বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সোনাগাজীতে বেড়িবাঁধ প্রভাবশালীদের দখলে সøুইসগেটগুলো বিলীনের পথে

সংস্কার না হওয়ায় ঘুচছে না কৃষকের দুঃখ

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জসিম উদ্দিন আহমদ, সোনাগাজী (ফেনী) থেকে
ফেনী জেলার নদী ও সাগর বেষ্টিত উপজেলার নাম সোনাগাজী। উপজেলার পশ্চিম অংশ দিয়ে ছোট ফেনী যার পূর্বের নাম ডাকাতিয়া নদী, পূর্ব পাশ দিয়ে কালিদাহ ও বড় ফেনী নদী প্রবাহিত। জানা যায়, ১৯৬০ সালে তৎকালীন সরকার এই উপজেলাসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল ঘিরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল। যার অংশ হিসেবে ওই সময় সাগরের জোয়ারের লোনা পানি ও উপকূলীয় অঞ্চলকে নদীভাঙন রক্ষায় সোনাগাজী উপজেলার তিন দিকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করা হয় কাজীরহাট স্লুইসগেটসহ ছোট বড় ১১টি স্লুইসগেট। খনন করা হয় ৪০টি খাল। সরেজমিন জানা যায়, ১৯৬০-৬৫ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভূমি অধিগ্রহণ করে ১২০ ফুট প্রস্থ ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। নির্মাণের কয়েক বছর উক্ত বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদাও হয়ে যায়। যার ফলে বছরের পর বছর বেড়িবাঁধগুলো দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আরো জানা যায়, কাজীরহাট স্লুইসগেট থেকে নবী উল্যাহর দোকান হয়ে মদিনা বাজার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সোনাপুর বাজার হয়ে হকদি পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উপর চলাচলের জন্য মাত্র ১০ ফুট জায়গা রেখে বাকি ১১০ ফুট ভূমি  নির্বিগ্নে দখল করে নেয় স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধের দুপাশে বাড়িঘর, পুকুর, দোকানপাট, ইমারত নির্মাণসহ বহু স্থাপনা আজ বিদ্যমান। চরছান্দিয়া গ্রামের ৮০ ঊর্ধ্ব নজির আহম্মদ জানান, স্বাধীনের পর থেকে বেড়িবাঁধ অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। তাদের উদাসীনতার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ও স্থাপনাগুলোর বেহাল অবস্থা। তিনি আরো জানান, ওই ভূমিগুলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ড লিজের আওতায় আনলে বছরে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো। এদিকে ১৯৬৮ সালে নির্মিত কাজীরহাট স্লুইসগেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০০১ সালে বিলীন হয়ে যায়। অপরদিকে উপকূলীয় অঞ্চলে ১০টি স্লুইসগেট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৎকালীন সরকার প্রতিটি স্লুইসগেট সংলগ্ন একটি করে গার্ড রুম নির্মাণ করে। ওই সব গার্ড রুমে একজন করে পাহারাদার নিয়োগ করে পাউবো। ১৯৭০ সালের পর থেকে ওই সব পাহারাদারদের আর দেখা যায়নি। যার কারণে স্লুইসগেটগুলোর অবস্থা ক্রমশ বিলীনের পথে। ১০টি স্লুইসগেটের মধ্যে কয়েকটি জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় সচল থাকলেও অনেকগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এদিকে স্লুইসগেটগুলো ঘিরে উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৪০টি খাল খনন করা হয়েছিল। উপজেলা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানিগুলো ওই সব খাল হয়ে স্লুইসগেট দিয়ে সাগরে প্রবাহিত হত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে স্থানীয়রা ওই খালগুলো দখল করে নেয়। যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ যেন সোনাগাজীর কৃষকের ১২ মাসি দুঃখ লেগেই আছে। এ ব্যাপারে ফেনী পাউবোর কর্মকর্তা প্রামাণিক জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে স্লুইসগেট, বেড়িবাঁধ ও খালগুলো সংস্কার করা যায়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন