বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে উপচে পড়া ভিড়

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে : ঈদে আনন্দ আরো বাড়িয়ে তুলতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ঈদের দিন বন্ধ থাকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। তাই পরদিন থেকে প্রচন্ড ভিড় হতে থাকে এ রকম অবস্থা থাকে প্রায় সপ্তাহ জুড়েই। আর অতিরিক্ত মানুষের চাপে সাটুরিয়া বালিয়াটি সড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলো ভাড়া দ্বিগুন করেছে। আগে সাটুরিয়া থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির ভাড়া ১০ টাকা থাকলেও কয়েক দিন ধরে তা ২০ টাকা করে নিচ্ছে। মানিকগঞ্জের যে কয়েকটি পর্যটক স্পট আছে তার মধ্যে অন্যতম ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের জমিদারবাড়ি হচ্ছে সাটুরিয়ার বালিয়াটী জমিদার বাড়ি। এ জমিদার বাড়িতে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক দর্শনার্থী এলেও পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদে প্রচন্ড ভিড় পড়ে যায়। এই তিন সময় ৩-৪ দিনে কয়েক লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আদায় হয় জমিদার বাড়িতে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করে।
ঢাকা থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বালিয়াটির তৎকালীন জমিদার রাজচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভৈরব রায় চৌধুরী, ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী ও ভগবান রায় চৌধুরী। এরা চার ভাই মিলে ৫.৯৮ একর জমির ওপর এ জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করে। শৈল্পিক কারুকার্য খচিত এ বাড়ির ভেতরে দ্বিতীয় তলায় রয়েছে অপরূপ রঙ মহল। বালিয়াটি জমিদারবাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল আকৃতির একতলা ভবন। ওই ভবনে থাকতো জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনী। একতলা ভবনের মূল ফটকের ওপরে রয়েছে সিংহদ্বার সহ চারটি তোরণ। জমিদার পরিবারের সদস্যদের গোসল ও পূজা জল সংগ্রহের জন্য জমিদার বাড়ির ভেতরে সাত ঘাটলা পুকুর তৈরি করা হয়। এই পুকুরের এক পাশ দিয়ে করা হয় সুড়ঙ্গপথ। শক্রর আক্রমণ থেকে রক্ষা বাঁচতে এ সুরঙ্গপথে তৈরি করা হয়।
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বালিয়াটী জমিদার বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা ও দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় সব শ্রেণিপেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছে জমিদার বাড়িতে। হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের এ জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ির গেটে প্রচন্ড ভিড়। টিকেট কেটে লাইন ধরে জমিদার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে লোকজন। ভেতরে গিয়ে মূল ৪টি ভবনের সামনেই প্রচুর লোকজনের সমাগম। সামনের ফুলের বাগানে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ছবি তোলায় ব্যস্ততা। পুরাতন ভবনের সামনে সেলফি তুলতে ব্যস্ত দেখা গেল কয়েক তরুণকে। আর পেছনের সাত ঘাটলা বিশিষ্ট পুকুর পাড়ে বসে আছে কয়েকশ মানুষ।
সাটুরিয়ার পাড়াগ্রামের আ: রশিদ জানায়, প্রতিবছর ঈদে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ঘুরতে আসি। বহুবার এসেছি তবু প্রতি ঈদে জমিদার বাড়িতে আমরা বন্ধুবান্ধবরা দল বেধে আসি। ধামরাই থেকে আসা ওয়াসিম জানায়, এবারই প্রথম বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে এসেছি। অনেকের কাছে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির গল্প শুনেছি। ঈদে গাড়ি ভাড়া করে আমরা অনেক বন্ধু এক সাথে জমিদার বাড়িটি দেখতে অসলাম। বালিয়াটির মুন্সিচর গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মো: ফারুক আহম্মেদ রনি জানায়, প্রতি ঈদে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দেখতে আসে। এমন অনেক দর্শনাথী আছে যারা একাধিক বার করে এ জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসে।
সাটুরিয়া বালিয়াটি রুটে সিএনজি চালক লাবু মিয়া জানায়, ঈদের পরের কয়েক দিন অনেক মানুষ বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় সাটুরিয়া বালিয়াটির ভাড়া ১০ টাকায় জায়গায় ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যা আরো ৩/৪ দিন পযন্ত থাকবে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির বুকিং ক্লার্ক মো. মিজানুর রহমান জানায়, বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর টিকেটের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য টিকেটের মূল্য ২০ টাকা, বাচ্চাদের জন্য ৫ টাকা, সার্ক ভুক্তদেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা আর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা মূল্য দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। অন্য সময় একজন ব্যক্তি টিকিট বিক্রি করলেও ঈদের সময় আমরা ২/৩ জন একসাথে টিকিট বিক্রি করেও কুল পাচ্ছি না। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির দায়িত্বে থাকা গেস্ট কিলন টেকনিশিয়ান সঞ্জয় বড়ুয়া জানায়, জমিদার বাড়িটি দেখতে সারা বছর যে পরিমান মানুষ আসে তার থেকে কয়েক গুন বেশি মানুষ আসে ঈদের সময়। ঈদে এতো বেশি দর্শনাথী আসে যে তাদের চাপ সামলাতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়। অতিরিক্ত দশনাথীর চাপ সামাল দিতে আমাদের লোকদের পাশাপাশি আমরা পুলিশের সহযোগীতা নিয়ে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন