সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ডুবে আছে ৭শ’ বিঘা ফসলি জমি

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পানি নিষ্কাশন ও খাল সংস্কারের অভাবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শীতলক্ষ্যা পূর্বপারের কৃষি ফসলি জমির চাষাবাদ সুবিধায় ও বন্যানিয়ন্ত্রণ কল্পে একটি সেচ প্রকল্পের নানা অনিয়মের বলি হচ্ছেন হাজারো কৃষক। এ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কৃষকরা তাদের চাষ উপযোগী ধানী জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। ফলে নিজের মালিকানাধীন বিঘার পর বিঘা জমি থাকলেও ধান, চাল কিনে খেতে হচ্ছে বাজার থেকে। কোন কোন কৃষক চাষাবাদ করতে না পেরে কৃষি কাজ ফেলে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন জীবিকার তাগিদে।এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা ক্যানেল গুলোর সংস্কার না করায় কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প (বøক এ-১) অধীনস্থ এলাকায়। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প(বøক-এ১) এর অধীনে পানি সরবরাহ পরিচালনা কমিটির সাথে অত্র প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা নেই ৫ বছর ধরে। কোন কোন কমিটির লোকজন কে এসও তাও জানে না। নিয়মিত অফিস না করে স্থানীয় লাইনম্যান মনিরসহ প্রকল্পাধীন ভাসমান শ্রমিক দিয়ে কোন কোন এলাকা দেখাশুনা করলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারকি কাজ ঠিক মত করেন না বলে রয়েছে অভিযোগ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পটির অধীনে রূপগঞ্জের ২টি পৌরসভা কাঞ্চন ও তারাব, আর ৩টি ইউনিয়ন ভুলতা, মুড়াপাড়া ও গোলাকান্দাইলসহ নরসিংদী পশ্চিম অঞ্চল মধাবদীর কিছু অংশ রয়েছে। বেশির ভাগ এলাকায়ই রয়েছে নানা সমস্যা। তবে রূপগঞ্জের মিঠাব, আতলাশপুর, কাঞ্চন ও বেরক মৌজার প্রায় ৭শ’ বিঘা আবাদি জমিতে দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ পানি আটকে থাকায় এ সমস্যা আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রকল্পাধীন স্থানীয় কার্য্যালয় বানিয়াদি হতে হাটাব হয়ে টেংরার টেক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার (এফআইসি ক্যানেল) নামে একটি প্রধান খাল রয়েছে। এ খালের উপর কচুরীপানা ও ময়লার আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকায় পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাটাব বাড়ৈ বিলের ৩শ’ বিঘা, শিমুলতলা বিলের ২শ’ বিঘা ও টেংরারটেক বিলের ২শ’ বিঘাসহ আবাদ যোগ্য ফসলি জমিতে পানি আটকে আছে ৫ বছর ধরে। একই দৃশ্য দেখা গেছে পিআইসি ভুক্ত ছোট ক্যানেলগুলোর। ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ ও ফসলি জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নেমে আসতে পারছেন এ ধরনের কচুরীপনা থাকায়। সূত্র জানায়, প্রকল্পের দায়িত্বরত ল্যান্ড বিভাগের এসও এরফান নিয়মিত অফিস করেন না। মাসে দু-একবার লাইনম্যানদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। আর এতটুকু দায়িত্বের মধ্যেই বিশাল এলাকা জুরে প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন তিনি। এই সুযোগে ক্যানেল পারের জমি, একোয়ার করা রাস্তা-ঘাট, প্রকল্পাধীন পতিত জমি দিন দিন দখলদারের কব্জায় চলে যাচ্ছে। পানি নিষ্কাশন খালগুলো নিয়মিত সংস্কার না করায় বিলের পানি আটকে ফসলি জমি তলিয়ে রাখছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ইচ্ছে থাকলেও চাষাবাদ করতে পারছেন না। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রতি ৬ মাস অন্তর প্রায় বিঘা প্রতি প্রায় ৫০মণ ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ কৃষকের জমিতে বছরে দু’বার ফসল আবাদ করার সুবিধার জন্যই এ সেচ প্রকল্প করা হয়েছে। তবে ঠিকমত তদারকি না করায় খালগুলো ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। আর তাতে পানি আটকে গিয়ে বিলের চাষাবাদযোগ্য ইরি জমি পতিত পরে রয়েছে। হাটাব এলাকার পাউবো অনুমোদিত স্কীম চালক মনির হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা তাদের খোঁজ খবর নেয় না। কৃষকদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১২০ টাকা উত্তোলন করে নিয়মিত ব্যাংকের মাধ্যমে জমা করেন তিনি। এ সময় তিনি আরো বলেন, এফআইসিভুক্ত খালগুলো নিয়মিত সংস্কার করলে অত্র এলাকার আবাদী কৃষি জমির পরিমাণ বাড়তো। তবে এসব বিষয়ে বারবার জানানোর পরও রহস্যজনক কারণে খালের কাজ না করায় এ সমস্যা আরো বাড়ছে। সূত্র জানায়, হাটাব এলাকার হাসিবুর রহমানের ৩ বিঘা, শামীম মিয়ার ৫ বিঘা, মনির মাস্টারের ৭ বিঘা, হাতেম আলীর ৪ বিঘাসহ স্থানীয় হাজারো কৃষকের ৭শ’ বিঘা জমি পানির তলায় পড়ে থাকায় ফসল আবাদ করতে পারছেন না তারা। ফলে প্রতিবছর লোকসান গুনলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের যেন কিছুই করার নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ,পাউবোর লোকজন নিয়মিতক অফিস না করায় এখানকার পাম্পগুলোসহ মূল্যবান যন্ত্রাদি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা কৃষিজমি পানিতে ডুবে থাকায় স্থানীয় কৃষকরা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে বেশ কিছু আইপিএম কৃষক মাঠ ছিল। এখন সেখানে এ ধরণের মাঠের সংখ্যা কমে গেছে। এ নিয়ে তিনি উর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে পানি সরবরাহ কমিটির (আঞ্চলিক) সভাপতি মনির হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস ও স্যারকে বিষয়গুলো অবহিত করেছি। তবে লোকবল না থাকায় এ সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। মনির হোসেন আরো বলেন, এফআইসি দুই এর অধীনে খালগুলোতে ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানা জমে থাকায় পানি প্রবাহে ও সেচকাজে ব্যহত হচ্ছে।একই ভাবে পিআইসি খালের উপর মাটি ভরাট হয়ে খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক বিলের মধ্যেই পানি আটকে গিয়ে অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প (বøক এ-১) এর এসও প্রকৌশলী এরফান হোসেন (ল্যান্ড বিভাগ) বলেন, লোকবল কম তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এ সমস্যা ৫ বছর ধরে নয় বলে দাবী করেন তিনি। গত ৩ বছর যাবৎ এ সমস্যা তৈরী হয়েছে। বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নিয়মিত অফিস করেন কি না এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দায়িত্বে অবহেলা বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন