শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কুমিল্লার সোয়া লাখ গ্রাহক ভোগান্তিতে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লোডশেডিং নয় সিস্টেম ত্রুটি

প্রধান প্রকৌশলী এডিএম আবদুল্লাহ বলেন
কুমিল্লা অঞ্চলে সিডিউলভিত্তিক কোনোরকম লোডশেডিং নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায়
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়টি সিরিয়াস
কিছু না। এটি স্থানীয়ভাবে কোনো
সিস্টেমের ত্রুটি হতে পারে
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি ও চাহিদার দিক থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুতের সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হলেও এবারের বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন কমবেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগের লক্ষাধিক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলীর দাবী সিডিউলভিত্তিক কোন লোডশেডিং নেই। তবে স্থানীয়ভাবে সিস্টেম ক্রুটির কারণে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা ঘটছে।
কুমিল্লা শহর ও শহরতলীকে ঘিরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগ কাজ করে থাকে। তারমধ্যে ১ নম্বর বিভাগে আওতায় কুমিল্লা শহরের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে সবধরণের মোট গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার। শহরের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা বিক্রয় ও বিতরণের ২ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে। এখানে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। বিক্রয় ও বিতরণের ৩ নম্বর বিভাগের আওতায় শহরের দক্ষিণাঞ্চলের টমসমব্রীজ থেকে জাঙ্গালিয়া, পদুয়ারবাজার, চৌয়ারা বাজার, সোয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি এলাকা পর্যন্ত মোট গ্রাহক রয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার। এছাড়াও লাকসাম, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রামেও রয়েছে বিউবোর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কার্যক্রম। কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলার গ্রামীণ জনপদে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) কাজ করছে। গ্রামের যেসব এলাকা পল্লী বিদ্যুতের আওতায় সেখানে ‘মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ আসে’ বলে প্রবাদ রয়েছে। অত্যধিক লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুত গ্রাহকদের। বিউবোর আওতায় কুমিল্লার বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগের প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার ফাঁদে পড়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে আগে যেখানে গ্রাহকদের লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হতো সেখানে এবারে তা ভর করেছে বর্ষা মৌসুমে। তবে আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রোজা থাকায় বিদ্যুতের লুকোচুরির ঘটনা ঘটেনি। ঈদের পর থেকে বিউবোর কুমিল্লা অঞ্চলে সকাল, দুপুর, বিকেল, রাতে বিদ্যুৎ চলে যাবার ঘটনা ঘটছে। বিউবো কুমিল্লার এক কর্মকর্তা জানান, কোন কোন এলাকায় চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়ে পড়ায় ট্রান্সফরমার ওভারলোড হয়ে যায়। তখন কারিগরী কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
বিউবো কুমিল্লা অঞ্চলের অধীনে নগরীর জাঙ্গালিয়ায় রয়েছে ১লাখ ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের (কেভি) গ্রীড সাব-স্টেশন। এখান থেকে ৩৩ কেভির কোটবাড়ি, কালিয়াজুড়ি, বালুতুপা, জাঙ্গালিয়া, চৌদ্দগ্রাম, লাকসামের দৌলতগঞ্জ, কসবা/বুড়িচং ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর সাবস্টেশনে ১১ কেভি ফিডারের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার হয়ে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কুমিল্লার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ তিনটিতে ২২টি ফিডার রয়েছে। এসব ফিডারের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার হয়ে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কিন্তু তিনটি বিভাগের প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক এবারের বর্ষা মৌসুম শুরুর মাঝামাঝি সময় থেকে বিদ্যুতের যথাযথ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। প্রতিদিন স্থানীয় বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৭টা, দুপুরে এক থেকে দেড় ঘন্টা, সন্ধ্যা ৭টায়, রাত ৯টায় আবার রাত ১১টার পরও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিদিনই দিনে-রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এক ঘন্টা থেকে দেড় দুই ঘন্টা পরে বিদ্যুৎ আসছে। বাসাবাড়িতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে। ব্যবসায়িদের বেচাবিক্রিতেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পত্রিকা অফিসগুলোর কাজেও বিঘœ ঘটছে। আবার ছাপাখানা, ডিজিটাল সাইনের ব্যবসা, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপিয়ার দোকান ও এটিএম বুথের গ্রাহকরা হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনায় বেশি বিপাকে পড়ছেন। এছাড়াও পোলট্রি ফার্ম ও শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাচ্ছে। আবার ঝড়োহাওয়া, বৃষ্টিপাতের সময়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ে সরবরাহ বন্ধের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা অন্ধকারে থাকছে শহর ও শহরতলীর গ্রাহকরা।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী এডিএম আবদুল্লাহ বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে সিডিউলভিত্তিক কোনরকম লোডশেডিং নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়টি সিরিয়াস কিছু না। এটি স্থানীয়ভাবে কোন সিষ্টেমের ক্রুটি হতে পারে। আর এখন ঝড়, বৃষ্টিপাতের সময়। কখনো বিদ্যুৎ লাইন বিছিন্ন হচ্ছে, লাইনের উপর গাছের ডালপালা পড়ছে। এগুলো সমাধান করতে সময় লাগছে। ততোক্ষণ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকছে। বিদ্যুতের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সচেষ্ট রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন