শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

পরিকল্পিত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ভাবনা

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার স্বপ্নকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ স্বপ্নকল্পের বাস্তবায়নে ওই সময়ের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়াকে তার সরকার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াও সম্ভব হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রায় ৫৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগসহ ১০টি জেলার ৫১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫১টি প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সারাদেশকে আনা হবে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অধীনে। যে বরিশাল কখনো রেল দেখেনি সেখানেও রেল যাবে, টাঙ্গাইলবাসীকেও রেলসেবার আওতায় আনা হবে। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর পর্যন্ত স্থাপিত হবে রেল যোগাযোগ। বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সরকার যে বিশেষ নজর দিচ্ছে নানামুখী উদ্যোগ তারই প্রমাণ।
আজকের যুগ প্রযুক্তির যুগ। উন্নয়নের জন্য চাই প্রযুক্তিগত সুবিধা। এ জন্য চাই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ শুধু অন্ধকার কাটাতেই সাহায্য করে নাÑউৎপাদনের ক্ষেত্রে ইন্ধন শক্তি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়াস সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগও তাৎপর্যের দাবিদার। বিশেষত চার দশক ধরে উপেক্ষিত রেল যোগাযোগের প্রতি সরকারের সুনজরকে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করা যায়।  আমরা আশা করব, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের গতি বাড়াতে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি সহজলব্ধ করারও উদ্যোগ নেয়া হবে।  সরকারের সব উন্নয়ন প্রকল্প যাতে সময় মতো বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়েও নজর দেয়া দরকার। সময়ক্ষেপণ প্রকল্প ব্যয় যেমন বাড়ায় তেমনি উন্নয়নকেও বিলম্বিত করে, যা এড়ানো সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। একটি দেশের শক্তিশালী কাঠামো নির্ভর করে সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত কতটা মজবুত তার ওপর। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে হলে উন্নয়নমূলক সেক্টরগুলো যাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাগ্রে। কিন্তু আমাদের দেশে উন্নয়নমূলক খাতগুলোই বেশি অবহেলিত এবং প্রতিবন্ধকতার শিকার। আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদ- আর অর্থনীতি হলো একটি দেশের চালিকাশক্তি। এগুলো যদি আন্তরিকতার অভাবে অব্যবস্থাপনার কারণে স্থবির হয়ে পড়ে তাহলে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে। চাওয়ার মধ্যে দৃঢ়তা থাকতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আশার কথা হলো, একুশ শতকে আমাদের এই দেশটিকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। তবে এই চেষ্টার পেছনে থাকতে হবে আন্তরিকতা। অধিক গুরুত্ব দিতে হবে কৃষির প্রতি, যেহেতু আমাদের দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শুধু তা-ই নয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে পোশাক খাত ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বা জনশক্তি রফতানি। খেয়াল রাখতে হবে, উন্নয়নমূলক কর্মকা- থেকে সমাজ, দেশ, জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।
দেশের উন্নয়নে পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দেশের একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের সহজ যোগাযোগ যেমন প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার, ঠিক তেমনি রাজধানীসহ প্রধান প্রধান নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের সহজ যোগাযোগও সমান গুরুত্ব পাওয়ার দাবিদার। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়টিও জরুরি। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। দেশের স্বার্থে উন্নয়ন কাম্য হলেও খাপছাড়া উন্নয়ন যাতে বোঝা না হয়ে দাঁড়ায় সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন