শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মুরাদনগরে প্রশাসনের উচ্ছেদাভিযানের আগে কবরস্থান দখলের মহড়া

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা। গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলার সর্বত্রই ঘটছে বিচিত্র সব ঘটনা। পুকুর, জমি, বাড়ি, মার্কেট দখলের পর এবার ৮৫ বছরের পুরানো কবরস্থানের উপর লোলুপ দৃষ্টি। কবরস্থানের ৬শতকের মধ্যে এক শতক জায়গার উপর আদালতের রায় ঘোষণা হলে বাদী পক্ষ পুরো কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে। আর সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার পর উচ্ছেদাভিযান চালাতে কবরস্থানে যান মুরাদনগর উপজেলা এসিল্যান্ড। উচ্ছেদাভিযানের নামে বাদী পক্ষের দখল মহড়ার ঘটনা ঘটেছে দীর্ঘদিনের পুরানো কবরস্থানে। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবরস্থান দখল চেষ্টার ঘটনায় হতবাক মানুষ। এঘটনায় নিন্দা আর ক্ষোভ ফুটে উঠেছে সাধারণ মানুষের চোখেমুখে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের বড়ইয়াকুড়ি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পরিবার ৮৫ বছর ধরে কবরস্থানটি ব্যবহার করে আসছে। পুরানো এই কবরস্থানে ওই পরিবারের সৈয়দ আবদুল জব্বার, সৈয়দ তাহের আহাম্মদ, সৈয়দ কবির আহাম্মদ, সৈয়দ সামছুল হুদা, ডা: সৈয়দ সামছুল আলম, সৈয়দ একেএম সিদ্দিক, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, সৈয়দ গুলজার হোসেন, সৈয়দা আমিরুন নেছা, সৈয়দ আলী আজগর, সৈয়দ মোহাম্মদ ইউনুছ, সৈয়দ হারুনুর রশিদ ও নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে দাফন করা হয়েছে। ১৯৩১ সালে ঐতিহ্যবাহী ওই পরিবারের সৈয়দ আবদুল জব্বার ও সৈয়দ একামত আলী একই গ্রামের আশ্রাফ আলীর কাছ থেকে দলিল মূলে ৩৪৮ দাগের ৬ শতক জায়গা ক্রয় করেন। এরপর থেকে জায়গাটি পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সৈয়দ পরিবারের ওই কবরস্থানের জায়গার মালিকানা নিয়ে গত ৭৭ বছরেও কোনরকম কথা ওঠেনি। হঠাৎ বড়ইয়াকুড়ি গ্রামের ৫২ বছর বয়সী মৃত মনা মিয়ার ছেলে এবং ভূমির বিক্রেতা মৃত আশ্রাফ আলীর নাতি হানিফ মিয়া কবরস্থানের এক শতক জায়গার মালিকানা দাবিকরে কুমিল্লার মুরাদনগর সহকারি জজ আদালতে ২০০৮ সালে দেওয়ানি মামলা (নং- ৫২৬/২০০৮) ঠুকে দেয়। মামলায় বিবাদী করা হয় সৈয়দ আবদুল জব্বার ও সৈয়দ একামত আলীর ওয়ারিশদের। হানিফের দাবি তার দাদা আশ্রাফ আলী সঠিকভাবে জায়গাটি বিক্রি করেনি। ওই জায়গায় তার পৈত্রিক অধিকার রয়েছে। অথচ সিএস, আরএস ও বিএস খতিয়ানে কবরস্থানের ৩৪৮ দাগের ৬ শতক জায়গা সৈয়দ পরিবারের ওয়ারিশদের নামে বহাল রয়েছে। এদিকে মামলাটির বিষয়ে ২০১২ সালের মে মাসে কবরস্থানের এক শতক জায়গার দাবীদার হানিফের পক্ষে রায় হলে বিবাদীরা ওই রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। প্রায় ৫ বছর পর ওই এক শতক জায়গার বিষয়ে হানিফের পক্ষে আদালত আবার রায় দিলে গত সোমবার মুরাদনগর উপজেলা এসিল্যান্ড রাশিদা আক্তার উচ্ছেদাভিযান চালাতে কবরস্থানে যান। তিনি যাওয়ার আগেই হানিফ তার লোকজন নিয়ে সৈয়দ পরিবারের কবরস্থানের পুরো সীমানা প্রাচীর ভেঙে দখলের চেষ্টা চালায়। কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার বিষয়টি এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখার পর অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
সৈয়দ পরিবারের সৈয়দ সাদেক আহাম্মদ ও সৈয়দ শরীফ আহাম্মদ জানান, ‘মামলার বাদী হানিফ প্রকৃত সত্য গোপন এবং আদালত থেকে পাঠানো বিবাদীপক্ষের নোটিশ কৌশল করে গোপন রেখে আদালতের একতরফা রায় তার পক্ষে নিয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই জায়গা ক্রয়ের ৭৭ বছর পর একটি মহলের ইন্ধনে লোভের বশবর্তী হয়ে হানিফ কবরস্থানের এক শতক জায়গা দাবি করার নেপথ্যে অসৎ উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে এসেছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন