শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাঁশশিল্পে সচল শতাধিক পরিবার

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : বাঁশের তৈরী বিভিন্ন পন্য তৈরী ও বাজারজাত করে জীবিকা চালাচ্ছেন রূপগঞ্জের শতাধিক পরিবার। এসব তৈরী করা পন্যের রয়েছে বাহারী নাম। যার মধ্যে রয়েছে হাজি, ঢালা, কুলা, চালনী,পালি বা পলো, পানঢালা, মাছ ধরার ঝুঁড়ি, বাঁশের ছাটি, শিশুর খেলনা,কলমদানী,ফুলদানী, বাঁশি,সানের(তরকারী) কাঠি, কিংবা গৃহ সাজাবার জন্য হরেক রকম আসবাব পত্র। এসবের মধ্যে রয়েছে খাবারের মিটসেফ, মোড়া, পাথি,আলনা ইত্যাদি জাতীয় বিভিন্ন পণ্য। বাশেঁর তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক পণ্য গ্রামের আশপাশের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশপ্রতি ১০০-৫০০ টাকায় ক্রয় করে কোন প্রকার সয়ংক্রিয় যন্ত্র ছাড়াই নিজ হাতে তৈরী করে স্থানীয় ও শহরের বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এ অঞ্চলের বাঁশশিল্পের সাথে জড়িত প্রায় শতাধিক পরিবার।
রূপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গীর,গুতিয়াব,মধূখালী, নাওড়া, মাসাবো, এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ বৈচিত্র্যময় বাঁশ শিল্প পেশার কারিগর। বাঁশ শিল্পের হরেক রকম পণ্য তৈরি করে এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের এখনো বেশ কিছু পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে মধূখালী এলাকার আফজলের(৪৫)সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমরা কারো থেকে প্রশিক্ষণ নেই নাই। তবে আমাদের বাপ-দাদারা এই পেশার সাথে থাকায় তাদের কাছ থেকেই শিখে নিয়েছি বিভিন্ন পন্য তৈরীর কৌশল। আমরাও আমাদের পরিবারের অন্যজনদের শিখাচ্ছি। কেমন আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের বাড়ি থেকে বাঁশ ক্রয় করলে প্রতি বাঁশে খরচ পড়ে ১০০-১৫০টাকা। এই বাঁশ কাচা অবস্থায়ই বিভিন্ন পন্য তৈরী করতে হয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা শ্রম দেয় বলে বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে একটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ৬০০ টাকার পন্য তৈরী করা যায়। এতে ২/১দিন সময় লাগলেও মাস শেষে গড়ে ২০/৩০টি বাঁশ কাজে লাগিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করা যায়।
উপজেলার মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, তারাব ও গোলাকান্দাইল হাটে বাঁেশর তৈরি পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। বণিক বার্তার সাথে কথা হয় শীতর চন্দ্র দাস (৩৪) সাথে। প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার টাকার বাশেঁর পন্য বিক্রি করে থাকেন তিনি। তা থেকে ১ হাজার টাকা তার লাভ হয়। গুতিয়াব এলাকার তোফাজ্জল মিয়া (৩০), সুরশী রানী (৩৫), কালাই লাল (৪৫), সুরবালা (৪২), কৃষ্ণ কান্ত (৩৩) বাঁশ শিল্পের কাজ করে থাকেন। প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে তাদের বাড়তি ব্যস্ততা। কেউ বাংলা বছরের শেষের মাস গুলোতে বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকে উপজেলার বিভিন্ন মেলায় বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করার আশায়। এসব পন্যের অর্র্ডার পেয়ে পাইকারদের চাহিদা অনুসারে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় বলে জানান তারা। ব্রাহ্মনখালী এলাকার সুলেখা রানী(৪০) মোড়া তৈরি করে সংসার চালায় তিনি।মোড়া তৈরি ও বিক্রির পর প্রতি মাসে উপার্জন করেন ৪ হাজার টাকা। স্বামী অমল ব্যাপারী এ কাজে সুলেখাকে সহযোগিতা করেন। গ্রাম থেকে বাশঁ ক্রয় করে থাকেন। বাঁশ ফাড়িয়া শলা করে পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয়। ১০ থেকে ১২ দিন পানিতে ভিজিয়ি রাখার পর শলা করা হয়। শলার সুতলী প্লাস্টিক এবং রিকসার অব্যবহৃত টায়ার দিয়ে মোড়া তৈরি করে। ছোট, মধ্য ও বড় তিন ধরনরে মোড়া। ছোট মোড়া ৮০ টাকা, মধ্য মোড়া ১২০ টাকা, এবং বড় মোড়া ১৫০ টাকা। প্রতি মোড়া বিক্রি করলে ৫০ থেকে ৭০ টাকা মজুরী বাবদ লাভ হয়। ওই লাভ দিয়ে সুলেখার সংসার চলে।তারাব ব্রীজ এলাকায় বাবার বাড়ি থেকে মেড়া তৈরি কাজ শিখে সুলেখা রানী। লেখাপড়া করেনি, তবে স্বাক্ষর দিতে পারে। ৩ মেয়ে তার শিখা রানী ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। শিমা রানী ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এবং উমা বয়স ৫ বছর। মোড়া তৈরি করার জন্য গ্রামীন ব্যাংক থেকে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। সুলেখা রানী তৈরি বাঁশ শিল্পের পণ্য দেখা দেখি তার প্রতিবেশী তুলসী রানী মোড়া তৈরি করেন। সে প্রতি মাসে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন।
জানা যায়, বাঁশ একটি ঘাস জাতীয় বৃক্ষ । এ বাঁশ মানুষের বিভিন্ন কাজে লাগে। বাঁশ ঝাড় গ্রাম এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে আছে। গ্রামাঞ্চলে তিন ধরনের বাইনি বাঁশ, নলী বাঁশ ও বররা বাশ রয়েছে। বাইনি ও বররা বাঁশ গৃহ কাজে ব্যবহার করা হয়। নলী দিয়ে গ্রামের এক ধরনের মানুষ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। তার মধ্যে হাজি, ঢালা কুলা, পালি, পানঢালা, মাছ ধরার ঝুড়ি। প্রতিটি ঢালা ৪০ টাকা, খেচা ৬০ টাকা, ঝুড়ি ১০০ টাকা এবং পানঢালা ৪০ টাকা বিক্রি করা হয়। কুলা ও পালির চাহিদা বার মাস। প্রতিটি কুলা ৯০ টাকা, এবং পালি ৪০ টাকা বিক্রি করা হয়।
বাশঁ শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, স্থানীয় কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণদিয়ে সহায়তা করছেন । তবে বাশঁ শিল্প নিয়ে গড়ে ওঠতে পারে সম্ভাবনাময় একটি ক্ষুদ্র শিল্প। প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সাহায্য। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাঁশ শিল্প শো-রুম নির্মাণ সহ প্রতিবছর বাঁশ শিল্পের মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। বেসরকারি সংস্থা এ শিল্পকে নিয়ে কাজ করতে পারে। পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহৃত পণ্য ও গৃহ সাজাবার পণ্য তৈরি করে দেশ বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যায়। ফলে গ্রামাঞ্চলে বেকারের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং সংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন