বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মেগা প্রকল্পের কাজে ধীর গতি

নির্মাণাধীন ভুলতা ফ্লাইওভার ঘেঁষে অবৈধ হকার্স মার্কেট

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় দেশের বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়ার অবস্থান থাকায় নিত্য যানজটের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। তাই এ সমস্যার সমাধানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একটি মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। ফলে এ যানজট নিরসনে ২০১৫ সনের অক্টোবর মাসে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়। তবে মেগা প্রকল্পের আঁওতায় এ ফ্লাইওভারটি ২০১৮ সনের জুন মাসের পূর্বেই খুলে দিবেন বলে সরকারের উর্ধ্বতন মহল চাওড় করলেও যথাসময়ে তা শেষ করা নিয়ে সঙ্কিত রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, ভুলতা ফ্লাইওভার উড়াল সেতুটি নির্মাণ করছে চিনা কোম্পানী চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রæপ ও ¯েপক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ওএমএন বিল্ডার্স লিমিটেড। নির্মাণাধীন ভুলতা ফ্লাইওভার প্রকল্প ঘেষে প্রতি মঙ্গলবার ফুটপাত ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কের মধ্যভাগে ডিভাইডেশনের স্থানে হকার্স মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধভাবে। একই মহাসড়কে মালামাল বহনে লাইনে পর লাইন দাড়িয়ে রয়েছে পিকআপ ভ্যনা, ট্রাক ও লড়ি। আর তাই নিত্য যানজটের কারণে ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত মালামাল যথাসময়ে পৌছে না। অন্যদিকে হকার্স মাকের্ট ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরেই জোর পূর্বক পসরা খুলে বসায় বিপাকে পড়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এমনই চিত্র দেখা গেছে ভুলতা ফ্লাইওভার এলাকায়।
সূত্র জানায়, দেশীয় অর্থায়নে ২০১৫ইং সনের অক্টোবরে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মানের শুরু থেকেই হকার্স ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েন নির্মান শ্রমিকরা। ব্যস্ততম এ মহাসড়কের উভয় পাশে ফুটপাত দখল এমনকি ডিভাইডারের ফাঁকা স্থানে হকারা তাদের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করতে থাকায় এ সমস্যা আরো প্রকট হয়ে আছে। ব্যস্ততম গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় স্বাভাবিকভাবে পথচারী, ক্রেতা, বিক্রেতা আনাগোনা দেশের যে কোন স্থানের তুলনায় একটু বেশি। ফলে এখানকার প্রশাসন এ সমস্যা নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় আশায় দিন গুনলেও সে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। হকার্স দখলে থাকায় দৈনিক চাহিদামত কাজ আদায় করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে নির্ধারিত সময়ের পরও এ ফ্লাইওভার নির্মান কাজ শেষ হবে না বলে মনে করেন তারা।
এদিকে সম্প্রতি সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এ ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে এসে ২০১৮ইং সালের জুন মাসের পূর্বেই এ উড়াল সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানান। আর সে সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী উদ্ভোধন করবেন বলে জানান। বাস্তবে এ কাজের কোন অগ্রগতিই দেখছেন না স্থানীয়রা । ফ্লাইওভারটির কেবল পিলারগুলো নির্মাণ হলেও এর গ্যাং রোড, ড্রেনেজ, পাইলিং, পার্কওয়েসহ বেশ কিছু কাজই বাকি রয়েছে। এশিয়ান বাইপাস সড়ক সংযোগে এখনো বালি ভড়াটের কাজ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে গার্ডার নির্মানের এখনো কোন হদিস নেই। আবার গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় হকারদের দখল থাকায় এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের নিরাপত্তাবেষ্টনীহীন ধীর গতি নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে যথাসময়ে এ কাজ সমাপ্ত হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সূত্র আরো জানায়, বারবার সেতু বিভাগের লোকজন যথাসময়ে কাজ শেষ করার তাগিদ দিলেও অভ্যন্তরীন অসহযোগীতার কারণে ভেস্তে যাবে এ মেগা প্রকল্পের কাজ। ফলে সরকারের এ মেয়াদে এ কাজ শেষ না করতে পারলে ইমেজ সঙ্কটে পড়বেন বলে মনে করেন বিজ্ঞমহল। স্থানীয়দের অভিযোগ এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ভুলতায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে এ ফাঁড়ি পুলিশের অসহযোগীতায় এ সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে সপ্তাহে প্রতি ম্ঙ্গলবারের জন্য হকার্স ও পরিবহন শ্রমিকরা একটি পক্ষকে চাঁদা দিয়েই তাদের অবৈধ কাজ চালিয়ে আসছেন। ফলে রোধ করা যাচ্ছে না অবৈধ হকার ও পরিবহন শ্রমিকদের অবৈধ পার্কিং।
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের প্রত্যঞ্চ অঞ্চলে এই প্রথম কোন মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। দেশের গুরুত্বপূর্ন বিভাগ চ্ট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে যোগাযোগে এ মহাসড়কের উপর নির্মাণ করা ফ্লাইওভার কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। এ উড়াল সেতুটি ১ দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হবে। যার উভয় গার্ডার অভ্যন্তরে চারলেন বিশিষ্ট হবে। একই সাথে ৩ তলা বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি দেখতেও হবে দৃষ্টিনন্দন। এশিয়ান বাইপাস, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংযোগস্থলে এ ফ্লাইওভার এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। যা মূল কাজের ব্যয় হবে ১২০ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। নির্মাণ চুক্তিতে এ উড়াল সেতুর কাজ ২ বছরেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ইং সনের জুন মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে জানান তারা। তবে বাস্তবে মাত্র ৬০ ভাগ কাজ শেষ হলেও এখনো ৪০ ভাগ মুল কাজই বাকি রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে হতাশা। তাই সল্প সময়ে এ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ হোসেন বলেন, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারব। তবে হকার্স ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের অসহযোগীতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি দাবী করেন, স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক ও হকার্স ব্যবসায়ীরা ফ্লাইওভার এলাকা ছেড়ে দিলে এ কাজ আরো দ্রæতগতিতে এগুতে পারতো। তবে যে কোন মূল্যেই সরকারের বেধে দেয়া সময়ে কাজ শেষ করবেন বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আলীউল হোসেন বলেন, হকার্স ও পরিবহন শ্রমিকদের একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে কি কারণে বারবার এখানে তারা পসরা সাজায় তা জানা নেই। এ সময় তিনি জানান, মেগা প্রকল্প আওতাধীন এ উড়াল সেতুর কাজ যথাসময়েই স¤পন্ন হবে।
হকার্স ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, প্রতি মঙ্গলবার গাউছিয়া মার্কেটে দেশী বিদেশী পাইকাররা কাপড় কিনতে আসে। তাই হকার্স ব্যবসায়ীরা সপ্তাহে একদিনই তাদের ব্যবসা করেন। আবার এ দিনে পাইকারদের ক্রয়কৃত কাপড় বহনে পরিবহন যানবাহন এখানেই রাখতে হয়। তাই এদিন একটু সমস্যা হয়। তাদের দাবি এ দিন এখানে ব্যবসা করতে না দিলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। তাই তাদের বিকল্প ব্যবস্থা রেখে উচ্ছেদ করলে কোন আপত্তি নেই বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ -১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে দুটি বৃহৎ মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে আড়াইশো কোটি টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভার অপরটি একশো কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ২০১৮ইং সালের জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে। তবে হকার্স উচ্ছেদের বিষয়ে একাধিকবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সব রকয় সহায়তা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন