রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : রূপগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও কনক্রিটের ছাঁদ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি উন্নত আসবাব বেঞ্চ, টেবিল ,চেয়ার ইত্যাদি নানা সংকটের মধ্যে কোনমতে টিকে আছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বেঞ্চ না থাকায় পাটিতে বসেই পাঠদান নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঝড়ে টিনের চালা উড়িয়ে নেয়ার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও মেরামত না হওয়ায় ভাঙ্গা টিনের চালার নিচেই লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একই প্রতিষ্ঠানের প্রাচীর না থাকায় পাশের অনিরাপদ পুকুরে ডুবে শিশু শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ভয় কিংবা শাপ বিচ্ছুর অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেন মূখী হচ্ছে। ফলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও দরিদ্র শ্রেনির লোকজন। জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১৯নং গোয়ালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৮ইং সনে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় স্থানীয়ভাবে মাটির ঘরে এ বিদ্যালয়ের কার্য্যক্রম চালু হয়। পরে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ১৯৯১ইং একটি ৩ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ভবন পায় প্রতিষ্ঠানটি। একই দশকে ১৯৯৮ইং সনে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে অপর একটি ৩কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেড ভবন এ বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্ধ হয়। নির্মাণও হয়। তবে কিছুদিন না যেতেই সেই ভবনের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ফাটল। দুটি ভবনের টিনের চালাই অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে চালা বেয়ে বৃষ্টির পানি শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করে পাঠদানে বিঘœ ঘটছে। এছাড়াও শ্রেণি কক্ষে বেঞ্চ না থাকায় পাটিতে বসে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। একই প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর না থাকায় পার্শ্ববর্তী ঝোঁপঝাড় থেকে সাপ বিচ্ছু এ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভয় ও আতঙ্ক নিয়েই পাঠদানে অংশ নেয়। একই প্রতিষ্ঠানের টিনের চালা ভাঙ্গা থাকায় আকাশে মেঘ করলেই শিক্ষার্থীদের অঘোষিত ছুটি হয়ে যায় বলে জানা গেছে। আর শিক্ষকরা এমন পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে গড়া একটি ছোট্ট্র কামড়ায় আশ্রয় নেয়। অপরদিকে একটি টয়লেট না থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী কাগজে কলমে রয়েছে। তবে উপস্থিতির হার মাত্র ৫০ ভাগ বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়টিতে ৫জন শিক্ষকই নিয়মিত পাঠদান করাতে বিদ্যালয়ে আসেন। তবে প্রাক প্রাথমিক শাখার জন্য একটি পোস্ট শুন্য রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে নৈশ প্রহরী না থাকায় বিদ্যালয়ের কম্পিউটার থাকছে না প্রতিষ্ঠানে। ফলে ডিজিটাল সেবা বঞ্চিত হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশান আরা খানম জানান, তারা ৫জন মহিলা শিক্ষক এ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করাচ্ছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে বিগত দিনে বেশ সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল। সম্প্রতি ভবন না থাকায় এ সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। একটি বাথরুম,সীমানা প্রাচীর, চেয়ার টেবিল,বেঞ্চ ও শিক্ষা সরঞ্জামাদির অভাব রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের না দিতে পারায় বিদ্যালয়ে ছেড়ে যাচ্ছে । অবিলম্বে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর না দিলে শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গোয়ালপাড়া,ছনি, বাগের আগা,বাগবের,টিনর ইত্যাদি গ্রামের লোকজন প্রাথমিক শিক্ষা এখান থেকেই নিয়েছেন। প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও সুরাহা পাননি তারা। তবে সম্প্রতি এসব সমাধানের আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে কবে তা বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে রয়েছে সংশয়। তিনি দাবি করেন, সরকারি শিক্ষাসেবা গ্রহণ একটি মৌলিক অধিকার । এ মৌলিক চাহিদা পুরনে গোয়ালপাড়া বাসী এতদিন বঞ্চিত হয়ে আছে। তিনি অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন,সীমানা প্রাচীর,টয়লেট ও আসবাব সংকট সমাধানের দাবী জানান। বিদ্যালয়ের সভাপতি ওবায়দুর রহমান বকুল বলেন, এ বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সংকট নিরসন করতে না পারলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে এ প্রতিষ্ঠানটি। পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকলে বিভিন্ন বরাদ্দ পেতেও সমস্যা হয়। আবার শিক্ষার্থী ধরে রাখতে চাইলে সুযোগ সুবিধাও দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা চান তিনি। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুঁইয়া রানু বলেন, এ বিদ্যালয়ের নানা সংকট রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে টিনের চালা অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে এ সংকট নিরসন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটির নানা সংকট বিষয়ে জেনেছি এবং ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সীমানা প্রাচীরের জন্য বরাদ্ধ এসেছে। ভবন বিষয়ে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যান্য সংকট নিরসনের সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন