মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সৈয়দপুরে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে পোলট্রি খামার

বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে লোকসান

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ৯ মার্চ, ২০১৬

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
মুরগির বাচ্চার দাম, খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে পোলট্রি শিল্পে ধস নেমেছে। সে তুলনায় মুরগি ও ডিমের দাম না বাড়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে খামারিদের। ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এখানকার পোলট্রি শিল্প। এতে করে এই শিল্পের সাথে জড়িত মালিক, কর্মচারীরা চরম বিপাকে পড়েছে। বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর শহর ও গ্রাম এলাকায় অধিক লাভের আশায় প্রায় ৬ শতাধিক পোলট্রি শিল্প গড়ে ওঠে। কয়েক বছর মুরগির খামারের ব্যাপক প্রসার লাভ করে। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অতিকষ্টে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। সেখান থেকে প্রতিবছর লাখের মুখ দেখায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকেরা ব্যাপকহারে ঝুঁকে পড়ে মুরগির খামারির ব্যবসায়। অনেকেই নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের দুঃখ- দুর্দশা লাঘবের পাশাপাশি মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এর বাইরেও বাড়ির আঙ্গিনাসহ আনাচে-কানাচে যুবকেরা ছাড়াও মহিলারা ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও গড়ে তোলেন অনেক ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার। প্রথমাস্থায় পোলট্রি শিল্পের উপকরণের দাম কম থাকায় এবং মুরগি ও ডিমের চাহিদার কারণে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে সব ধরনের মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধি, খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়ায় খামারিরা আর কুলাতে পারছেন না। যে খামারি এনজিও ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে পোলট্রি শিল্প গড়ে তুলেছিলেন তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে সেসব খামার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। পোলট্রি শিল্পের মালিকরা জানান, চার বছর আগে একটি লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১৫ টাকা সেটির দাম এখন ৮৫ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৭০ টাকা সোনালী জাতের বাচ্চা ১০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া ১৫ টাকা কেজির রেডিফিড ৪০ টাকা, পোলট্রি খাদ্য তৈরির উপকরণ ভুট্টা ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকা হয়েছে। সয়াবিন প্রতিকেজি ২৬ টাকার স্থলে ৫৫ টাকা, মিটবোন মিল ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর প্রতিবস্তা প্রোটিন মাল্টিসি’র দাম ছিল ১ হাজার ৩শ’ টাকা তা ১ হাজার ৪শ’ টাকা। নিখুনাইয়ের দাম ২ হাজার ৪শ’ টাকা বেড়ে এবছর প্রতিবস্তা ১২ হাজার ৫শ’ টাকা, লাইসিন প্রতিবস্তা ৩ হাজার টাকার স্থলে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনিভাবে ঝিনুক প্রতিবস্তা ৩শ’ টাকার স্থলে বর্তমানে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে বাজারে প্রতিহালি ডিম ৩০/৩২ টাকা ও মুরগি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খামারিরা প্রতিকেজি মুরগি ১১০/১২০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। খামারিরা আরও জানান, প্রতিটি বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিকেজি মুরগিতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ১৪০ টাকা। কিছুদিন আগেও প্রতিকেজি মুরগি ১৫০ হতে ১৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারী বিক্রি হয়েছে। বর্তমান বাজারে একজন খামারিকে প্রতিকেজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে ২৫ হতে ৩০ টাকা। তারা জানান, মুরগির উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা কমে গেছে। সেই সাথে খামারিরা অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এতে করে পোলট্রি শিল্পের মালিকরা অব্যাহত লোকসানের মুখে পড়েছেন। এছাড়া মুরগির রোগ প্রতিরোধ ও ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি ওষুধের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে রাগে ও ক্ষোভে মুরগির খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকে খামার বন্ধ করতে চাইলেও এই বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা তদারকি ও পরামর্শ দিয়ে খামারিদের লাভবান করার চেষ্টা করছেন। খামারিরা নিজেরা ফিড তৈরি খাওয়ালে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন