সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় আ’লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত : গুলিবিদ্ধ ৫

কয়েকদিনের ব্যবধানে ৭টি লোমহর্ষক হত্যাকান্ড

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ষ নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শর্টগান তাকে বাঁচাতে পারেনি
ষ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ড সংঘটিত
আবু হেনা মুক্তি : খুলনা এখন ফের মৃত্যুপুরী। গত বুধবার রাতে অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্যা (৬৫)। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৫ জন। গুলিবিদ্ধ আহতরা হচ্ছে লিয়াকত আলী খান (৬৭) ও তার ছেলে মোস্তফা খান (৩৮) এবং আজম তালুদকার (২৬), রুবেল (৩৫) ও বুলবুল (৩০)। এরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ গুলিবদ্ধ আজম তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে খুলনায় ৭টি লোমহর্ষক হত্যাকান্ড সংঘটিত হল।
গুলিবিদ্ধ অপর প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল মোল্লা জানান, হঠাৎ করেই পেছন দিক থেকে ৪/৫ জন এসে গুলি শুরু করে। গুলির শব্দে শাহাদাৎ মোল্লা তার শর্টগান বের করতে গেলে তার হাতে গুলি করে। এরপর আশেপাশের সবাইকে গুলি করে।
নিহত মোল্লা শাহাদাৎ হোসেন ঘের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ গ্রæপের সাথে তার দ্ব›দ্ব চলছিল। মোল্লা শাহাদাৎ হোসেনের চার ছেলের মধ্যে তিনজন বিদেশে থাকেন। অপরজন ঢাকায় ব্যবসা করেন। নগরীর মোল্লাবাড়ির মোড় ও রায়েরমহলে তার দু’টি বাড়ি আছে। তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শর্টগান ছিল। দিনের অধিকাংশ সময় ও সন্ধ্যার পর তিনি রায়েরমহল এলাকায় থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত শাহাদাত খুলনা বাইপাস সড়কের মোস্ত’র মোড়ের সন্নিকটে গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হামিদনগর হাজি মোঃ মহসিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সহকর্মীদের নিয়ে চা খাচ্ছিলেন। এসময় ৮-১০জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে পিছন দিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় তার কোমরে লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিল। গাড়ীতে ছিল শর্টগান। তবুও তার প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়নি। এ সময় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে পাঁচজন সহকর্মী আহত হন। এর আগেও তাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত শাহাদাত মোল্লা ওই এলাকার মৃত গয়ের মোল্যার পুত্র। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। আহতরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে মোস্তফা খানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা রায়ের মহল ¯øুইসগেট এলাকার বাসিন্দা। আর নিহত শাহাদাৎ মোল্লা বর্তমানে ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং প্রস্তাবিত সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায় ।
নিহতের স্বজনরা জানান, প্রায় একবছর পূর্বে এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ ধরিয়ে দিয়েছিলেন মোল্লা শাহাদাৎ হোসেন। তারপর থেকে ওই গ্রুপের সাথে তার দ্ব›দ্ব হয়। এরপর থেকে তিনি সব সময় তার কাছে শর্টগান রাখতেন। এছাড়া এলাকায় মাদক বিক্রিতে তিনি বাধা দিতেন। এর ফলে সন্ত্রাসীরা তার ওপর এই হামলা করে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সুমন রঞ্জন সরকার জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে কি কারণে এবং কারা এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত পুলিশ তা প্রাথমিকভাবে বলতে পারেনি।
মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে খুলনাঞ্চলে আবারও হত্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক সময়কার মৃত্যু উপত্যাকা বলে খ্যাত খুলনাঞ্চলে বেশ কয়েক বছর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ থাকার পর আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। খুলনা জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মিঠু জোড়া হত্যাকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৩১ মে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর আড়ংঘাটা থানার বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়ের খাল থেকে পুলিশ অজ্ঞাত (৫৫) পরিচয়ের ঐ ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করলেও এ হত্যাকান্ডের কোন কিনারা করতে পারেনি এখনও। পাওয়া যায়নি গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির পরিচয়। এ ঘটনার একদিন পরই নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১নম্বর বয়রা ক্রসরোড এলাকায় পারিবারিক কলোহের জেরে শেখ মোস্তাক আলী ওরফে হোন্ডার ফকির (৬৪) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। নিহত মোস্তাক আলী স্থানীয় মৃত অখিল ফকিরের ছেলে। তিনি ইজিবাইকের গ্যারেজের ব্যবসা করতেন। একইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় উদ্ধার হয় বস্তাবন্দী মস্তকবিহীন লাশ। রূপসা পুলিশ উপজেলার আঠারোবেকী নদীর একটি ইটভাটার ঘাট থেকে এই লাশ উদ্ধার করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মস্তক বিহীন লাশের কোন পরিচয় মেলেনি। গত ২ জুন রাত ৮টার দিকে দৌলতপুর আঞ্জুমান  রোডের একটি মসজিদের অদূরে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের দৌলতপুর থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ইকবাল সরোয়ারকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ ও খুনীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি।
এদিকে, গেল বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ী এলাকায় দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ নেতা জেডএ মাহমুদ ডনকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ওই গুলিতে পূজার জন্য ফুল কিনে বাসায় ফেরার পথে শিপ্রা রানী কুন্ডু নামে এক পথচারী নারী নিহত হন। ওই ঘটনার পর থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নগর ও জেলা মোটামুটি শান্ত ছিল। কিন্তু স¤প্রতি আবারও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন