নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকেরাঙ্গুনিয়ায় থামানো যাচ্ছে না তামাকের আগ্রাসন। সবজি চাষের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে তামাক। ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমির উর্বরা শক্তি। তামাক চুল্লির জ্বালানির জোগান দিতে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ঝুঁকির মুখে পরছে তামাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য। পূর্বে যে জমিতে চাষাবাদ হতো শাক-সবজি, আলু, ধানসহ নানা কৃষিজাত পণ্য সে উর্বর জমি এখন দখলে নিয়েছে তামাক চাষে। উপজেলার কর্ণফুলী, ইছামতি, নাফিতপুকুরিয়াসহ বিভিন্ন ছোট নদীর অববাহিকা ও বিভিন্ন চর অঞ্চলের প্রায় জমি এখন তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসনের শিকার। তামাক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হচ্ছে হাজার হাজার টন পাহাড়ের গাছগাছালি আর প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক-সার। জানা যায়, নদীর অববাহিকার সমতল ভূমির উর্বর জমিতে এক সময় ব্যাপক শাক-সবজি, আলু, ধানসহ প্রভৃতি ফসল হতো। বেশ কয়েক বছর ধরে তামাক কোম্পানিগুলো এসব উর্বর জমিকেই তামাক চাষাবাদের জন্য বেছে নিয়েছে। এবারও উপজেলার পৌর এলাকার ইছাখালী, দক্ষিণ ঘাটচেক, মজুমদারখীল, দৈবিকানন্দন, কুলকুরমাই, উত্তর ঘাটচেক, পারুয়ার গোয়াছপাড়া, পদুয়ার দুধপুকুরিয়া, নাপিত পুকুরিয়া, কমলাছড়ি, রাজানগরের বগাবিলিসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রাণঘাতী এই বিষবৃক্ষের চাষাবাদ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি বিভাগের তদারকির অভাব, সার সংকট আর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বহুজাতিক ও দেশীয় টোবাকো কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় কৃষক ও চাষীরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন তামাক উৎপাদনে। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার কিছু আবাদি জমিতে চাষ করা হচ্ছে তামাক। তবে গত বছরের তুলনায় এবার তামাক চাষ কিছুটা কমেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুল্লিতে তামাক ধুমায়িত করতে প্রতিদিনই শত শত জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইছাখালীর তামাক শ্রমিক বেবী রানী দে জানান, ‘আগে শাক সবজির ক্ষেতে দিন মজুরির কাজ করতাম। কিন্তু তামাক চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে তামাক ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করছি। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে ১৫০ টাকা করে মজুরি দেয়া হয়। অন্যদিকে বিশেষত নারী ও শিশুরাই তামাক চাষবাস ও প্রক্রিয়াজাতের সাথে বেশি জড়িত। এ কারণে তারা যক্ষ্মা, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক কৃষক জানান, তারা নিয়মিতই ভেনটোলিন ট্যাবলেট ব্যবহার করছেন। ঘাটচেকের তামাক ক্ষেতে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক জানায়, তামাক চাষ ক্ষতিকারক। তারপরও জীবিকার তাগিদে করতে হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, তামাক চাষ করে শ্বাস কষ্ট, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হলেও আমাদের চিকিৎসার কোন খরচ দেয়া হয় না। ইছাখালীর তামাকচাষী মো. কাদের বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনা সুদে লোন পেয়েছি। তামাকের বীজও দেয়া হয়েছে। বিনা পুঁজিতে তামাক চাষে লাভও বেশি। তাই সব জেনেশুনেও এই চাষে আছি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, তামাক চাষ বন্ধে কোন আইন নেই। তাই সরাসরি তামাক চাষ বন্ধে আমরা কিছু করতে পারি না। তবে তামাক পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে যে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো হয় সেখানে আমরা আইনের ব্যবহার করবো। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা করিমা আক্তার জানান, মুনাফার লোভে ক্ষতিকর জেনেও কৃষক তামাক চাষে জড়িয়ে পড়ছে। আর তামাক চাষের কারণে কৃষি পণ্য উৎপাদন কমেছে। আর তামাক ক্ষেতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে আশপাশের কৃষি ক্ষেতে ফলন ভালো হচ্ছে না। আমরা কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তামাক চাষে সাময়িক লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তারা কৃষকদের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় ধান, শাকসবজি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন