রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মাছশূন্য হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদী

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : শাশ্বত পরিচয়ে শুধু নদ-নদীই হারিয়ে যাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে বড় বড় নদীতেও। উত্তরাঞ্চলের ছোট-বড় ৬০টি নদীর কোন নদীতেই এখন স্বাভাবিক পানি নেই। নদীতে মাছের মহা আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেরা মাছ ধরার আশায় নদীতে জাল ফেলে কোন মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে তীরে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে জীবন ও জীবিকার তাগিতে এবং মহাজনদের দাদনের টাকা পরিশোধ করার চিন্তায় জেলে পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত উৎকষ্ঠার মধ্যে দিনযাপন করছে। বেকার হয়ে পড়ায় অধিকাংশ জেলে পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অন্য পেশা খুঁজতে শহরে যাচ্ছেন। চলতি শুস্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের যমুনা, তিস্তাসহ সকল নদী শুকিয়ে গেছে। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্রে চকচক করছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর সোনালী বালু কণা। গুটিয়ে গেছে নদীপাড়ের মানুষজন। ফলে যাদের নৌকা আছে এখন তা তুলে রেখেছে। হারিয়ে গেছে রঙিন পালের নৌকা আর সেই চিরচেনা সুর-‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইল্ল্যা...।’ নদীর নেই রূপ দিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়ক ও আঞ্চালিক সড়ক ধরে গেলে যে ছোট সেতু অতিক্রম করতে হয় সেখানে কোন এক জায়গায় কর্তৃপক্ষ লিখে দেয় নদীর নাম। যেখানে আজ খুঁজে পাওয়া যায় না নদী। প্রকৃতির কোলে সৃষ্টি বাংলাদেশের নদীগুলো মানুষের হাতে মৃত্যুর কোলে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই বাতাসে যেন এখন শুনতে পাওয়া যায় দীর্ঘশ্বাস আর গুঁমরে ওঠা কান্নার শব্দ। প্রতিটি নদী ঘিরে দুইপাড়ের যে সব মানুষ গড়ে তুলেছিল বসতি ও জীবিকা, প্রকৃতি এঁকেছিল জল রঙে সবুজের ছবি, এখন তা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্রæততর হওয়ায় মরে যাচ্ছে বড় বড় গাছপালা। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন কারণে উত্তরাঞ্চলের ৬৭টি নদ-নদী হুমকির মুখে পড়েছে। বাকি নদ-নদীর অবস্থাও করুণ। এ সব নদ-নদীর বুকে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল চর। উত্তরের সব ছোট-বড় নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর নাব্য হ্রাস ও ছোট ছোট শাখা-প্রশাখার উদ্ভবের কারণে নৌপথের ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার নৌশ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, বুড়িতিস্তা, চাড়ালকাটা, মধুপুর, বুড়িখোড়া, সানিয়াজান, ধরলা, চিকলি, করতোয়া, আত্রাই, কুমলাই, আউলিয়াখানা, যমুনেশ্বরী, দুধকুমারসহ সকল নদী সম্পপূর্ণ পানিশূন্য হয়ে গেছে। বছরের পর বছর নদীগুলো খনন না করায় বর্ষা মৌসুমে যেমন রুদ্রমূর্তি তেমনি শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে। এ ছাড়া কত যে ছোট নদী আছে উত্তরাঞ্চলে তার নামও মনে নেই বেশিরভাগ মানুষের। খলসডোঙ্গা, বড়াল, নারদ, ইছামতি, হুরাসাগর, গুমানি কাঁকন, কাঁকেশ্বরী, চিকনী, রূপনাই, নদীশুখা, মাথাভাঙ্গা, মাইলা, পাথরঘাট, তুলসীগঙ্গা, খরখরিয়া, রওনাই, গদাই বাঁধাই...কত নাম নদীর। ৭শ’ ১০টি নদী আছে, তার মধ্যে কত ছোট নদী ভূমির সঙ্গে মিশে গিয়ে ঠিকানা হারিয়েছে, তার হিসাব মেলে না। নদীপাড়ের স্থানীয় মানুষজন জানান, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বর্ষা হলেই দুকূল ছাপিয়ে ফুঁসে ওঠে। প্রতিশোধ নেয় সে মানুষের ওপর। ঘরবাড়ি, ফসল সব কিছু উজাড় করে ফেলে। এভাবে বার বার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মৎসজীবীরা তাদের বাপ-দাদার পুরনো পেশা ছেড়ে এখন দিনমজুর কিংবা গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল। ছোট ছোট খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। যাদের নৌকা আছে এখন তা তুলে রেখেছে। হারিয়ে গেছে, রঙিন পালের নৌকা আর সেই চিরচেনা সুর- ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইল্ল্যা...।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন