শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আগামী ২৫-২৭ জুলাই ডিসি সম্মেলন ক্ষমতা চান জেলা প্রশাসকরা

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করার পর সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) অন্তত পাচঁটি ধারার ক্ষমতা ফিরে পাওার জন্য এবারো প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। ডিসিদের দাবি, গত আট বছরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা  ৮ লাখ ২০ হাজার ৭৪১টি মামলার বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে।
আগামী ২৫ জুলাই শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এ সম্মেলনের শুরুর দিনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরবেন মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা ডিসিরা। ইতোমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা তিন দিন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় আশঙ্কাজনক হারে অপরাধ বাড়ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন ডিসিরা। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জনদুর্ভোগ, ভোজালে সয়লাব, বাল্যবিবাহ, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিসহ নানা অপরাধ সংঘটনের সঠিক তথ্য থাকলেও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে সিআরপিসির ১৯০(৪) ধারামতে, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৮ জেলার ডিসি এ প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুলাই সকাল ১০টায়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ১৮টি কার্য অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৭ নিয়ে সারাদেশে থেকে ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাব আগামী ২২ মে বিভাগীয় কমিশনাদের সভায় চুড়ান্ত করা হবে। সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায় গত রবিবার স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের  চেম্বার আদালত। আগামী  বৃহস্পতিবার ১৮ মে পরবর্তী শুনানি হবে।
মন্ত্রিপরিষদের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, সরকার যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবেই চলবো। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজার ৭৪১টি মামলার বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৬২টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ  আট বছরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ২শত কোটি ৩৭ লাখ  ৭৫ হাজার ৪১২ টাকা আদায় করা হয়েছে। দেশের সাধারন মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ন্যায় বিচার পেয়েছে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০১১-১২ সালে আশঙ্কাজনকভাবে ইভটিজিং বেড়েছিল। এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ইভটিজিং দমন করা হয়েছে। এখন আপনার আমার মেয়ে ছেলে শান্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে, কেউ আর তাদের টিজ করে না। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট কয়েক দিন বন্ধ থাকায় অপরাধ বেড়েছে বলে ডিসিরা চিঠি দিয়েছেন। ১৮ মে আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা। আদালতের রায়ের পর এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডিসিদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- ১১ মে হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অবৈধ ঘোষণার পর বন্ধ রাখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। এতে দেশে অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচার করা যেত, দ্রæত শাস্তি পেত অপরাধীরা। কিন্তু মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি ১১টি জেলার ডিসি।  মোবাইল কোর্ট চালু থাকাবস্থায় এতদিন এসব জেলায় বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটা বন্ধ ছিল। চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় বিশৃঙ্খল পরিবেশের কারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য হল সুপাররা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তা দিতে পারেননি ১৭ জেলার ডিসি। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী জনগণ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক ডিসি। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ ওষুধ বিক্রি শুরু হয়েছে বলে সুস্পষ্ট তথ্য থাকা সত্তে¡ও কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকায় প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলা চলছে। পাহাড়ে গাছ কাটা হচ্ছে। আমসহ মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর ফরমালিন ও কার্বাইড মেশানো হচ্ছে। ডিসিদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এভাবে চললে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ খাদ্যে ভেজাল বৃদ্ধি, ইভটিজিং, মোটরযান অধ্যাদেশ পরিপন্থী কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। চিঠিতে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন