খুলনা ব্যুরো : খুলনা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা আগামী নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় চান। ইসি ও প্রশাসনে কোন পক্ষপাতিত্বে নয়; সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন আ’লীগ নেতারা। আবার, বিএনপি নেতারা বলছেন-একটি রাজনৈতিক দল সরকারে থেকে নির্বাচন কোনদিন নিরপেক্ষ করা অসম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন করা। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল’র আয়োজনে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ ঃ প্রত্যাশা ও করণীয় শীর্ষক অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেছেন।
খুলনা মহাজোটের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এমপি বলেন, “খুলনাতে রাজনৈতিক চমৎকার সহবাস্থান আছে। কেন্দ্রীয় নেতারা আসলেও একই কথা বলেন। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়া। স্থানীয় প্রশাসন যেন এক পেশে না হন; সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আমরা চাই সুষ্ঠু সুন্দর একটি নিরপেক্ষ নিবাচন। রাজনীতিদের আরো সহনশীল হতে হবে। সিনিয়র সিটিজেটদের লাইনে নয়; দ্রুত ভোটদানের সুযোগ দিতে হবে। বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে পোস্টাল ব্যালট চালুর সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান বলেন, “নির্বাচন কমিশনের উচিত সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বসে একটি সহায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকারকে আরো সহায়নশীল হতে হবে। আমরা কি আজ পারছি-সভা-সমাবেশ করতে? মৃত্যুবার্ষিকীর মতো কর্মসূচিতেও বাঁধা দেয়া হচ্ছে।”
নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আ’লীগ নেতাদের টেবিল থেকেও আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবি উঠেছে। তার মানে তৃণমূল আওয়ামী লীগ আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা ভাবছে। সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা অস্ত্রবাজরা সরকারি দলের আশ্রয় নিচ্ছে। ফুলতলা, দৌলতপুর, রূপসা ও তেরখাদায় সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আগামী নির্বাচনে এসব সন্ত্রাসীরা রাজনীতিতে ব্যবহৃত হতে পারে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রথমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও দাগী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। সকল দলের সাথে বৈঠক করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেন,“সন্ত্রাসীদের দলে প্রবেশে ঠেকাতে আ’লীগ-বিএনপি উভয় দলকে কঠোর হতে হবে। অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজদের কোন দল নেই। আগামী নির্বাচনে সন্ত্রাস, বোমাবাজ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, মন্ত্রী বা সরকারে থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সহায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমেই আসন্ন নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা হতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে যদি পঞ্চাদশ সংশোধনীতে পরিবর্তন বা বাতিলের প্রয়োজন হয়; তবে তাই করতে হবে। বিরোধী দল-মতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় রেখে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। বেশ কিছু আইন গণমাধ্যমের অন্তরায় সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ৫৭ধারা বাতিলের ব্যাপারে সারাদেশ ঐক্যমতে। বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দিতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের উচিত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা।
খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুবীর রায় বলেন, “সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে গণমাধ্যম কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।” রূপান্তরের পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর আমেনা সুলতানার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-খুবি’র পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. দিলীপ কুমার দত্ত, সাবেক সংসদ সদস্য মোল্যা জালাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, আক্তারুজ্জামান বাবু, গাজী আব্দুল হাদী, সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, হুমায়ুন কবির ববি, এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী, এ্যাড. মুজিবুর রহমান, এ্যাড. কাজী বাদশা মিয়া, এ্যাড. নবকুমার মন্ডল, কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুহাসেন চৌধুরী, হালিমা ইসলাম, শোভা রানী,নূর জাহান রুমি ও হেলাল আহমেদ সুমনসহ খুলনা রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন