মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর থেকে
স্বাধীনতা-উত্তর এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলো তাদের দলীয় প্রার্থী মনোনীত করতে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মনোনীত প্রার্থীরা স্ব-স্ব দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নির্ধারিত নেতাদের চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী বাছাই করে প্রস্তাব আকারে কেন্দ্রে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সে মতে কুমিল্লা উত্তর জেলার ৭টি উপজেলা দাউদকান্দি, চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, হোমনা, তিতাস ও মেঘনায় চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হিমশিম খাচ্ছে। প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে শাসক দলের তৃণমূলে চলছে অসন্তোষ, ক্ষোভ ও বিক্ষোভ মিছিল আর চাপা ক্ষোভ বইছে বিএনপিতে। স্থানীয় দলের তৃণমূলে এক উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে উভয় দলে। এদিকে তৃণমূলের অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবং যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা যেন প্রার্থী হতে পারে এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রার্থী বাছাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া উভয় দলেই পুরোদমে চলছে বলে দলীয় সূত্র দাবি করছে। এখানকার প্রতিটি ইউনিয়নে উভয় দলেই একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাবার প্রত্যাশা নিয়ে দলের উপর মহলে নিরন্তন দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে প্রচার-প্রচারণায় সম্ভাব্য ওই প্রার্থীদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। ওই প্রার্থীরা ভোটের তোয়াক্কা করছেন না। দলীয় টিকেট পেলেই ‘ছক্কা বাজিমাত’ চেয়ারম্যান হতে কৌশলগত আর কোনো বাধা রইল নাÑ এমন লোভনীয় আশা নিয়ে তারা হুমড়ি খেয়ে দৌড়াচ্ছেন মনোনয়নের দিকে। তৃণমূল নেতা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মনোনয় প্রত্যাশিত নেতাদের বিরামহীন চেষ্টা-তদবির, লবিং-গ্রুপিং চলছে। মনোনয়ন নিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। প্রার্থী মনোনয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতাদের প্রস্তাবিত তালিকার নাম বাদ দিয়ে অন্য নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়াকে কেন্দ্র করে দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এখানে ২২ মার্চ ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থী বাচাই করতে যেন কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে এবং যাতে স্বচ্ছতা থাকে তার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবদুল আউয়াল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নেতৃত্বে জেলা নেতারা প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর আলম সরকার ইনকিলাবকে বলেন, চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী করার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে। সভাপতি ও আমি নিজেও প্রতিটি উপজেলায় সফরের মাধ্যমে নজরদারি ও খোঁজখবর রাখছি প্রতিনিয়ত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল এ দলের তৃণমূলে শত শত যোগ্য নেতা রয়েছে সুতরাং প্রার্থী বাছাই করতে সাময়িক কিছুটা অসুবিধা হলেও সাথে সাথে সমাধানও হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিএনপির প্রার্থী বাচাই নিয়ে এখানকার তৃণমূলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ সরকারী দলের সাথে আঁতাতকারী ও দলের চেয়ারপার্সনকে অবরুদ্ধ রেখে ৫ জানুয়ারী আত্মগোপনে চলে যাওয়া নেতাদের প্রার্থী বাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়ায় এ ক্ষোভ চলছে। তবে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস ও মেঘনা উপজেলায় প্রার্থী বাচাইয়ে তেমন একটা সমস্যা নেই। এখানে স্থায়ী কমিটির দুই জাদরেল নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার বিষয়টি সরাসরি তদারকি করছেন। এখানকার বিএনপির ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলার শীর্ষ নেতারাসহ কার্যকরী কমিটির প্রকাশ্যে মতামতের মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বাছাই করছেন। মেঘনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজহারুল হক শাহিনের নেতৃত্বে মেঘনার নেতারা প্রার্থী বাচাই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। আজহারুল শাহিন ইনকিলাবকে বলেছেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে এখানে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রার্থী বাছাই তদারকি করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন