রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গাবতলীর জলাশয়গুলোতে চিরচেনা দৃষ্টিনন্দন কচুরিফুল

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গাবতলী (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা : বগুড়া জেলাসহ গাবতলী উপজেলার নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবাসহ সকল জলাশয়ে ফুটেছে চিরচেনা অপরুপ সৌন্দর্য্যরে অধিকারী দৃষ্টিনন্দন কচুরিফুল। আমাদেশের দেশের হাওরাঞ্চল এলাকার হাওর-বাওর, খাল-বিল, নদ-নদীতে কচুরিপানা বেশী জন্মে ফলে এসব এলাকায় কচুরিফুল বেশী ফুটে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এসব ফুল নানা রঙ্গে ফুটে ফলে একদিকে যেমন পথচারীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়, অন্যদিকে গ্রামবাংলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বৃদ্ধি করে। তবে কচুরিপানা ও ফুল আমাদের জন্য বেশী উপকারী।
জানা যায়, পথচারীদের দৃষ্টি কাটতে কচুরিপানা ফুলের হালকা বাতাস দোলা দেয় সবার হৃয়দকে। পরিবেশবিদদের মতে কচুরিপানা ও ফুল যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দাবিদার তেমনি এই গাছ ও ফুল আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। কচুরিপানা জৈব সার তৈরী করে কৃষকের মূল্যবান ফসলের জমিতে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে ফসল উৎপাদন বেড়ে যায়। কচুরিপানা মাছ, গবাদী পশুর খাদ্য ও শুকিয়ে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। দেশীয় মাছের অভয়াণ্য ও মাছের বংশ বিস্তারে কচুরিপানা প্রয়োজন রয়েছে। কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ মাটির নিচ ভাগে থাকে আবার কিছু প্রজাতির মাছ উপরের ভাগে থাকতে উপযোগী হওয়ায় কচুরিপানার যথেষ্ট ভ‚মিকা রয়েছে। নদী বা পুকুরে কচুরিপানা থাকার ফলে পানি বেশী পরিস্কার থাকে। তাই পানি বেশ ঠান্ডা থাকায় কেউ কেউ সে পুকুরে নিজে বা গবাদীপশুকে গোসল করাটা বেশ পছন্দ করে থাকেন। পাট পচানোর কাজে (পাটের জাগ) দিতে উপরের অংশে কচুরিপানা দিতে হয়। এছাড়াও রাঁস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে মানুষের হৃদয় ছুয়ে যেত কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্য্য।ে মনটা বেশ খুশিতে থাকত। পাশ দিয়ে ওড়ে যেত নানা প্রজাতির পাখি। গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়া, রামেশ্বরপুর, কাগইল, সোনারায়, নেপালতলী, নাড়ুয়ামালা, দুর্গাহাটা এলাকায় কচুরিফুল ফুটলেও নেপালতলী, মহিষাবান ও কাগইল এলাকায় কচুরিপানা ফুলের দৃশ্যে বেশী চোখে পড়ে। ডোবায় ফুটা কচুরিপানার ফুল পথচারীদের যেমন দৃষ্টি আকৃষ্ট করে তেমনি ফুলের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি (বিশেষ করে) বকপাখি মাছ শিকারের জন্য বেশী থাকে।
কৃষকদের যে কোন ধরনের ফসলে জৈবসার হিসাবে কচুরিপানার বেশ কদর রয়েছে। কচুরিপানার জলজ উদ্ভিদ হলেও গাছ ও ফুল ঔষধী, পূজা-অর্চনা কাজে লাগে। কচুরিপানা ফুল ভাসমান থাকায় ছোট-বড় শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীদের নিকট ফুল বেশ জনপ্রিয়। কচুরিপানা ফুল বিশেষ করে দেশী ৭ থেকে ৮ প্রজাতির হয়ে থাকে তবে এর গাছ প্রায় একই রংঙের হলেও ফুল হয় বিভিন্ন রংঙের। কখনো সাদা আবার কখনো হলুদ, গোলাপী, বেগুনী ও একটু লাল রঙের হয়ে থাকে। কচুরিপানা ফুল ও পাঁপড়ি এবং গাছের শিকড় অতিদ্রæত বংশ বিস্তার করে থাকে। তবে বর্ষাকালে এর বিস্তার বেশী দেখা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত বর্ষায় বাড়ি-ঘর, পুকুরপাড় ও নদ-নদী পাড় ভাঙন রোধে কাজে লাগে। বাংলাদেশে নদ-নদী, পুকুর, হাওর-বাওর ও জলাশয়ে কচুরিপানা অবাধ বংশবিস্তার হলে আজও কচুরিপানা ফুল ও গাছ মানুষের উপকারে কাজে লেগেই চলেছে। তবুও সরকার কচুরিপানা মুক্ত করতে জলাশয় আইন সংশোধন করলেও এখনো নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা ও জলাশয়ে কচুরিপানা দৃশ্যমান। তবে গাবতলীর ইছামতি নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে এখনো ব্যাপক কচুরিপানা রয়েছে। ফলে কচুরিফুল গ্রামবাংলার সৌন্দর্য্যরে দাবিদার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জয়পুরহাট) মুহাঃ আহসান হাবিব জানান, গ্রাম বাংলায় প্রাকৃতিকভাবে ফুটে কচুরিপানার ফুল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে কচুরিপানা ফুলের অবদান রয়েছে। কচুরিপানা ফুলের অপার সৌন্দর্য্যে সবার মন খুশি থাকে। কচুরিপানা গাছ ও ফুলের সৌন্দর্য্যে সাধারন মানুষের দৃষ্টি ও মনকে নাড়া দেয়। গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার জানান, কচুরিপানা ফুল গ্রামবাংলার সৌন্দর্য্যে বৃদ্ধি করে আসছে। জৈব সার তৈরীতে কচুরিপানার প্রয়োজন ফলে কৃষি বিভাগের পক্ষে থেকে জৈবসার তৈরীতে সার্বক্ষনিক পরামর্শের ফলে কৃষক বাম্পার ফলন পাচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গাবতলী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় আমরা সবসময় কৃষকদের জৈবসার ব্যবহারে কচুরিপানার প্রয়োজন নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে আসচ্ছি। ফলে গাবতলীতে জমির উর্বরতা শক্তি বেশী রয়েছে। গাবতলী উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা জুলফিকার আলী হায়দার জানান, কচুরিপানা দিয়ে জৈব সার তৈরী ছাড়াও মানুষের নানা কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন