রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কদর বাড়ছে হাতপাখার

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, (বোয়ালখালী) চট্টগ্রাম থেকে : গরমের তিব্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে লোডশেডিং আর বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। জনজীবনে দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও গরমের দুর্ভোগ থেকে একটুখানি স্বস্তির আশায় হাতপাখার ওপরই নিভর্র করতে হচ্ছে। এক সময় এ হাতপাখাই ছিল ভরসা। কিন্ত এখন আধুনিক প্রযুক্তি আসলেও বিদ্যুতের সল্পতার কারণে যথাযত ব্যবহার নিশ্চিৎ করতে পারছেন কেউই। ফলে ঘুরে ফিরে আসতে হচ্ছে মনোরম ও শীতল হাওয়ার উল্লেখ যোগ্য মাধ্যম হাতপাখায়। প্লাস্টিকসহ নানা জিনিসের পাখা তৈরী হলেও গ্রাম্য শৈল্পিক ও ঐতিহ্যের ধারক তাল পাতার হাত পাখাই যেন এখনো সেরা। বিদ্যুৎ নেই তো কি হয়েছে, গরম বিদায় করতে যেন নান্দনিক সেই কুটির শিল্পের এক বৈচিত্র গাঁথা তাল পাতার হাত পাখাতো আছেই। তাই কোন চিন্তা নেই, এমনই নিজের অভিব্যাক্তির কথা অকপটে জানালেন সত্তর্রোধ্ব সোনা মিয়া। তিনি বলেন, এক সময় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ বোয়ালখালীতে বেশ কয়েক জায়গায় তালপাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরি করা হতো। কিন্ত সময়ের পরিবর্তণে আগের মতো তেমন চাহিদা এবং তাল গাছের অভাবে অনেক কমে গেছে। তবে বেশ কয়েকজন এখনো বোয়ালখালীর এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সরকারি ভাবে তাল গাছের আবাদসহ সহযোগীতা থাকলে এ কাজে মানুষ আরো এগিয়ে আসতো বলেও তিনি জানান। স্বভাবতই তপ্ত রোদে চলা পান্থ বা পথিক খুঁজবে একটু বাতাসের স্পর্শ। সে জন্য অকৃত্রিম হাতপাখার ওপরই নিভর্র করতে হচ্ছে। তাই বলা হচ্ছে প্রযুক্তি নিভর্র যুগেও কদর একটুও কমেনি গ্রামীন কুটিতে তৈরি হাতপাখার। তাই বাতাস সৃষ্টির প্রাচীন প্রযুক্তির কাপড়, তালপাতা, বাঁশ ও বেতের তৈরী হাত পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে এখন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। গ্রীষ্মের উষ্ণতার বার্তা আসতে না আসতেই হাত পাখার কদর বেড়েছে পথচারীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষজনের মধ্যে। গ্রাম বা শহরের ফুটপাতে বসে ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পাখা বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে বিক্রেতাদের। আমুচিয়া ইউনিয়নের হাফিজুর রহমান নামের এক বিক্রেতা জানান, গরম আসলে হাত পাখা’র চাহিদা বেড়ে যায় অনেকগুণ, এসময় বেচা বিক্রিটাও একটু ভাল হয়। প্রতিটি পাখার খুচরা মূল্য ৪০ থেকে ৫০টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এনিয়েই চলে তাদের সংসার। প্রতিদিন মোটামুটি ভাল আয় হয়। কেউ নিজে তৈরী করেন আবার কেউ কেউ কারিগরদের কাছ থেকে খুচরা মুল্যে খরিদ করে গ্রীস্ম মৌসুমে ওই হাত পাখা নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম বা শহরে বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরো জানান, এর কদর একটুও না কমায় আজকাল অভিজাত বুটিক বাড়ি কিংবা ফ্যাশন হাউজগুলোও এখন নজর দিচ্ছে বাহারি হাত পাখা তৈরির উপর। এসব হাত পাখা নানা ঢং আর রঙ-এ চলে আসছে অভিজাত ড্রইং রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপকরণ হয়েও। তাই আজ আর হাত পাখা শুধু হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়, আরও বেশি কিছুতে পরিণত হচ্ছে দিনে-দিনে। হাওয়া খাওয়া ছাড়াও লোকে ঘর সাজানো বা বিয়ের গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সুদৃশ্য পাখা কেনেন। হাত পাখার ক্ষেত্রে তালের পাখার ব্যবহার বরাবরই এগিয়ে। তালের পাতায় নানা রঙের ডিজাইন করা পাখাও পাওয়া যায়। তাছাড়া গ্রামের অনেক মেয়েরাই পাটি পাখা, কাপড়ের নকশা করা পাখা, সুতায় বোনা পাখাসহ নানা রকম পাখা তৈরি করে। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এসব পাখা তৈরি হয়ে থাকে। প্রাচীনকালেও এ উপকরণে হাত পাখা তৈরি হতো। তবে আজকাল রকম ফেরের আধিক্য দেখা যায়। তাই বলা যায় প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় গ্রামীণ কুটির শিল্পের অনেক নিদর্শন হারিয়ে গেলেও বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় নকশি পাখার যে রুপ দেখা যেত তার একটুও ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং বেড়েছে অনেকগুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন