায় জেসমিনের বাবা-মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। হুইল চেয়ার কিনে দেবে সে সামর্থ্যও নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিকরুল হকের। মেয়ের চিকিৎসা ও হুইল চেয়ার কেনার জন্য আস্তে আস্তে জমা করেছিলেন কয়েন। সে কয়েন কেউ নিতে চান না। ফলে তার বাবার চিন্তার ভাঁজটা আরও বেড়েছে। বাবা জিকরুল হক জানান, জেসমিন জন্মের পর একটু অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় দিনাজপুরে হাড়জোড় বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল মান্নান চৌধুরীর শরণাপন্ন হন। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান তার মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে বলেছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু হাতে সেরকম টাকা-পয়সা না থাকায় মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন বাড়িতে। জেসমিনের মা শাহনাজ বেগম জানান, জেসমিন জম্মের পর থেকে আমি তাকে চলাফেরায় সাহায্য করেছি। মা হিসাবে মেয়েকে ফেলে দিতে পারি না। কষ্ট হলেও মেয়েকে কোলে করে স্কুলে দিয়ে আবার ছুটির পর নিয়ে এসেছি। এমনকি উঠাবসা, বাথরুম সবকিছু আমার সাহায্য ছাড়া করতে পারে না। কোন সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে আসলে আমার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। ১৭ বছরের প্রতিবন্ধী জেসমিন জানান, সে লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হতে চায়। এই কাজ সফল করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা চাই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে জানায়, আমি শুনেছি অনেক এনজিও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। তাছাড়া আমি এখনও অর্থাভাব ও চলাফেরার সমস্যার কারণে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারিনি। কেউ তাকে দেখতে আসলে তার কষ্টের কথা জানায় আর কাঁদে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন