সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পুলিশের পরিচয়ধারী অপরাধী চক্র দমাতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৭ জুলাই, ২০১৭

আজিমপুরের ব্যস্ত এলাকায় দিনে দুপুরে সন্দেহভাজন সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের সন্ত্রাসীদের সাথে এলিট ফোর্স র‌্যাবের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে আজিমপুর এলাকার একটি মার্কেটের সামনে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ’ লেখা স্টিকারযুক্ত একটি প্রাইভেটকারে অবস্থানরত ব্যক্তিদের সম্পর্কে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর টহল দল সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে র‌্যাবের কেউ হতাহত না হলেও র‌্যাবের পাল্টা গুলিতে অন্তত দু’জন আহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দু’টি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সংঘবদ্ধ চক্রের অপর সদস্যরা আরো একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ ও ডিবি পরিচয়ে ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাÐ চালিয়ে আসছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় আজিমপুর এলাকায় র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছিল। র‌্যাব-১০ এর চৌকস অফিসাররা নজরদারি ও গোপন সুত্রের ভিত্তিতে এসব সংঘবদ্ধ অপরাধীর বিরুদ্ধে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একাধিক সফল অভিযান পরিচালনার নজির স্থাপন করল।
সাম্প্রতিক সময়ে সাদা পোশাকে ডিবি পলিশের পরিচয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি নগরবাসীর জন্য একটি আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর বহু মানুষের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ডিবি বা পুলিশের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে এসে তুলে নেয়ার পর লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ এবং হত্যাকাÐের ঘটনাও ঘটছে। সত্যিকার অর্থেই পুলিশ বা ডিবি এসব কর্মকাÐের সাথে জড়িত নাকি পুলিশের পরিচয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এসব করছে তা নিরূপণ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে তা অস্বীকার করা এবং পরে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর মতো ঘটনাও আছে। বিশেষত বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন অনেক ঘটনা ঘটার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাÐ নিয়ে জনমনে এক ধরনের সংশয় ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পুলিশের পরিচয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে পুলিশের বিবৃতি দেখা গেলেও এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপতৎপরতার দায় এড়াতে পারে না। সম্প্রতি কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারের রহস্যজনক অপহরণের ঘটনায় রাজনৈতিক বেøইম গেইম দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দাবির প্রেক্ষাপটে বিএনপির তরফ থেকে গত তিন বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে গুম বা অপহরণের শিকার প্রায় সাড়ে চার শ’ মানুষের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের শিকার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। নাগরিকরা যেভাবেই অপরাধের শিকার হোন, ভিকটিমদের উদ্ধার এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। এ দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি গুম ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রধানত বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা গুম-অপহরণ ও অপমৃত্যুর শিকার হওয়ায় সরকারি বাহিনীগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়লেও তা দূর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এক সময় উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকে অভিযান এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার বন্ধে আদেশ জারি হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম-অপহরণ কিছুটা কমলেও কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আর সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার অনেক ঘটনাই সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। যেসব ক্ষেত্রে অপরাধীদের জীবিত ধরতে পারলে তাদের বাদবাকি সদস্যদের ধরা সহজ হয় এবং অপরাধের মূলোৎপাটন সম্ভব হয়, সেখানে অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি এবং বিচার শুরুর আগেই ধৃত অপরাধীরা নিহত হওয়ায় অনেক কিছুই পর্দার অন্তরালে চাপা পড়ে যায়। তবে মঙ্গলবারে র‌্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় তাদের কাছ থেকে সংঘবদ্ধ চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই গুম-অপহরণ, ছিনতাই-ডাকাতির শিকার হচ্ছে মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এমন ঘটনা ঘটলে মানুষের আশ্রয়ের আর কোনো জায়গা থাকে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছদ্মবেশী অপরাধীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যও এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গতানুগতিক বিভাগীয় শাস্তি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো সভ্য সমাজে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা চলতে পারে না। এহেন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। রাজধানীতে র‌্যাবের সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। এ জন্য র‌্যাবকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং এ রকম তৎপরতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা অকুণ্ঠ ভাষায় স্বীকার করি ও তাতে সমর্থন জানাই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন