শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

২০ হাজার অবৈধ রিকশার দখলে রূপগঞ্জ

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সীমানা দিয়ে রয়েছে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা বাইপাস এশিয়ান হাইওয়ে। এছাড়াও রয়েছে পূর্বাচল উপশহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ঘাট। রয়েছে ৫শতাধিক শিল্প কারখানাসহ পাইকারী কাপরের হাট। তাই এখানে জনসাধারনের ব্যস্ততা ও বসতি সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে জনসাধারণের পথ চলার সহজ বাহন সড়ক মহাসড়কে রিক্স্রা । এসব রিক্সা দাবরে বেড়াচ্ছে সড়ক মহাসড়কেও । তবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স দেয়ার নিয়ম থাকলেও ২০০০ইং সনের পর কোন পৌরসভা ও ইউপি থেকে লাইসেন্স সরবরাহ না করায় প্রায় ২০ হাজার অবৈধ চোরাই রিকসা চলাচলা করছে এ অঞ্চলে । ফলে রহস্য জনক কারণে গত প্রায় ১৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নতুন রিকসার লাইসেন্স নবায়ন ও বিতরন। প্রতিদিন উপজেলায় ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ টি অবৈধ ও চোরাই রিকসা নামাচ্ছে মহাজনের ইশারায়। সূত্র জানায় এসব রিক্সার বেশির ভাগই পাওয়া যায় চনপাড়া পূণর্বাসন কেন্দ্রের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়।
জানা যায়, তারাবো-কাঞ্চন পৌরসভা,বরপা ও ভুলতা-গোলাকান্দাইল শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় এখানে ভাড়াটিয়ার সংখ্যা বেশি। তাই এখানে ভাড়াটিয়া রিক্সা চালকের সংখ্যা বেশি। তারা নিজের কেনা রিক্স্রা না চালাতে পেরে মহাজনের আশ্রয় নেয়। পারা মহল্লা ও গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে মহাজনের রিক্সা গেরেজ। সব মিলিয়ে রূপগঞ্জে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার রিক্সা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি পৌরসভায় রয়েছে লাইসেন্সধারী রিকসার সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার । আর বাকী ৬ হাজার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের লাইসেন্সধারী রিকসা। বাকী ২০ হাজার রিক্সার নেই কোন নিবন্ধন । ফলে এসব রিক্সার বেশির ভাগই চোরাই রিক্সা বলে দাবী করেন খোঁদ রিক্সা চালকেরাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ রিক্সাগুলো চলছে গ্যারেজের মহাজনদের অধীনে। আর এসব গ্যারেজ মহাজনদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। তাই অবৈধ এসব রিকসার বিরুদ্ধে পৌরসভা কিংবা পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর কোনো অভিযান নেই বললেই চলে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে অবৈধ রিকসার সংখ্যা।আবার রিক্সা চুরির ঘটনাও বেড়েছে আশংকাজনক হারে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ২ শ’র উপড়ে গ্যারেজ রয়েছে। বেশি লাভের আশায় মহাজনী পেশা বেছে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি মহল। এসব গ্যারেজে মহাজনের মালিকানা ছাড়াও ভাড়ায় রাখা হয় রিক্সা। আর প্রতি রিকসা রাখা বাবদ গুণতে হয় ঘন্টা হিসেবে টাকা। এর পাশাপাশি নম্বর প্লেট নিতে হয় এসব গ্যারেজ মহাজনদের কাছ থেকেই। মহাজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের বিনিময়ে নম্বর প্লেট কিনতে হয়। এছাড়া রিকসা চুরি হয়ে গেলে সে রিকসা উদ্ধার করতে গ্যারেজ মহাজনের শরণাপন্ন হতে হয়। এখানেও গুণতে হয় টাকা। এসব কাজের জন্য রয়েছে একটি চোরাই চক্র। এরা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে রিকসা চুরি করে এনে কম দামে বিক্রি করে দেয়। চনপাড়ায় ৭ টি রিকসা চোরাই চক্র গ্রæপ সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। এদের প্রতিটি গ্রুপে ১২ জনের সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যদের নামেমাত্র বখশিশ দেওয়া হয়। আর এ চোরদেরও নিয়ন্ত্রণ করেন গ্যারেজ মহাজনরা।
কালাদী এলাকার মহাজনী ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মিয়া জানান, রিক্সা চোরাই কি না তা তারা জানেন না। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা লাইসেন্স না দেয়ায় তাদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে।
তারাবো পৌরসভার রিকসা চালক বরকতউল্লাহ বলেন, গ্যারেজো রিকসা রাখতে যে কত কষ্ট হয় তা বুঝাতে পারব না। মহাজনদের অনেক টেকা দিতে হয়। মহাজনরাই আমাগো কষ্টের টেকা খাইয়া ফালায়। ভুলতা এলাকার রিকসা
চালক আবুল বাশার মিয়া বলেন, ভাই ঘাম ফালাইয়া কামাই আমরা, মজা মারে মহাজনরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকসা চালক বলেন, চোরাই রিকসার অভাব নাই। ডেলি ঢাকা থেকে রিকসা আহে রূপগঞ্জে। এগুলাইন চোরেগো দিয়া মহাজনরাই আনায়। আরো কয়েকজন রিকসা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউই প্রকৃত মালিক নন। মহাজনের রিকসা চালিয়ে আয়-রোজগার করেন। আর অবৈধ রিকসা নিয়ে পুলিশি ঝামেলায় পড়লে ছাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্ব মহাজনই করে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূলতা এলাকার এক মহাজন বলেন, তার গ্যারেজে রিকসা রয়েছে ৫৩ টি। এর মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন নম্বর রয়েছে ৯ টির। তিনি বলেন, পুলিশকে মাসোহারা দিয়া ব্যবসা চালাই। টেকা না দিলে তারা ঝামেলা করে।
সূত্র জানায়, রূপগঞ্জে ৩০ হাজার রিক্সা চললেও তাদের কোন সমিতি নেই। নেই তাদের বৈধতা। মহাজনের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তারা ইচ্ছে করেই লাইসেন্স করেন না। করলেও ভুয়া প্লেট ব্যবহার করেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এ রিক্সা খাত থেকে স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আহরন বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুইয়া রানু বলেন, রিক্সাগুলো দরিদ্র লোকেরা চালায় । তাই তাদের দিকে নজর কম। তবে মহাজনদের বিষয়ে সজাগ থাকা উচিৎ বলে মনে করেন।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, শুনেছি চোরাই ও অবৈধ রিকসা রয়েছে। এদেও বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পৌর বা ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত তথ্য দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন