খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারন। ৭ দিন ২৪ ঘন্টা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় খোলা রেখে জনসাধারণের সেবাদানের নিয়ম থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠান সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। শুধু তাই নয়, কোন কোন কার্যালয়ে নিয়মিত ডাক্তার না বসায় এ সমস্যা আরো প্রকট হয়ে পড়েছে। আবার সপÍাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার স্থানীয়রা ডাক্তার আসতে দেখেন না। ফলে ৭দিনের পরিবর্তে ৫দিন আর ২৪ ঘন্টার পরিবর্তে এ সেবার সময়সীমা দাড়িয়েছে মাত্র ৪ ঘন্টায়।
এমনই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে একটি সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে দু’জন চিকিৎসক ও তাদের মুঠোফোন নাম্বার। তারা সপ্তাহে ৭দিন ২৪ ঘণ্টা দাত্রী প্রসূতি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা দিয়ে থাকেন। এটা সরকারিভাবে নির্দেশিত। তবে একই সাইনবোর্ডের অতি নিকটেই দেখা যায় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন কার্যালয়। এর মূল ফটকে তালা ঝুলে আছে। এ সময় স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখানে নিয়মিত ডাক্তার না আসাতে দূর গ্রামের লোকজনকে ভীড় করতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে রোগী বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সদের বাড়তি কাজ করতে হয়। তাছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে হয়রানীর শিকার হন বলে জানা যায়।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও তারাব পৌরসভাতে রয়েছে এমন আরো দুটি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া দাউদপুর, ভোলাব ও গোলাকান্দাইলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ২৪ ঘন্টা সেবাদান করার নিয়ম রয়েছে। এসব সেবাদান কেন্দ্র থেকে স্থানীয়দের জন্মনিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন পদ্ধতি অবহিত, প্রয়োগ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও দাত্রী ও প্রসূতি সেবার নিয়ম রয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ডাক্তার বসেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। বসলেও তারা সকালে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেবা দেন। বাকি সময় তারা অফিস করেন না বলে রয়েছে রোগীদের ক্ষোভ। তাছাড়াও একই বিভাগের ভুলতা রোর্যাল ডিসপেন্সারী (আরডি) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। এখানে নিয়মিত ডাক্তার থাকলেও নার্স সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা সেবাদানের জন্য ডাক্তার আবাসিক সুবিধা নিয়ে কার্য্যালয়েই থেকে যান। অন্যদিকে রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নেই নেই এ সেবাদানের জন্য কার্যালয়। তাই সেখানকার রোগীরা এ সেবা বঞ্চিত হয়ে আছে । ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার লাকী বেগম বলেন, আমার দাত্রী সমস্যা সমাধানে প্রথমে ভুলতা ক্লিনিকে যাই। সেখানে ডাক্তার থাকলেও নার্স না থাকায় তাকে বাধ্য হয়ে ৬ কিলোমিটার পথ বেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে হয়। কায়েতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবর হোসেন খান বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়মে বিগত ৩ বছর যাবৎ নিয়মিত ডাক্তার বসেন না। বসলেও রোগীদের সাথে তার যোগাযোগ হয় না। তাই এখানকার রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারী হাসপাতালের দিকে ঝুঁকে। তার দাবী গর্ভবতি মায়েদের চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করা এ হাসপাতালের জমি তারাই দিয়েছেন। তবে নিয়মিত ডাক্তার না বসাতে তার ক্ষোভের যেন শেষ নেই।
এ বিষয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন সহকারী পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার সাহনীন সুলতানা বলেন, মাতৃজনিত কারণে ছুটি ভোগ করছেন তাই কার্যালয়ে তালাবদ্ধ রয়েছে। অপর কর্মকর্তা কর্মচারী বিষয়ে তিনি জানেন না বলে দাবী করেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার মুহাম্মদ নাজমূন আনোয়ার বলেন, গ্রামীন নারীদের দাত্রী ও প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা দানে এ বিভাগ সুনামে সহিত কাজ করে আসছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে রোগীদের এ সেবাদানের জন্য ২৪ ঘণ্টা ৭ দিনই খোলা রাখার নিয়ম রয়েছে। আমার জানামতে এসব খোলাই থাকে। তবে কিছু কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সংশ্লিষ্ট নার্স ও ডাক্তার অবস্থান করায় রোগীদের ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তবে এসব বিষয়ে বিহীত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন