বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দু’হাত হারিয়েও পড়ালেখা ও ক্রিকেটে এগিয়ে জাহিদুল

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইচ্ছা ইত্যাদিতে নিজের স্বপ্ন তুলে ধরা
রেবা রহমান : দুই হাত হারিয়েও কিশোর জাহিদুল ইসলাম (১৪) থেমে নেই। দৃঢ় মনোবল নিয়ে কর্মচাঞ্চল্যতা থামাতে পারেনি। ৬বছর আগে বিদ্যুৎ¯পৃষ্টে সে আহত হয়ে দুই হাত হারায়। তাতে দুঃখ নেই তার, নেই কোনো স্থবিরতা। আপনগতিতে ছুটে চলেছে সে। তার লক্ষ্য হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে যাওয়ার। সাধ আছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে যোগ দেয়ার। এমন ইচ্ছার কথা জানায়, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের লাউড়ীমোড় এলাকার মাহাবুর বিশ্বাসের ছেলে জাহিদুল ইসলাম। সে স্থানীয় ধলীগাতী হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘এক মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। ৬ বছর আগে জাহিদুল যখন ৩য় শ্রেণির ছাত্র, তখন পাশের একটি দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিচে পড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মণিরামপুর পরে সদর হাসপাতাল, তারপর খুলনা আড়াইশ’ বেডে ১৩ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে কোন উন্নতি হয় না। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিন মাস চিকিৎসা দেয়া হয়। তিন মাসে ৬ বার অপারেশন করে পঁচা হাত কাঁটতে কাঁটতে বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের কিছু অংশ আর ডান হাতের কনুইয়ের নিচের কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকে। এরপর তিন বছর কেটে যায় জাহিদুলের সুস্থ হতে। তবে, এখনও বর্ষা মৌসুমে তার হাতে পঁচন ধরে বলে জানান তার মা রাশিদা বেগম।
তিনি বলেন, ‘জাহিদুলের পিতা স্থানীয় একটি ইটভাটায় চাকরি করেন। এই ছেলে নিজে কিছু করতে পারবে এমনটি ভাবিনি। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছি। পরে ছেলের চঞ্চলতা দেখে মনে সাহস পাই। ভাবলাম, নিজেরা না থাকলে এই ছেলের উপায় কী হবে! তাই ছেলেকে আবার স্কুলে পাঠাই।’ চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বয়স বেশি হওয়ায় একই বছর ৫ম শ্রেণিতে তুলে দেয়া হয় জাহিদুলকে। সেখান থেকে জিপিএ-৪.৭৫ পেয়ে সে ভর্তি হয় পাশের ধলীগাতী হাই স্কুলে। সেখানেও ভাল করায় স্কুলের সবাই তার প্রতি খুশি। জাহিদুলের চলার পেছনে মায়ের ভূমিকা অনন্য।
জাহিদুলের প্রতিবেশী মামুন, আসাদুজ্জামান ও শরিফুল জানান, দুই হাত না থাকলেও প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে সে স্কুলে যায়। দু’তিনজনকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে চালানো তার জন্য কিছুই না। শুধু সাইকেল চালানো নয় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় গ্রামের আর দশটা ছেলের থেকেও জাহিদুল ভাল খেলে। গ্রামের মাঠে তার সর্বোচ্চ রান ১০৭। সে জানায়, জীবনের বড় শখ ‘ইত্যাদিতে’ যাওয়ার। প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট খেলায় যোগ দিতে চায় সে। তাছাড়া লেখাপড়া করে বড় চাকরি করারও আশা করে সে। ধলীগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল বলেন, ‘লেখাপড়ায় জাহিদুল খুবই ভাল। দুই হাত না থাকলেও তার লেখা খুবই সুন্দর। স্কুলের পরীক্ষায় শিক্ষকরা তাকে অতিরিক্ত সময়ও দেন। তাছাড়া কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজেও সে ভাল। এজন্য শিক্ষকরা তার লেখাপড়ার খরচ ফ্রি করে দিয়েছেন।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন