গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি ৬ ও ৭ জাতের মসুর দেশের মসুর ডালের চাহিদা পূরণ করবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ জমিতে মসুরের আবাদ হচ্ছে সেই পরিমাণ জমিতে এ জাতের মসুরের চাষ সম্প্রসারণ করে মসুর ডালের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে মসুর ডালে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের সাইড কো অর্ডিনেটর নিখিল রঞ্জন মন্ডল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল গবেষণা উপ-কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের সহায়তায় গোপালগঞ্জের কৃষক ৬শ’ বিঘা জমিতে বারি ৬ ও ৭ জাতের মসুর আবাদ করে। প্রতি হেক্টরে কৃষক এ জাতের মসুর ১.৮ টন ফলন পেয়েছে। স্থানীয় জাতের মসুর প্রতি হেক্টরে ৯শ’ কেজি উৎপাদিত হয়। স্থানীয় জাতের তুলনায় এ জাতের মসুর দ্বিগুণ পরিমাণে ফলেছে। গাজীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে সারা বছর প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে। সারাদেশে কৃষক ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে মসুর চাষ করে। উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার মেঃ টন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি ৬ ও ৭ জাতের মসুর চাষ সারাদেশে সম্প্রসারিত করলে বছরে মসুরে উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেঃ টনে উন্নীত হবে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বরফা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বারি ৬ ও ৭ জাতের মসুর আবাদ করে স্থানীয় জাতের তুলনায় দিগুণেরও বেশি ফলন পেয়েছি। স্থানীয় জাতের মসুর আবাদ করে ৮শ’ কেজির উপরে ফলন পাইনি। কিন্তু বারি মসুর চাষ করে হেক্টরে ১.৮ টন ফলন পেয়েছি। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্প প্রশিক্ষণ, সার, বীজ, ছত্রাক নাশক দিয়ে সহায়তা করে এ জাতের মসুর আবাদে উদ্বুদ্ধ করে। প্রথম বছরেই আমি দ্বিগুণের চেয়েও বেশি ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছি। বারি মসুর উৎপাদনেও স্বল্প সময় লাগে। এরপর ওই জমিতে আরো ২টি ফসল করা যায়। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হরলাল মধু বলেন, বারির বিজ্ঞানী কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মসুরে উপযোগিতা যাচাইয়ে গোপালগঞ্জে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। দেশে মসুরের চাহিদা পূরণ ও আমাদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে এ জাত ইঙ্গিত বহন করছে। এটি বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষির জন্য একটি সুসংবাদ। গাজীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এ জাতের মসুর ডালের উদ্ভাবক ড. মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ১শ’ দিনেই এ ডালের ফলন পাওয়া যায়। স্থানীয় জাতের তুলনায় এ জাতের উৎপাদনে সময় কম লাগে। রোগ বালাই সহিষ্ণু, ডালের দানা স্থানীয় জাতের তুলনায় বড়। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ডাল ১.৮ টন উৎপাদিত হয়। এ ডাল দেশের মসুর ডালের চাহিদা পূরণ ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সক্ষম। বারি মসুর আবাদ করে কৃষক দিগুণ ফলন পেয়ে লাভবান হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন