সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অসহায় কৃষকদের আর্তনাদ খাল দখলে অনাবাদি ৪শ’ একর জমি

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গলাচিপা (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া মৌজার মঙ্গলবাড়িয়া সরকারি খাস খালটি গত ১০ বছর ধরে দখল করে রেখেছে এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবার। খালটিতে পাঁচটি বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় শাখা খালগুলো মরে শুকিয়ে গেছে। এলাকার মানুষ যখন পানির জন্য হাহাকার করে, তখন পানি পাচ্ছে না। আর যখন পানির প্রয়োজন হয় না, তখন গোটা এলাকা দূর্যোগ ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকট জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে একদিকে যেমন স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে এলাকার কৃষকের চাষাবাদ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গবাদিপশু পালন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে খালটির জন্য প্রায় চার শ’ পরিবার এক ধরণের জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে কোন আশানুরুপ ফল না পেয়ে কৃষক সমাজ এখন হতাশ। উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে অসহায় কৃষকদের বিরুদ্ধে নেমে এসেছে হুমকি ও নির্যাতনসহ নানা ভয়ভীতি। গত চার মাস ধরে চলছে প্রশাসনের চিঠি চালাচালি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ঝুলে আছে খাল উদ্ধার। সূত্র জানায়, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার লম্বা মঙ্গলবাড়িয়া খালটির দু’টো মুখ রামনাবাদ নদীর সাথে যুক্ত ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে খালের দুটো মুখই বন্ধ করে দেয়। এলাকার কৃষকদের দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে পরে একটি কালভার্টের মাধ্যমে তুলাতলি খালের সাথে যুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা হয়। এ খালের ওপর টুঙ্গিবাড়িয়াসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী মোঃ হাসান তালুকদারসহ তিন ভাই ১০ বছর আগে হঠাৎ করে সরকারি এ খালটি দখল করে নেয়। তারা বাঁধ দিয়ে খালটিকে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এরপর থেকে গোটা এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ খালের পানি দিয়ে ৪শ’ একর জমির ধান ও রবিশস্য চাষাবাদ হয়। কৃষকদের চাষাবাদে যখন পানির প্রয়োজন হয়, তখন পানি আটকে রাখা হয়। আবার যখন পানির প্রয়োজন হয় না, তখন খালের পানি ছেড়ে পুরো এলাকা তলিয়ে দেয়া হয়। বর্ষায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার নেয়। এতে কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার, জুয়েল তালুকদার, লুৎফর হাওলাদার, মো: কায়েস মিয়াসহ কয়েকজন ভ‚ক্তভোগী জানান, লবণ পানির জলাবদ্ধতায় গত কয়েক বছরে এলাকায় রোপা আমন ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। রবি শস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জাহাঙ্গীর তালুকদার ২ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ করে প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন। লুৎফর হাওলাদারও লোকসান দিয়েছেন দুই লাখ টাকা। জুয়েল তালুকদার লোকসান গুনছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। রবিশস্য এবং ধান ছাড়াও গবাদিপশু হাঁস-মুরগী পালন করতে পারছেন না এলাকাবাসী। গাছপালাও মরে যেতে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সবগুলো শাখা খালগুলো শুকিয়ে মাটি ফেটে গেছে। মূল খালের পানি দিয়ে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মঙ্গলবাড়িয়া সরকারী খাস খালটি উদ্ধারের জন্য এলাকার ৩৮ জন কৃষক চলতি বছরের ২৭শে ফেব্রæয়ারি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন দিলে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো: চাঁন মিয়া গত ২৭ ফেব্রæয়ারি কৃষকদের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদনে বাঁধগুলো কেটে পানির চলাচল করার জন্য সুপারিশ করেন। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আবদুল্লাহ এক চিঠির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সাথে তার সহমত পোষন করেন এবং অবৈধ বাঁধ নির্মাণনকারীরা উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার কারনে বাঁধ অপসারণ করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং অপারগতা জানান। পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ মাহবুবুর রহমান তালুকদার রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জকে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। কৃষকরা উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে সরে আসছে। ফলে উৎপাদন চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খাল দখলকারী পরিবারের অন্যতম সদস্য মোঃ হাসান তালুকদার মোবাইল ফোনে বাঁধ দিয়ে সরকারি খাল দখল এবং ঘের বানিয়ে মাছ চাষের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন দফতর থেকে খালের একসনা লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এভাবে তিন বছর লিজ নিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় লিজের জন্য আবেদন করেন নি। খালটি তাদের বলেও দাবি করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন