শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রোমাঞ্চকর জয়ে মিসবাহ-ইউনিসের বিদায়

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : টেস্ট ক্রিকেটটা এই কারণেই এত রোমাঞ্চকর। অতিনাটকীয়তার জন্ম দিয়ে মাঝে মাঝে সে নিজেই নিজেকে চমকে দেয়। সদ্য শেষ হওয়া ডমিনিকা টেস্টের কথায় ধরুন। ৪৪ ওভার আর ৯৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হুট করেই দাঁড়িয়ে গেল। শেষ চার ইউকেটে পার করে দিলো প্রায় ৫৩ ওভার! মিসবাহ-ইউনিসের স্বরণীয় বিদায়ের জন্য পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বানানো রঙিন মঞ্চটা তখন অনেকটাই সাদা-কালোয় রুপ নিয়েছে। আর ৬ বল পার করতে পারলেই ম্যাচের সাথে সিরিজটাও হবে ড্র। তখনই স্বরুপে ইয়াসির, টেস্ট ক্রিকেটও হাজির তার গোপন রোমাঞ্চ নিয়ে। পারল না উইন্ডিজ, ১০১ রানে ম্যাচ জয়ের সাথে সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো পাকিস্তান।
ক্যারিবীয়দের কাছে এই পরাজয় হয়তো নেহাত-ই একটা হার। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে এটা জয়ের চেয়েও বেশি কিছু। হানিফ মোহাম্মাদ যা পারেননি, জাভেদ মিয়াঁদাদ যা পারেননি, ইমরান খান যা পারেননিÑ সেটাই করে দেখালেন মিসবাহ-উল-হক। তার নেতৃত্বেই আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপাঞ্চলে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের উৎসব করলো পাকিস্তান। আর সেটা তার এবং ইউনিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচের মাধ্যমে বলে উদযাপনটাও পেলো ভিন্ন মাত্রা।
রোমাঞ্চটা আরো চরমে ওঠে ম্যাচের শেষ মুহূর্তের অভাবনীয় নাটকীয়তার কারণে। এর চেয়ে ভালো কোন পরিসমাপ্তির কাল্পনিক চিত্র কি মনোপটে এঁকেছিলেন মিসবাহ-ইউনিস? সম্ভবত না! মিসবাহও জানালেন তেমনি, ‘এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এমন সর্বোত্তম পরিসমাপ্তিই আমি চেয়েছিলাম।’ এরপরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পাকিস্তানের সফলতম অধিনায়ক, ‘আমি আমার মা, বোন, পরিবার ও স্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এটা তাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পরেই শেষ টানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা বলল চালিয়ে যেতে। আমার সতীর্থরাও আমাকে চাচ্ছিল বিজয়ীর বেশে বিদায় নিতে।’ নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও সন্তুষ্টির কথা বললেন ৪৩ বছরের ‘তরুণ’, ‘ক্যারিয়ারে যা পেয়েছি তাতে আমি খুশি। এর চেয়ে ভালো পরিসমাপ্তি আমি চাইতে পারতাম না।’ এজন্য সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘আমি সত্যিই এই দল নিয়ে গর্বিত। তারা যেভাবে আমাকে ও ইউনিসকে বিদায় জানালো!’ বিদায়বেলা ইউনিসের সাখে সেই সব সুখের মুহূর্তগুলো আরো একবার স্বরণ করেন মিসবাহ, ‘তার জন্য আমার শুভকামনা। তার সাথে পার করা সময়টা ছিল সত্যিই দারুণ। অনেকগুলো জুটি, ইতিহাসের পাতাÑ আমাদের দুজনার নামই লেখা থাকবে সেখানে।’
শেষ কথায় আবারো মিসবাহ টেনে আনলেন বিদায় ম্যাচের সেই রোমাঞ্চের কথা, ‘সবাই প্রস্তুত ছিল। ইউনিস ও আমার জন্যে তারা অনেক পরিশ্রম করেছে। এরপর হঠাৎ বিষন্নতা চলে এলো, বল হচ্ছে না, উইকেট নেই, ক্ষনিকের একটা দুইটা সুযোগ। সব মিলে, টানা জয়ের চেয়ে এভাবে জয় পাওয়াটা যেন জয়ের চেয়েও বেশি কিছু।’
মিসবাহর দলকে ক্ষনিক ওই হতাশা উপহার দেন একজন রস্টন চেইস। শেষ পর্যন্ত বিফলে গেল তার ৩৬৬ মিনিট আর ২৩৯ বলের লড়াইয়ে গড়া অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসটি। আমিরের ৯৫তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে পারলেন না। পরের ওভারে স্ট্রাইকটা তাই পেয়ে গেলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। আশার কথা হলো তিনিও চেইসের সাথে ততক্ষণে কাঁটিয়ে দিয়েছেন প্রায় অর্ধ ঘন্টা। এবার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইল না পাকরা। এগারো জনই ঘিরে দাঁড়ালেন গ্যাব্রিয়েলের চতুর্দিকে। ইয়াসিরের চতুর্থ বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও এক বলের বিরতিতে আর অতসত ঝামেলায় যাওয়া লাগলো না। অফসাইডের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ বোল্ড! ৩০৪ রানের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত ২০২ রানে শেষ ক্যরিবীয় ইনিংস। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের আনন্দোল্লাস তখন বাঁধন হারা! সবচেয়ে বেশি ইয়াসিরÑ ৯২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ঠিক এই দৃশ্যই অপর প্রান্ত থেকে ফেলফেলিয়ে চেয়ে দেখলেন চেইস। ম্যাচ শেষেও বললেন হতাশার কথা, ‘মনে মধ্যে একটা জিনিসই ছিল, শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচটা বাঁচানো। সেঞ্চুরি সেখানে কিছুই না।’
তবে মাত্র ১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে দলের বেহাল দশায় দাঁড়িয়ে যাওয়ার সুবাদে ‘মিস্টার ক্রাইসিস’ খেতাব পাওয়া চেইসের এই লড়াইটা অবশ্য একেবারেই বিফলে যায়নি, ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা উঠেছে ২৫ বছর বয়সী ডানহাতির হাতেই। পরাজিত দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও গর্বিত সতীর্থদের লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে, ‘যেভাবে লড়াই করে হেরেছি তাতে আমি গর্বিত। অনেকেই ভেবেছিল, টেস্টটা অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তা হয়নি। হেরে খারাপ লাগছে বটে কিন্তু আমারা যা দেখিয়েছি তা অনেক দিন ধরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দেখাতে পারছে না।’ চেইসের উপর তার বাড়তি কৃতজ্ঞতা তো ছিলই, প্রতিপক্ষের দুই বিদায়ী তারকাকেও অভিবাদন দিতে ভোলেননি হোল্ডার, ‘মিসবাহ ও ইউনিস দুইজনকেই আমার অভিনন্দন। তোমরা বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিনিধী। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।’
দুই মহিরুহকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি থেকেও। সংস্থাটির চিফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন তাদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে বলেন, ‘এই দুই ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ার জুড়েই খেলাধুলা ও ভক্তদের অনেককিছু দিয়েছেন।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান : ৩৭৬ ও ১৭৪/৮ ডিক্লে.
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৪৭ ও ৯৬ ওভারে ২০২ (ব্রেথওয়েট ৬, পাওয়েল ৪. হেটমায়ার ২৫, হোপ ১৭, চেইস ১০১*, ভিশাল ২, ডাওরিচ ২, হোল্ডার ২২, বিশু ৩, জোসেফ ৫, গ্যাব্রিয়েল ৪; আমির ১/২২, আব্বাস ১/৩১, ইয়াসির ৫/৯২, হাসান ৩/৩৩, আজহার ০/৩, শফিক ০/১৫)।
ফল : পাকিস্তান ১০১ রানে জয়ী।
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রস্টন চেইস।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : ইয়াসির শাহ।

এক নজরে
মিসবাহ-উল-হক
ফরমেট    ম্যাচ    ইনি.    রান    সর্বোচ্চ    গড়    ১০০/৫০
টেস্ট    ৭৫    ১৩২    ৫২২২    ১৬১*    ৪৪.৫৩    ১০/৩৯
ওয়ানডে    ১৬২    ১৪৯    ৫১২২    ৯৬*    ৪৩.৪০    ০/৪২
টি-২০    ৩৯    ৩৪    ৭৮৮    ৮৭*    ৩৭.৫২    ০/৩
অর্জন
ক্স    আইসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬
ক্স    আইসিসি খেলোয়াড় র‌্যাংকিংয়ে ২০০৮ সালে ছিলেন টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটসম্যান।
ক্স    ২০০৯ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য।
ক্স    তার নেতৃত্বে আগষ্ট ২০১৬তে প্রথমবারের মত আইসিসির টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠে পাকিস্তান।
ক্স    ২০১৫ বিশ্ব্কাপে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দান।

ইউনিস খান
ফরমেট    ম্যাচ    ইনি.    রান    সর্বোচ্চ    গড়    ১০০/৫০
টেস্ট    ১১৮    ২১৩    ১০০৯৯    ৩১৩    ৫২.০৫    ৩৪/৩৩
ওয়ানডে    ২৬৫    ২৫৫    ৭২৪৯    ১৪৪    ৩১.২৪    ৭/৪৮
টি-২০    ২৫    ২৩    ৪৪২    ৫১    ২২.১০    ০/২
অর্জন
ক্স    আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যান র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান ২০০৯।
ক্স    আইসিসি টেস্ট দলের সদস্য ২০১৫।
ক্স    একমাত্র পাকিস্তানি হিসেবে টেস্টে দশ হাজার রান। সর্বোচ্চ (৩৪টি) সেঞ্চুরিরও মালিক তিনি।
ক্স    ২০০৯ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
ক্স    ২০০৯ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩১৩ রানের ইনিংস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জহির ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০৬ পিএম says : 0
দু'জনের বাকী জীবনের জন্য রইলো শুভ কামনা।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন