সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আলোচনায় ভোট রাজনীতি দক্ষিণ-পশ্চিমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে, কদর বাড়ছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : কেন্দ্রে ও এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করেছেন আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় যেসব প্রোগ্রাম হচ্ছে তা নির্বাচনকে সামনে রেখে। নির্বাচনী রাজনীতি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমের। ‘জনপ্রিয়তা না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না’-প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা একথা ঘোষণার পর দলীয় অনেক এমপি অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর তাদের দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা একটু নড়েচড়ে বসেছেন। স্থানীয় নেতা কর্মীরা হয়েছেন উজ্জীবিত। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও একটু একটু করে এগুচ্ছে। সবার লক্ষ্য একাদশ জাতীয় নির্বাচন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ৩৭টি আসন এলাকায় কমবেশী সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী তৎপরতা চলছে। রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরাও সমানতালে চাঙ্গা। কদরও বেড়েছে তাদের। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের আলোচনায় উঠে আসছে ভোট রাজনীতি। চারিদিকে এমন কথাও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে বর্তমানে সত্যিকারার্থে রাজনীতি আর রাজনীতি নেই। ভোট এলে জনগণের গুরুত্ব বাড়ে। রাজনীতি অর্থ হয়ে গেছে যেন প্রভাব খাটিয়ে যেনতেনভাবে নেতাদের সম্পদ বৃদ্ধি। জনগণের সমস্যা সমাধানে ও জনকল্যাণে এবং স্থানীয় ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি অনুপস্থিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক এলাকার ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত বর্তমান অবস্থার চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী করার সুযোগ ছিল। ক্ষমতায় থাকার কারণে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। বরং অধিকাংশ আসন এলাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। এক নেতা আরেক নেতার কোনঠাসা করা, ঠান্ডা লড়াই ও প্রশাসনে তদবির পাল্টা তদবির করে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত ছিলেন বেশীরভাগ সময়। তৃণমূলের মতামতকে কোথাও কোথাও গুরুত্ব দেয়া হয়নি এমন অভিযোগও আছে। রাজনীতি যেমন চলছে গতানুগতিক। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমে আওয়ামী লীগের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আ.লীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন, কোথাও কোথাও  সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল হলেও এখন থেকে যেভাবে তৃণমূলে কাজ চলছে তাতে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তৃণমুল নেতাদের কোন্দল মিটানোর নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রে ডেকে বৈঠক করে।
দলের সাধারণ নেতা ও কর্মীদের বক্তব্য, গোটা এলাকায় অনেক এমপি দল গোছানোর কাজে সময় দেননি। উদাহরণ হিসেবে যশোর জেলার কথা ধরা যাক। জেলাটি কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে খুবই সম্ভাবনাময়। বিগত নবম সংসদ নির্বাচনে  ৬টি আসনের ৬টিতেই আ.লীগকে উপহার দেন জনগণ। তাদের প্রত্যাশা ছিল জনপ্রতিনিধিরা সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ঐতিহ্যবাহী যশোরকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবেন। কিন্তু সেই মেয়াদে একটিবারের জন্য ৬জন আওয়ামী লীগের এমপি কখনো এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখেননি। আবার ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পরও একইধাচে চলেছে। এক প্লাটফর্মে উঠেননি সংসদ সদস্যরা। তারা সময় পার করেছেন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে। অনেকের বিরুদ্ধে আখের গোছানোর অভিযোগ প্রবল। দলীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কথা, অনেকেরই গণমুখী চরিত্র নেই, তারা হয়ে গেছেন এমপি। দক্ষিণ-পশ্চিমের অধিকাংশ এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দলীয় স্বার্থ সংরক্ষণে যতটা যতœবান নন, অনেকে নিজেদের স্বার্থে যথেষ্টই তৎপর। শুধু দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকদের অভিযোগ নয়, একই ধরণের অভিযোগ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের। তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বক্তব্য, এবারের নির্বাচন হবে প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ। তাই কাগুজে বাঘ নয়, সত্যিকারের জনদরদী যারা, যাদের জনপ্রিয়তা আছে, দলের স্বার্থে নিবেদিত এবং পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা তাদের খুঁজে বের করে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কেন্দ্র ভুল করবে না। দলীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যশোরের ৬টি আসনের অধিকাংশেই এবার নতুন মুখ আসছে।
বিএনপি গোটা এলাকায় নির্বাচনী মাঠ তৈরী করছে। তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর উজ্জীবিত হয়েছেন নেতা ও কর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে ও এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তবে তাদের সাংগঠনিক ভিত নড়েবড়ে রয়েছে। মেরামতের কাজ চলছে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, হামলা, মামলা প্রশাসনিক হয়রানী জেল জুলুম হুলিয়ার মাছে এখনো যে কর্মকান্ড চালানো যাচ্ছে এটাই বড় কথা। তাদের কথা, নির্বাচনে শক্তভাবেই মাঠে নামার প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক ভীত শক্তিশালী হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে যশোর, খুলনা ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলে জেলায় জেলায় প্রতিনিধি সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, বিপদ আপদকালীন সময়ে কারা মাঠে ছিল, কার কি ভ‚মিকা, ঘরে বসে মাঠে আছি রিপোর্ট করাসহ চাতুরতার আশ্রয় নেয়া নেতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রেখে গা বাঁচানোর রাজনীতি যারা করেছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। অন্যান্য দল কোন কোন এলাকায় নির্বাচনী মাঠ গুছানোর কাজ করছে। সবমিলিয়ে দক্ষিণ-পশিাঞ্চলে নতুন ও পুরাতন মুখের এমপি প্রার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে সংসদীয় আসন এলাকায়। দলগুলোও কোন আসনে কাকে মনোয়ন দিলে ভালো হয় তারও এটা জরিপ চালাচ্ছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে।


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন