সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ

ল²ীপুরে নিস্ক্রিয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম বাবুল(বাবর) ল²ীপুর থেকে : ল²ীপুরে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য। জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এতে করে জেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মাদকের নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে ছাত্র-যুবক তথা তরুণ প্রজন্ম। ধংশ হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। বর্তমানে ইয়াবা, গাঁজার ও ফেনসিডিলের দিকে নজর মাদক সেবিদের। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর হাজারো মানুষ আশক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে। মাদক ব্যবসায় সম্প্রতি জেলার নারীদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নিস্ক্রিয়তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদাসিনতা, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, মাদকের সহজলভ্যতা, মাঝে মাধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে মাদকদ্রব্য সেবন কিংবা বিক্রির দায়ে গ্রেফতারকৃতরা সহজে জামিনে বেরিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কারনে মাদক ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারন। কুমিল্লার পদুয়া, সুয়াগাজি, ফেনীর মোহাম্মদ আলী, বিলোনিয়া, পশুরাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি থেকে বালুর ট্রাক ও মৌসুমী বিভিন্ন ফলের ট্রাকে, বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ইয়াবা, বিভিন্ন মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ল²ীপুরে আসে। এছাড়া পার্শ্ববতী মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজার হয়ে সড়ক পথে ও মেঘনা নদী পথে এসব মাদক ল²ীপুরে আসে।
সূত্র জানায়, জুলাই মাসে ল²ীপুর সদর থানা এলাকায় ১২ অভিযানে ৫০০ পিস ইয়াবা ২০ কেজি ২৫০গ্রাম গাঁজা ০৫ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করে পুলিশ এসব অভিযানে এক মহিলাসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রামগঞ্জ থানা এলাকায় জুলাই মাসে ৯টি অভিযানে ১৪২৫ পিসচ ইয়াবা, ২০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ এসব ঘটনায় মহিলা সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সস্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের একজন সচিবকেও ইয়াবা সহ গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরা জড়িত রয়েছে। প্রভাবশালীদের কারণে প্রশাসনও নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারি ম্যানের সাহায্যে মাদক পৌছে দেওয়া হয় বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্রম্যমান বিক্রেতারা মাদকদ্রব্য বিভিন্ন স্পটে বিক্রি করে ।
পুলিশকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চলে এমন অভিযোগও রয়েছে। জেলা-উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাদকের ছড়াছড়ি হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা । এসব মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজের তরুণ ছাত্ররা। যার ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকরা।
অনুসন্ধানে দেখাযায়, সদর উপজেলার একাধিক স্পটে মাদকদ্রব্য বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। উপজেলার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাস টার্মিনাল, বিসিক এলাকা, আটিয়াতলী ১১ নং ওয়ার্ড, ১২ নং ওয়ার্ড, ৬-৭ নং ওয়ার্ড এর বিভিন্ন এলাকা, আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন, সরকারি মহিলা কলেজ (৪নং ওয়ার্ড), গরু বাজার, মাদাম এলাকা,সদরের ২নং দক্ষিণ হামছাদীর পালের হাট বাজার, শিশু পার্কের আশেপাশের এলাকা, রাজিবপুর, পার্বতিনগর, দত্তপাড়া ইউনিয়ন, হাজিরপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, সরকারি হাসপাতাল গেইট, মজু চৌধুরীর হাট, লাহারকান্দি ইউনিয়নের যুগীরহাট, ঝুমুর এলাকা, জেলা নির্বাচন অফিস এলাকা, শাখাড়ী পাড়া, সমসেরাবাদ জোড় দিঘীর পাড় এলাকা, জকসিন বাজার এলাকা সহ বিভিন্ন স্পটে অবাদে বিক্রি হচ্ছে মাদক দ্রব্য।
সহজে বহন যোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্পটে মটর সাইকলে, সিএনজিসহ বিভিন্ন বাহনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার গুরুত্বপুর্ণ স্থানে একাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা চলছে। দলীয় পরিচয়ে উঠতি বয়ষের তরুণ ও যুবকরা পৌর শহরে অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ও মহল্লায় মাদক সেবন করে। জনশ্রæতি রয়েছে, জনপ্রতিনিধি-রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংঘঠনের অনেকেই মাদকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। এলাকায় তরুণ ও যুবক মাদক সেবীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠায় রয়েছেন। উৎবিগ্ন অভিভাবক মহল মাদকদ্রব্যের মরন ছোবল থেকে আদরের সন্তানদের বাছানোর স্বার্থে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সহায়তা কামনা করেন।
২৬ জুলাই বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের আয়োজনে মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০১৭ উপলক্ষ্যে ল²ীপুরে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সদর উপজেলা প্রাঙ্গন থেকে র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মুর্শিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মীর শওকত হোসেন । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী পুলিশ সুপার অনির্বান চাকমা, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্ল্যাহ আল মামুন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ নজীব আলী।
অভিভাবকদের মতে বছরের দু”একদিন র‌্যালি কিংবা মাদক বিরোধি সমাবেশ করে তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁছানো যাবেনা। তাঁদের মতে, প্রতিনিয়ত স্কুল, মাদরাসা, কলেজসহ পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত মাদক বিরোধী সমাবেশ, এলাকা ভিত্তিক কাউন্সিলিং, মাদক বিরোধি প্রচার-প্রচারনা, মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরা, স্কুল-কলেজ,পাড়া মহল্লায় খেলাধুলার প্রচলন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চা ও সর্বোপরি তরুণ প্রজন্মের মঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক ব্যাধি মাদকের করাল গ্রাস থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব।
ল²ীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ লোকমান হোসেন জানান, মাকদের বিষয়ে কোন আপোষ নেই। এ ব্যাপারে পুলিশ জিরোটলারেন্স নীতিতে রয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শহরে মাদকদ্রব্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ল²ীপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্ষক নাজীব আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন