মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রতিদিন বিক্রি দশ লাখ টাকা কুমিল্লার বাজারে সুস্বাদু রসালো লিচু

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : মধুমাস জ্যৈষ্ঠের এখন মাঝামাঝি সময় চলছে। এরই মধ্যে কুমিল্লার বাজারে নানারকম মধু ফলের ভিড়ে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। কুমিল্লা নগরীতে মৌসুমী ফলের নির্দিষ্ট আড়ৎ না থাকায় ফল বাজার খ্যাত রাজগঞ্জ ও কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বর এলাকায় রাস্তার দু’ধারে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে লিচুর পাইকারি বেচাকেনা। ট্রাক-মিনিট্রাকে করে আসা ঝুঁড়ি ভর্তি লিচুর দরদাম নিয়ে পাইকারদের সাথে স্থানীয় ফল দোকানিদের হৈ-হুল্লুড়ে সরগরম হয়ে উঠে পরিবেশ। এবারের মৌসুমে কুমিল্লা নগরীতে ফল বিক্রির কয়েকটি স্পটে প্রতিদিন দশ লাখেরও বেশি লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। অন্যান্য বছরের তুলনায় জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকে লিচুর দাম বেশি হওয়া সত্তে¡ও কেনার জায়গায় থেমে নেই ক্রেতারা। ভিটামিন বি এবং সি সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ফল লিচুর উৎপত্তিস্থল চীনের দক্ষিণাঞ্চলে হলেও এটির বাংলাদেশের রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খাগড়াছড়ি, সোনারগাঁও, ঠাকুরগাঁও, ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে বেদেনাসহ তিন জাতের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে দিনাজপুরের বিখ্যাত বেদেনা লিচু ক্রয়ের অপেক্ষায় রয়েছে কুমিল্লার ক্রেতারা। কয়েকদিনের মধ্যেই কুমিল্লার বাজারে মিলবে বেদেনা লিচু। যা ইফতারে বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে বেদেনার রসালু স্বাদ স্থান করে নেবে। বৈশাখের শুরুতে কুমিল্লায় ফল বাজার দখলে ছিল ভারতীয় লিচরু। আকারে ছোট ও অনেকটা টক ভারতীয় লিচু আসতো সীমান্ত পথে। চোরাচালানির মতোই নগরীর রাজগঞ্জ ফলপট্রিতে প্রতিদিন আসতো ভারতীয় লিচুর শতশত ঝুড়ি। প্রায় একমাস চলেছে ভারতীয় লিচুর বাণিজ্য। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে কুমিল্লার বাজারে আসতে শুরু করে ঈশ্বরদী, সোনারগাঁও, খাগড়াছড়ির লিচু। পুরো বৈশাখ বাজার মাতিয়ে রাখে ওইসব অঞ্চলের লিচু। জৈষ্ঠ্যের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজশাহী, দিনাজপুরের বড় আকারের লিচু মিলছে কুমিল্লার ফল দোকানগুলোতে। আর কয়েকদিনের মধ্যে বেদেনা লিচুর পাশাপাশি দিনাজপুরের দেশিয় প্রজাতির মাদ্রাজি, বোম্বে লিচু, এবং রংপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের আপেল লিচুর সমাগম ঘটবে কুমিল্লার বাজারে। এদিকে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়ের হচ্ছে ফলের অন্যতম এলাকা। নগরীতে ফলের নির্দিষ্ট আড়ত না থাকায় প্রতিদিন ভোরে রাজগঞ্জ ও কান্দিরপাড় এলাকায় লিচুর ট্রাক, মিনিট্রাক এসে জড়ো হয়। বেপারিরা মধ্যরাতেই ঝুড়িভর্তি লিচুর ট্রাক নিয়ে রাজগঞ্জ এলাকায় আসেন। তারপর ভোরের আলো ফুটে উঠতেই শত শত লিচুর ঝুড়ি ট্রাক থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে রাখা হয়। ঝুড়ির ভেতর থেকে লিচুর আকার তুলে ধরে দরদামের হাকডাক দেয় বেপারিরা। একেক দোকানদার ৮/১০ ঝুড়ি কিনে নিচ্ছেন। অনেকে বেশি ঝুড়ি কিনে উপজেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ঝুড়ি ভর্তি লিচুর বেচাকেনা চলে। বেপারীদের কাছ থেকে পাইকারি দরে লিচুর ঝুড়ি কেনা নিয়ে স্থানীয় ফল দোকানিদের শোর-চিৎকারে পরিবেশ সরগম হয়ে উঠে। কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বর, টমসমব্রীজ, চকবাজার, শাসনগাছা, রানীর বাজার এলাকার ফল দোকান ছাড়াও মৌসুমী ফল বিক্রেতারা নগরীর সবকটি বাসষ্ট্যান্ডের সামনে, রেলষ্টেশন, কারাগার সড়ক, পুলিশ লাইনের মোড়, রাজগঞ্জ রাজবাড়ি কম্পাউন্ড, ছাতিপট্রি রাস্তার মোড়ে লিচুর পসরা নিয়ে বসেছে। বর্তমানে বাজারে মিলছে রাজশাহী ও দিনাজপুরের লিচু। দিনাজপুরের পাটনাই ও রাজশাহীর শাহী লিচুর একশোটি পরিমানের প্রতি আটি বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকায়। আবার দিনাজপুরের চায়না-থ্রি প্রজাতের একশো লিচু বিক্রি হচ্ছে ছয়শো টাকায়। কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের ফল বিক্রেতা সহিদ মিজি ও রবিউল জানায়, এবারে লিচুর দাম বেশি। কিন্তু বিক্রিও বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন তারা দু’জনই বিক্রি করছে প্রায় ৪৫ হাজার লিচু। বর্তমানে বাজারে দুই/তিন জাতের লিচু এসেছে। বেদেনা, মাদ্রাজি, বোম্বে ও আপেল জাতের লিচু বাজারে আসবে। এসব লিচুর দাম প্রতি শ’ চারশো থেকে একহাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। এদিকে নগরীতে সবচেয়ে বেশি ফল বিক্রি হয় এমন কয়েকটি স্পট ঘুরে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে লিচুর প্রতি মানুষের প্রবল আকর্ষন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নগরীতে ফরের পসরার ওইসব স্পটে সর্বসাকুল্যে দশ লাখেরও বেশি লিচু বিক্রি হয়ে থাকে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ডসংখ্যক বিক্রি। এবারের মধুমাসে লিচুর বাজারদর ও ক্রেতা চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রেতাদের মুখে ফুটে ওঠেছে মধুরহাসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন