ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : একেতো প্রচন্ড তাপদাহ তার উপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং। এই দুইয়ে হাফিয়ে উঠেছে ঝিনাইদহর মানুষ। বিপাকে পড়েছে ঝিনাইদহ জেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক। কলকারখানা বন্ধ থাকছে প্রায় সময়। সেচ কাজে পাওয়া যাচ্ছে না বিদ্যুৎ। স্থানীয় পত্রিকা প্রকাশে ঘটছে বিপত্তি। গরমে মানুষের প্রান ওষ্ঠাগত। মানুষ ও প্রনীক‚ল সব যেন হাসফাস করছে। বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় কোন প্রশান্তি মিলছে না। নেই আরামদায়ক কোন পরিবেশ। ঘনঘন এই লোডশেডিং অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আগের দিনে এতো গরম পড়েনি বলে মানুষ লোডশেডিংয়ের জ্বালা বুঝতো না এমন কথা বলাবলি করছে মানুষ। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কেন এই ভয়াবহ লোডশেডিং ? অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ত্রæটির কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে গ্রীডগুলোকে লোডশেডিং করে পরিস্তিতি সামাল দিতে হচ্ছে। সেই সাথে নরসিংদী জেলায় বৈদ্যুতিক একটি বড় টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ার কারণে জাতীয় গ্রীডের সাথে গোটা দক্ষিণাঞ্চল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই দুটি কারণে দেশের ৩২টি জেলায় চলছে স্মরণ কালের ভয়াবহ লোডশেডিং। জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১। অন্যদিকে ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন (ওজোপাডিকো) এর গোটা জেলায় গ্রাহক সংখ্যা প্রায় এক লাখ। পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকো মিলে মোট গ্রাহক হবে সাড়ে তিন লাখের উপরে। এ সব গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ঝিনাইদহ জেলায় বিদ্যুৎ দরকার নব্বই মেগাওয়াট। ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুতের জিএম প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুতের যে গ্রাহক রয়েছে তাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ৫৫ মেগাওয়াট বরাদ্দ প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেওয়া হয় ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট। এই বরাদ্দ দিয়ে ফিডারগুলো সর্বক্ষণ চালু রাখা সম্ভব নয়। যে কারণে নিরুপায় হয়ে লোডসেডিং করতে হয়। তিনি বলেন, গ্রাহকরা মনে করেন বিদ্যুত আটকে রেখে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে বিদ্যুৎ যখনই উৎপাদন তখনই সরবরাহ করতে হয়। ভ্রান্ত ধারণার কারণে গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের নাজেহাল এমনকি মারধর করা হচ্ছে। তিনি বলেন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ভেঙ্গেপড়া টাওয়ার মেরামত হলে পরিস্থতি অনেকটা স্বাভাবিক হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা গ্রাহকদের সেবা দিতে কোন কার্পন্য করি না। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে না পারলে আমাদের করার কিছুই নেই। তিনি বলেন ওজোপাডিকোর চাহিদা যা ছিল দিনকে দিন তা বাড়ছে। গ্রাহকদের বুঝতে হবে বিদ্যুৎ আটকে রাখার জিনিস নয়। তিনি বলেন পিক আওয়ারে আমাদের চাহিদা ৪২ আর অপপিক আওয়ারে ৩০। কিন্তু এর বিপরীতে পিক আওয়ারে ২২ ও অফ পিকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। তারপরও ঝড় বৃষ্টি ও ত্রæটির কারণে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা হয়। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ বিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করার কারণে অনেক ফিডারের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ তেকে বঞ্চিত হন। নেতাদের মেয়ের বিয়ে, জরুরী মিটিং, প্রশাসনের লোকজনের সভা ইত্যাদি কারণে অন্য ফিডার বন্ধ করে প্রভাবশালীদের চাহিদা মেটাতে হয়। ঝিনাইদহ গ্রীড স্টেশনের কর্মকর্তারা এই তথ্য দিয়ে বলেন, আমরা খুব বিপদে আছি। এদিকে সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ বিনা নোটিশে অনেক সময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে গাছের ডালপালা কাটার কারণে মানুষ বিপাকে পড়েন। আবার সময়ের কাজ সময়ে না করার কারণে লাইনে ত্রæটি দেখা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টাা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন