এ.জেড.এম শামসুল আলম : পৃথিবীতে মানব জাতি সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ছিলেন হযরত আদম (আ:) ও হযরত হাওয়া (রা:)। তাঁদের সন্তানদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট মানব ছিলেন কারা? অবশ্যই নবী-রাসূলগণ। তাঁরা ছিলেন তাঁদের নিজ নিজ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ট মানব। কোনো যুগের সেরা আদম সন্তানের ওপরই আল্লাহ তায়ালা নবুওয়াতের এবং রিসালতের সম্মান ও দায়িত্ব অর্পণ করেন। নবী ও রাসূলগণ যেহেতু ছিলেন মানব জাতির সেরা, তাদের আমলও ছিল সর্বোত্তম।
এই পৃথিবীতে নবী-রাসূলদের আমল, অবদান এবং ভূমিকা কি ছিল? অন্য সব মানুষের মতো তাঁদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা ছিল। জীবনসঙ্গী, পোশাক-পরিচ্ছদ, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজন তাদের ছিল। এসব প্রয়োজন পরিপূর্ণ করতে তাদের কিছু সময় ব্যয় হতো। যে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সৃষ্টি করেছেন, সেই স্রষ্টার যিকির-আজকার তাদেরকে অবশ্যই করতে হতো।
কৃতজ্ঞতায় আল্লাহ তায়ালার নিকট নবী-রাসূলগণকে মাথা নত করতে হতো। ইবাদত করতে হতো। এ ধরনের আমল ছাড়া নবী-রাসূলদের প্রধান কাজই ছিল তাবলীগ এবং দাওয়াহ, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার দ্বীন প্রচার এবং দ্বীনের দিকে আহŸান। ঐ আমলগুলো ছিল মানব জাতির কার্যের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম কার্যক্রম।
আমাদের অনেকের পক্ষে সর্বোত্তম মানব হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যে কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সর্বোত্তম কাজে অন্তত শরিক হওয়া সম্ভব এবং অতি সহজ। আর এ কাজ হলো দ্বীনের তাবলীগ (প্রচার) এবং দ্বীন কবুলের দিকে দাওয়াহ (আহŸান)।
নবুওয়াতী জিন্দেগীর দায়িত্ব
হযরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তাঁর পরে আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার বাণী আল্লাহর বান্দার নিকট প্রেরিত হতো। তাঁর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে নবুওয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু, আল্লাহর বান্দার সঠিক পথের দিশার জন্য আল্লাহর বাণীর প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়নি। মানুষের ময়দানে তাবলীগ এবং দাওয়াহর প্রয়োজন ছিল, আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নবীগণ অর্থাৎ মানব জাতির নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী বাহকদের মধ্যে যারা শুধু বাণী নয়, বরং যবুর, তাওরাত, ইঞ্জিল এবং আল-কুরআনের ন্যায় আসমানি কিতাব আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে পেয়েছেন তাদেরকে রাসূল বলা হয়। সকল রাসূল ছিলেন নবী। কিন্তু সকল নবী রাসূল ছিলেন না।
নবুওয়াতের উত্তরাধিকার
পরিবার, বংশধর, অনুসারীদের জন্য রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা:) কোনো অর্থ-বিত্ত সম্পদ-সম্পত্তি রেখে যাননি। নবীদের বিত্ত-সম্পত্তির উত্তরাধিকার তাদের কোনো উত্তরাধিকারী পায় না। নবীগণ যে সম্পদ রেখে যান, তা হলো তাদের প্রচারিত আদর্শ। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর অনুসারীদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলোÑ তাঁর প্রচারিত আদর্শ সংরক্ষণ করা, অনুসরণ করা, সম্প্রচার করা এবং রাসূলের সুন্নাহর দিকে মানুষকে আহŸান করা, দাওয়াত দেয়া।
দাওয়াহ শব্দের অপব্যাখ্যা
আজকাল দাওয়াহ শব্দের আসল অর্থই আমরা বিকৃত করে ফেলেছি। এখন আমরা দাওয়াহ বা দাওয়াত বলতে বুঝে থাকি- খাওয়ার জন্যে দাওয়াত, ভূরি ভোজন ও পেট পূজার আহŸান। নবুওয়াত এবং রিসালত-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মুবারক শব্দ ও আমলের কী করুণ এবং নির্মম অপব্যাখ্যা !
নবীদের উত্তরাধিকারী উম্মাহ
রাসূলুল্লাহ (সা:) মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া খেজুর বাগান ফেদাক এবং অন্য সম্পত্তি প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) রাষ্ট্রীয় বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। খাতুনে জান্নাত ফাতিমা (রা.) পিতার ফেদাক বাগানটি উত্তরাধিকারী হিসেবে দাবি করেছিলেন। যেহেতু নবীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বিশেষ কেউ হয় না, তাই হযরত আবু বকর (রা:) নবী কন্যা ফাতিমাকে (রা.) তা উত্তরাধিকার হিসেবে প্রদান করেননি। বরং তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থের ব্যবস্থা বায়তুল মাল থেকে করেছিলেন।
নবীওয়ালা আমলের উত্তরাধিকার
নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এর অর্থ কি এই যে, দুনিয়ার সব মানুষই কবুল করে সঠিক জীবন ব্যবস্থার সন্ধান পেয়ে গেছেন? সকলেরই আমল সঠিক হয়ে গেছে? সকলেই সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরলপথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন? নবীগণ যে কাজ করতেন ঐ কাজের আর কি কোনো প্রয়োজন নেই? অবশ্যই আছে। বরং অতীতের থেকে অনেক বেশি আছে।
নবুওয়াতের দ্বার বন্ধ হয়ে যাবার পর নবী (সা:) যে ধরনের কাজ করতেন, ঐ ধরনের নবীওয়ালা কাজের প্রয়োজন রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বরং বেড়ে গেছে। নবীদের অনুসৃত তাবলীগ (প্রচার) এবং দাওয়াহর (আহŸান) কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ কাজের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো উলামা-উল-মুকাররামুনের ওপর। তাঁদের জন্য এটা ফরজ। কারণ, তাঁরাই হলেন নবীদের প্রধান ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী।
পরলোকগত পিতার দায়িত্ব কে পালন করে?
পরিবারের প্রধান হলেন পিতা। মৃত্যুর পর তিনি আর ফিরে আসেন না এবং উত্তরাধিকারী ভ্রাতাদের মধ্যে কেউ পিতা হয়ে যান না। সন্তানেরা সারা জীবনের জন্য পিতৃহারা হন। কিন্তু পিতা যে দায়িত্ব পালন করতেন তা চলতেই থাকবে। এ দায়িত্বের ভার অন্যরা গ্রহণ করেন। মা অথবা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অথবা যোগ্যতম ভ্রাতা বা ভগ্নি পরিবারটি সঠিকভাবে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যতদিন সম্ভব সকলকে একত্রিত রাখেন। কনিষ্ঠ বা দুর্বলগণ তাদের নিজেদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে না পারা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ অথবা যোগ্যতরগণ কনিষ্ঠদের দেখাশোনা করেন।
যদি কোনো ভাই ভগ্নির পক্ষে সংসারের দেখাশোনা এবং দায়িত্ব সকলের সন্তোষজনকভাবে বহন করা সম্ভব না হয় অথবা অন্যেরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করেÑ তখন সংসারের দায়িত্ব সন্তানদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সংসার ভাগ হয়। সম্পত্তি থাকলে তাও ভাগ হয়। পিতা সংসারে যে দায়িত্ব পালন করতেন ঐ দায়িত্ব ততটুকু সন্তোষজনক না হলেও প্রতিপালিত হয়। কাজ বন্ধ হযে যায় না। তবে দায়িত্ব পালনকারী পরিবর্তিত হয় বা তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের দায়িত্ব
ধরুন কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় বেশ কিছু সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। একটি বৃহৎ বাড়ি নির্মাণ করেছেন। হঠাৎ তিনি এক কন্যা এবং দু’পুত্র রেখে মারা গেলেন। পুত্র-কন্যারা সাবালক। মৃত ব্যক্তি র সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি দেখাশোনা করা কার দায়িত্ব? এটা কি তার সন্তানদের দায়িত্ব নয়? এ সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় হয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীগণ কি প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের অকর্মণ্য, অপদার্থ বা কুলাঙ্গার বলে ধিক্কার দেবেন না. একজন কষ্ট করে বিরাট সম্পত্তি অর্জন করলেন অথচ অকর্মণ্য সন্তানেরা তা সংরক্ষণ ও ভোগ করতেও পারল না।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা:) সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। এর মান সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কি তাঁর অনুসারীদের দায়িত্ব নয়?
নবীদের প্রতি অনুসারীদের দায়িত্ব
পুত্রদের প্রতি রয়েছে পিতার দায়িত্ব। স্বামীর রয়েছে স্ত্রীর প্রতি, চিকিৎসকের দায়িত্ব রয়েছে রোগীদের প্রতি। ক্লায়েন্ট এবং গ্রাহকদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখেন ব্যবসায়ী এবং দোকানদার। কারণ গ্রাহকদের প্রতি ব্যবসায়ীর দায়িত্ব আছে। ছাত্রদের স্বার্থ শিক্ষক উপেক্ষা করতে পারেন না। ছাত্রদের পরীক্ষায় সফলকাম করা এবং সফলকাম হওয়ার জন্য শিক্ষকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে। প্রশাসক সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতি সচেতন। মজলুমের প্রতি রয়েছে বিচারকের দায়িত্ব। মুসলিম জনগণের কোনো দায়িত্ব কি নেই তাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর প্রচারিত আদর্শের প্রতি এবং মানব জাতির পিতা হযরত আদমের ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি?
সামাজিক দায়িত
জনগণের সম্পর্ক রয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। এ সম্পর্কের ভিত্তি হলো বংশধারা, আত্মীয়তা, সামাজিকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। একই সমাজে বাস করলে নাগরিকদের পরস্পরের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব এবং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। একের ওপর অন্যের অধিকার জন্মে এবং দায়িত্ব সৃষ্টি হয়।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর কোনো হক অথবা অধিকার কি তাঁর অনুসারীদের ওপর নেই? তাঁর প্রতি আমাদের কি কোনো কর্তব্য নেই? তাঁর থেকে আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার কি কিছুই নেই? আল্লাহর দ্বীন পাওয়ার পর বিশ্বনবী (সা:) প্রতি আমাদের নির্ভরতা এবং প্রয়োজনীয়তা কি শেষ হয়ে গেছে? আমরা কি আমাদের প্রিয় নবীর কাছে কিছুই চাই না?
নবী রাসূলের প্রতি উম্মাহর দায়িত্ব
যদি রাসূলের (সা:) কাছে আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার কিছু থাকে, তবে তাঁর প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও থাকা স্বাভাবিক। আমাদের মূল্যবান সময়ের অল্প কিছু অংশকে আমরা কি এমন কাজে ব্যয় করতে পারি নাÑ যে কাজের জন্য মহানবী (সা:) ধরার ধুলায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি কি মূলত আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য প্রেরিত হননি?
প্রিয় নবীর প্রিয় কাজ
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর নিকট যে কাজ সবচেয়ে প্রিয় ছিল, ঐ কাজ করার সময় আমাদের হয় না। আমাদের অফিস আছে, ব্যবসা আছে, শিল্প-বাণিজ্য আছে, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজন আছে। প্রিয় নবীর সবচেয়ে প্রিয় নবুওয়াতি আমলের দায়িত্ব আছেÑ যদি আমরা কিয়ামতের শেষ বিচার দিবসে তার মুখাপেক্ষী হতে চাই এবং নির্ভরশীল তাঁর শাফায়াতে প্রত্যাশা আমাদের থাকে।
প্রাথমিক কাজ এবং বুনিয়াদি কর্ম
তাবলীগ (প্রচার) এবং দাওয়াহ (আহŸান) হলো একজন মুসলিমের প্রাথমিক এবং বুনিয়াদি কাজ। মিরাজের রজনীতে সালাতের (নামাজের) আদেশ হয়। মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে। নবুওয়াতের প্রথম সাড়ে এগারো বছর পর্যন্ত আল্লাহর জিকির, তাসবীহ, তাহলিল ইত্যাদি ছিল। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতির সালাত বা নামাজ ছিল না। আমরা যেভাবে নামাজ পড়ি নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে মিরাজের রজনীর পূর্বে তা ছিল না। কিন্তু নবুওয়াতের শুরু হতেই ছিল তাবলীগ এবং দাওয়াহর মৌলিক আমল।
মৌলিক সুন্নাহ
আল্লাহর রাসূলের একটি মৌলিক সুন্নাহ বা কর্মপদ্ধতি ছিল। অগ্রাধিকারভিত্তিক ফরজ কাজের সময় তিনি নফল কাজ করতেন না। নফল মুস্তাহাব পালন তিনি করতেন। তবে নিয়মিত ফরজ ও ওয়াজিবের পর।
তাবলীগ এবং দাওয়াহ ছিল ইসলাম কবুলের পরেই সাহাবীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারমূলক কাজ। ইসলাম কবুলের পর একজন মুসলিমের একটি প্রাথমিক কাজ হলো যা তিনি জেনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন ঐ পথের শাহাদাত (ঘোষণা) দেয়া এবং অন্যকে ঐ পথে আহŸান (দাওয়াহ) করা। দাওয়াহ ঈমানকে মজবুত করে।
মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ
তাবলীগ (প্রচার) এবং দাওয়াহ (আহŸান) ছাড়া মুসলিম সমাজ হতো না। তাবলীগ এবং দাওয়াহর মাধ্যমেই মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়। আজকাল অবশ্য জন্মগত কারণে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। মহানবী (সা:) যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন. তিনি নির্দেশিত হয়েছিলেন মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণে। এককভাবে দ্বীনের অনুসরণ কষ্টসাধ্য। প্রাথমিক মুসলিমদের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার সত্তে¡ও দ্বীনের বাণী প্রচারে এবং মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আল্লাহর রাসূল (সা:) নিরুৎসাহী ছিলেন না।
পাশ্চাত্যের মোসাহেব এবং চামচা
বর্তমান মুসলিম সমাজের বহু সমস্যা আছে। একটি হলো, আমরা প্রায় সকলেই পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুসারী হাস্যস্পদ মোসাহেব এবং ‘চামচায়’ পরিণত হয়েছি। সকলেই যদি মোসাহেব বা ক্লাউন হই, স্বাভাবিক আচরণ কষ্টকর।
অগ্রাধিকারমূলক দাওয়াহ
তাবলীগ এবং দাওয়াহ এর ফলে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিশ্বাসী মুসলিমদের একটি সমাজ তৈরি হয়। তাদের মধ্যে ইসলামী আখলাক ও আদর্শের প্রচার এবং আমলকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলো অগ্রাধিকারমূলক প্রাথমিক কাজ।
ওয়াজ মাহফিল, সভা, সম্মেলন, সেমিনার অনুষ্ঠান করা তাবলীগ এবং দাওয়াহর উত্তম পদ্ধতি। ইসলামে প্রাথমিক যুগে বর্তমান কালের ওয়াজ মাহফিল সেমিনার সম্মেলন তাবলীগের ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া ছিল না। সেমিনার ওয়ার্কশপে এবং সম্মেলনেও উৎসাহ সহকারে যোগদানের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক মুসলিম মক্কী সমাজে ছিল না।
দাওয়াহ একটি নবীওয়ালা তরিকা
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) কাবা ঘরে বা মদীনায় মসজিদে এ আশায় বসে থাকতেন না যে, লোকজন দলে দলে আগমন করে তাঁর কাছে ইসলামের বায়য়াত নেবে। রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রাথমিক সাহাবীগণ ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতেন।
গাসত বা ঝাউলাহ
ইসলামের বাণী বহন করে বাড়িতে বাড়িতে গাসত বা ঝাউলাতে গমনই ছিল ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (সা:) অবশ্যই বলেছেন, ‘এক সকাল অথবা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় চলা দুনিয়া এবং আসমানÑ এই দুয়ের মাঝখানে যা আছে সব কিছুর চেয়ে উত্তম।’ তদুপরি রাসূলুল্লাহ (সা:) কি বলেননিÑ ‘আমার একটি বাক্যও যদি তোমাদের জানা থাকে, তা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দাও’?
নবীওয়ালা আমল
হযরত আবু বকর (রা.) ইসলাম কবুল করার পর আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনÑ (ইসলাম কবুলের পর) এখন আমার কী কাজ? রাসূলুল্লহ (সা:) জওয়াবে বলেছিলেন ‘আমার যে কাজ তোমারও সেই কাজ।’
হাজার কাজের সময়
আমাদের জীবনের গাড়ি দখল করে নিয়েছেন আমাদের ভাই-বোন, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, দারা-পুত্র-কন্যা। আরো আছে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত জন। সব কিছুর ওপরে আছে চাকরি, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা। প্রত্যেক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সময় প্রত্যেকের হয়ে যায়।
জীবনের রেলগাড়ি
মৃত্যুর দিকে প্রতিনিয়ত অগ্রসরমান আমাদের জীবনের রেলগাড়িতে রাসূলুল্লাহ (সা:) এবং তার জীবনব্যাপী প্রিয় সাধনার জন্য কিছু স্থান এবং কিছু সময় কি আমরা করে নিতে পারি না?
নবীওয়ালা আমলে সময় দান
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রতিদিন তাবলীগ এবং দাওয়াহর (অমুসলিমদেরকে দ্বীনের দিকে আহ্বান) যে কাজ করেছেন, এ কাজের জন্য কিছু সময় কি আমাদের হবে না? আসুন, আমরা চেষ্টা করি প্রতিদিনই আল্লাহর দেয়া চব্বিশ ঘণ্টা সময় থেকে অন্তত আড়াই ঘণ্টা সময় আল্লাহর প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা:) যে ধরনের কাজ করতেন ঐ কাজের জন্য আলাদা করে রাখি। যে কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীদের এবং নবীর অনুসারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন- ঐ কাজে আমরাও আমাদের জীবনের কিছু অংশ ব্যয় করি। আমীন।
লেখক : সাবেক সচিব, গবেষক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন