বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মীরসরাই-সীতাকুন্ড সেইফ লাইনে আতঙ্কিত যাত্রীরা

এক মাসে অর্ধশতাধিক ছিনতাই

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:০০ পিএম, ২০ মে, ২০১৭

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত সেফ লাইন নামক গণপরিবহন রুটে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত এক মাসে বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে এক জরীপে দেখা যায়। গত ৪ মে ছিনতাইকারীদের নিয়ে যাওয়া একটি প্রাইভেট কার সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারি থেকে উদ্ধার করে মীরসরাই থানা পুলিশ। তবে ছিনতাইকারী কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে সেইফ লাইনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সেইফ লাইনের চালক ও হেলপারদের যোগসাযোসে ছিনতাইগুলো ঘটছে বলে অভিযোগে জানা যায়।
২৭ এপ্রিল ২০১৭ রাত ১০টা। স্থানীয় সংগীত শিল্পী লক্ষণ দাস ছাত্রছাত্রীদের গান শেখানোর কাজ সেরে মীরসরাই সদর থেকে সেইফ লাইনের একটি গাড়িতে নিজামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। গাড়িটি বড়তাকিয়া বাজার পেরুলেই চালকের পাশে বসা যুবকটি ভেতরে এসে তার গলায় ছুরি ধরে। গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রী বেশি অন্য দুই জন তাকে মারধর করে একটি আইফোনসহ দুইটি মোবাইল সেট, নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। পরে আবুল কাশেম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অন্ধকারে তাকে ফেলে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। ২ মে ২০১৭ রাত ৯ টায় নিমাই সাধু নামে একজন মিরসরাই সদর থেকে হাদিফকির হাট আসার জন্য সেইফ লাইনে উঠে হেলপার গাড়িটি সীতাকুন্ড যাবে বলায় তার সাথে আরো দুই ব্যবসায়ী উঠে। আগেই থেকে গাড়িতে চালক হেলপারসহ আরো ৫ জন লোক ছিল। নয়দুয়ার এলাকা গাড়ি অতিক্রম করার পর আগে থেকে গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারিরা তাদের তিনজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে এবং নগদ টাকাসহ সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। ব্যবসায়ীদের একজনের কাছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ও আরেকজনের কাছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ছিল। এর কিছু দিন পর মিরসরাই থানার পুলিশের এক মহিলা সদস্যের স্বামী ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। ২৯ এপ্রিল ২০১৭ রাত ৯টায় মীরসরাইয়ের স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিনিধি আজিজ আজহার পেশাগত কাজ সেরে মীরসরাই সদর থেকে একটি সেইফ লাইনের গাড়িতে উঠেন মিঠাছরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তাকে বহন করা গাড়িটি সুফিয়া রোড যেতেই তার সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে অন্ধকারে তাকে নামিয়ে দেয়। জানা গেছে, সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে থ্রি হুইলার (তিন চাকার ছোট যান) নিষিদ্ধ করার পর যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে বড়দারোগারহাট-সীতাকুন্ড পর্যন্ত চার চাকার ছোট গাড়ি নামানো হয়। নাম দেয়া হয় ‘সেইফ লাইন’। দিনের বেলায় কোন প্রকার ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটলেও সন্ধ্যার পরপরই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। যাত্রীদের ছিনতাইয়ের জন্য উত্তর দিকে মীরসরাই সদর থেকে সুফিয়া রোড, মস্তাননগর বাইপাস থেকে চিনকী আস্তানা এলাকা ও দক্ষিন দিকে মীরসরাই থেকে বাদামতলি, বড়তাকিয়া থেকে নয়দুয়ার, নিজামপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে বড়দারোগারহাট এলাকাকে নিরাপদ মনে করে। বারইয়ারহাট-বড়দারোগারহাট-সীতাকুÐ হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ মাসুদ জানান, সেইফ লাইনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে না। অনুমোতি বিহীন ইমা নামের কয়েকটি চার চাকার গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন। ছিনতাইকারীদের রোধ করতে তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। চৌধুরীহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শাফায়াত উল্যা জানান, রাতে মহাসড়কে ছিনতাইয়ের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। ছিনতাই রোধ করতে ও ছিনতাইকারীদের ধরতে সন্ধ্যার পর বড়তাকিয়া থেকে বড়দারোগারহাট পর্যন্ত হাইওযে পুলিশের দুইটি টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। মীরসরাই থানার ওসি তদন্ত জাকির হোসেন জানান, মহাসড়কে ছোট গাড়ি গুলোতে ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছি আমরা। ইতিমধ্যে মহাসড়কের ৪টি স্পটে সন্ধ্যার পর থেকে সেইফ লাইন নামের গাড়ি গুলো তল্লাশীর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, জোরারগঞ্জ থানা অংশে কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। কোন ভুক্তভোগী তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তবু ও আমাদের একটি টিম নিয়মিত বারইয়ারহাট থেকে মিঠাছাড়া পর্যন্ত টহলে রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন