মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

১৩ কেজি গমের স্থলে ৯ কেজি নিতে অস্বীকার করায় মেধাবী ছাত্র নূর আলম হাসপাতালে

উলিপুরে ভিজিএফ এর গম বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিজিএফ এর গম ১৩ কেজির পরির্বতে ৯ কেজি নিতে অস্বীকার করায় নুর আলম (২০) নামের এক মেধাবী ছাত্রকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করেছে চেয়ারম্যানের পেটোয়া বাহিনী। বর্তমানে সে উলিপুর হাসপাতালে ১৩নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, রোববার দুপুরে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে।
আহত নুর আলম জানান, আমার মা নুর বানু বেগম(৪৫) অসুস্থ্য থাকায় তার পরিবর্তে আমি রোববার দুপুরে ¯িøপের ভিজিএফ এর গম নিতে যাই। এসময় ১৩ কেজি গমের পরিবর্তে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে ৯ কেজি গম দেয়। আমি ১৩ কেজি গম চাইলে কথা কাটাকাটি বেধে যায়। কথাকাটাকাটির এক পর্যায় গ্রাম পুলিশ মেহেরুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের লোক ফয়জার রহমান (৩২), রাজু মিয়া (৩৫), জহুরুল হক (৩৬) সহ বেশ কয়েকজন আমাকে নির্দয় ভাবে বাঁশের বেত দিয়ে এলোপাথারিভাবে মারধোর করে। এসময় স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় নুর আলম বাদী হয়ে উলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের মা নুর বানু বেগম বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে ছেলেকে পড়াশুনা করাচ্ছি। স্বামী না থাকায় দীর্ঘ ২০বছর ধরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মা-ছেলে বসবাস করে আসছি। পড়াশুনা করা ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় প্রভাবশালীদের হাতে মার খেয়ে আজ আমার সন্তান হাসপাতালে ভর্তি। আমি চেয়ারম্যান ও তার পেটোয়া বাহিনীর বিচার চাই। তিনি জানান, মেধাবী ছাত্র নুর আলম এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় ‘মিজান মেধাবী দেশের মুখ’ এর পক্ষ থেকে নাট্য অভিনেতা আবুল হায়াৎ ও বিপাশা হায়াৎ উলিপুরে এসে তাকে সম্বর্ধিত করে। বর্তমানে নুর আলম কুড়িগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ের পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের অর্নাস প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপার সৃষ্টি হয়েছে।
খবর পেয়ে সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আহত নুর আলমকে উলিপুর হাসপাতালে দেখতে যান এবং চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রতিশ্রæতি দেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুনাইগাছ ইউপি পরিষদে সরেজমিনে দেখাযায়, ভিজিএফ এর গম বিতরণ চলছে। এসময় ৫০ কেজি বস্তায় প্রতি চার জনকে দেয়া হচ্ছে। জব্বার(৫০) বুলবুল আহমেদ(২৫), মাসুদ(২৬), কামরুল(৩০) বলেন, আমাদেরকে ১৩ কেজি গম না দিয়ে ৫০কেজি ওজনের গমের বস্তা দেয়। যাদের চারজন লোক ছিলনা তাদের অনেককেই ৯ থেকে ১১ কেজি করে গম দেয়া হয়। তারা আরো বলেন, ভিজিএফ এর ¯িøপ যাদের পাবার কথা তাদেরকে না দিয়ে চেয়ারম্যান,মেম্বারসহ তাদের লোকজন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে একটি করে ¯িøপ বিক্রি করে পাইকারদের কাছে। সাধারণ উপকারভোগীর চেয়ে পাইকাররাই আসছে গম তুলতে।
এসময় গাবেরতল এলাকার বক্করের ছেলে সাবু মিয়া (১৫) জানান, সে জনৈক পাইকারের দেয়া ¯িøপ নিয়ে গম তুলে দেবার জন্য ৫০টাকা নিয়েছেন। এরকম অনেকেই এ কাজ করছে বলে সে জানায়।
পাইকার মোখলেস প্রায় শতাধিক ভিজিএস ¯িøপ নিয়ে গম তুলতে আসেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পালিয়ে যায়। অপর আরেক পাইকার রহিম সরদার প্রায় ৫০টির বেশি ¯িøপ নিয়ে গম তোলেন। তাকে হাতে নাতে ধরলে তিনি জানান, পরিষদের পাশে দোকানদার মোস্তফার কাছে একটি করে ¯িøপ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা করে কিনে নিয়েছেন। তিনি সেই ¯িøপের গম লোক মাধ্যমে তুলে নিচ্ছেন ৫০টাকার বিনিময়ে। একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের।
রিলিফ অফিসার নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, আমার জানামতে ভিজিএফ এর গম কাউকে কম দেওয়া হয়নি। তবে ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা তিনি স্বীকার করেন।
গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা বলেন, এসময় আমি ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ছিলাম। হইচই শুনে আমি ছাত্তার মেম্বারসহ তাকে উদ্ধার করি। তবে এ ঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনাচার্জ এস.কে আব্দুল্যা আল সাঈদ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন