মাহমুদ শাহ কোরেশী : ‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ!’ আহা, সত্তর কি আশি বছর আগে কাজী নজরুল ইসলাম লিখলেন, আর আব্বাস উদ্দীন গাইলেন এই অনন্য গান, বলা চলে বাংলা ভাষায় যেন ঈদের জাতীয় সঙ্গীত, সর্বজনপ্রিয় অনবদ্য আনন্দ গীত! আর এতে আমাদের মনে ও মানসের চিরন্তন অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটল- যত কিছুই আসুক না কেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমরা খুশির ঈদকে বরণ করে নেবো। আমাদের পারিপার্শ্বিকতাকে উৎসবমন্ডিত করে তুলব।
অথচ সমগ্র বিশ্বে আজ কী চলছে? বিলাত-মার্কিন মুলুকে সন্ত্রাস-অগ্নিকান্ড, ধনী আরব রাষ্ট্রসমূহে অকারণে বিবাদ-বিসম্বাদের মহড়া, নিজেদের অর্থসম্পদের বিরাট অংশ মার্কিনিদের হাতে তুলে দিয়ে, তাদের অস্ত্রশস্ত্রে আর যুদ্ধবিমানে নিজেদের সজ্জিত করে, তাদের উপদেশ-নির্দেশে নিজেদের মনোমালিন্য বাড়িয়ে তুলছে। কিসের নেশায়? কোন প্রত্যাশায়? স্বদেশে পাহাড়ধস, অসময় অজ¯্র বৃষ্টিপাত, রাস্তাঘাটে পানির প্রকোপ, চার দিকে মানুষের হাহাকার, দুর্গন্ধভরা সড়ক আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এর মধ্যে অনেক অনেক হত্যাকান্ড, হামলা চলছে তো চলছেই। বিরামহীন।
তবু বাসে, ট্রেনে, জাহাজে, এমনকি বিমানে দেশের বাড়ি যাবার, নিকটত্মীয়ের কাছাকাছি হবার কী আকুতি! কী মারাত্মক দৌড়-ঝাঁপ আর ঝাঁকির কবলে আত্মোৎসর্গ করে চলেছে আমার স্বদেশবাসী! আমরা কি কখনো এসব অশুভ পরিকল্পনা থেকে রেহাই পাব না? সুস্থ, সুষ্ঠু মন-মানসিকতায় নিজের সঙ্গে কাছাকাছির আত্মীয়-স্বজনের নৈকট্যের ব্যবস্থা করে নেবো না?
ঈদকে খুশির ঈদ করার জন্য আমাদের প্রথম প্রয়োজন প্রতিবেশীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা। আশপাশের অজস্র দুস্থ-অসচ্ছল মানুষের প্রতি নজর দেয়া- তাহলেই তো ঈদ আমাদের কাছে আনন্দোচ্ছ¡ল হয়ে আসবে। নতুন জামাকাপড়, শাড়ি-গয়না, বিচিত্র উপহার দ্রব্য, রেস্তোরাঁর মজাদার খাদ্য বস্তুই কি শুধু ঈদের আনন্দের উপকরণ? আমরা কি মনুষ্যত্ববর্জিত নরপশুরূপে নিজেদের সমাজে জাহির করে সীমাহীন উল্লাসে ফেটে পড়ব? হয়তো বা না, হয়তো কেন নিশ্চয়ই না। আমি মনে করি, সমাজের বেশিরভাগ মানুষ আমার মতোই ভাবেন : আমরা বেশি মানুষের সুখ কামনা করি, ‘মানবতা’ শীর্ষক আপ্ত কথায় কখনো বিস্মৃত হতে চাই না। তাই আমরা আমাদের সিয়াম সাধনার পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছ থেকে একান্ত অনির্বাচনীয় খুশির ঈদ কামনা করি।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক
বাংলা একাডেমি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন