শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা ও ভবিষ্যতের সন্ধানে

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বে বসবাযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা নগরী সর্বনি¤œ স্থান লাভ করছে। বিশ্বের ১৪০টি শহরের আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা শহর প্রথম ১৩৯তম স্থান লাভ করে ২০১১ সালে। এরপর নিচের দিক থেকে এ তালিকায় কখনো সর্বশেষ কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ঠাঁই হচ্ছে তার। কোন যুদ্ধের হুমকি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হয়েও দ্য ইকোনমিস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী যুদ্ধবিদ্ধস্ত দামেস্কের পাশাপাশি অবস্থান করছে ঢাকা। এমনকি লিবিয়ার ত্রিপোলি, নাইজেরিয়ার লাগোস বা পাপুয়া নিউ গিনির মোরেস বাই শহর থেকেও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান খারাপ। দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় এখনো ঢাকা অঞ্চল আক্রান্ত না হলেও মাত্র কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে ঢাকার বেশীরভাগ রাস্তায় পানি জমে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার চিত্র থেকেই বোঝা যায়, ঢাকা শহরের বাস্তবতা নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যতই উদ্বেগ থাকুক না কেন, দেশের সরকার এবং ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষের যেন কিছুই করনীয় নেই। তা’ না হলে নৈমিত্তিক যানজটসহ ক্রমবর্ধমান নাগরিক দুর্ভোগে ঢাকা নগরী বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের সর্বনি¤œ স্থান লাভ করার পরও অবস্থার কোন ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান নয় কেন ? ঢাকার নগর পরিকল্পনা নিয়ে অনেক ইতিহাস চর্চা, অনেক ভ্রান্তি বিলাস, হোমওয়ার্ক এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি শোনা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। স্বাধীনতার পর সাড়ে চার দশক পেরিয়ে এসেও ঢাকার জন্য একটি সময়োপযোগী নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
আগামী দশক শেষে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত করার পরিকল্পনা ও স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। ঢাকা শহরকে জনদুর্ভোগ ও বসবাসের অযোগ্য তালিকায় রেখে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেই দেশি- বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে সেমিনারে উপস্থিত দেশি-বিদেশি নগরবিদ, বাস্তু বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। ঢাকার দুই অংশের মেয়রের কণ্ঠে আগের মত আর স্বপ্ন জাগানিয়া বাণী নেই। এখন তাদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে হতাশা ও ব্যর্থতার সুর। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে, যানজটের কারণে প্রতিদিন নাগরিকদের ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। আর্থিক হিসেবে এই ক্ষতির পরিমান দাড়ায় বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকায় যানজট বিড়ম্বনার শুরু অনেক আগেই। তবে এক দশক আগেও যেখানে ঢাকায় যান চলাচলের গড় গতি ছিল ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার, বর্তমানে তা ঘন্টায় ৭ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। শহরের অপরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা এবং অনিয়ন্ত্রিত জনবসতি অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার লোকসংখ্যা হবে সাড়ে ৩ কোটি। মানুষের স্বাভাবিক পায়ে হাঁটার গতি ঘন্টায় ৫ কিলোমিটার হলেও যানজটের কারনে ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকায় যান চলাচলের গতি দাড়াবে ঘন্টায় ৪ কিলোমিটার। অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা শহরকে সংস্কারের বদলে নতুন পরিকল্পনায় ঢাকাকে পূর্বদিকে সম্প্রসারনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, প্রধান প্রশাসনিক শহর, শিক্ষা, শিল্প ও বানিজ্যিক কেন্দ্র। শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক বাহক ঢাকা নগরী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র চার দশকের মধ্যেই তা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিনত হল কেন, এমন প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট কারো অজানা নয়। অত্যাবশ্যকীয় পরিবেশগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন করে গত চার দশক ধরে ঢাকার চারপাশের নদীদখল, শিল্পদূষণ, শহরের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা খালগুলো ভরাট ও দখল, ফ্লাড ফ্লো জোনের নিচু ভ’মিগুলো ভরাট করে অসম ও বিশৃঙ্খল উন্নয়ন চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সময়ে সরকার ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই তৎপরতা অব্যাহত ছিল এবং আছে। বিভিন্ন জরিপ এবং বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষন থেকে বোঝা যায়, গত দশকে ঢাকার অপরিকল্পিত উন্নয়ন যানজট ও পানিবদ্ধতার মত নাগরিক দুর্ভোগ অনেক বাড়িয়েছে। এখন বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে রাসায়নিক দূষণের মাত্রা যেমন পরিশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, একইভাবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা শহরটিকে নাগরিক সেবা,পরিবেশ ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার সুযোগও প্রায় হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ কারণেই বিশ্ব¦্যাংকের বিশেষজ্ঞরা এখন ঢাকার সংস্কার বা উন্নয়নের পরিবর্তে পূর্বদিকে সম্প্রসারনের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে ঢাকার পুরনো খালগুলো পুনরুদ্ধার, নদীগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি স্যুয়ারেজ ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে অবস্থার উন্নয়নের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য রাখতে হলে শিল্প, শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণে নজর দিতে হবে। শহরমুখী জন¯্রােত বন্ধ করতে নদীভাঙ্গন রোধসহ গ্রামীন জনপদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
selina ২১ জুলাই, ২০১৭, ৬:২৪ এএম says : 0
Khal / canal open / park / open space / play ground /pond / water discharge line /four river of metro Dhaka first of all recover at any cost .also needs to improve traffic management by increasing. public buses driver of public buses should trained up technical and manner for better service towards user end .
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন