পটিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের পটিয়ায় একের পর এক খুন, ধর্ষণ, মদ ও ইয়াবা ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, জবরদখলসহ বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের সাত মাসে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে রীতিমত ব্যর্থ। যার কারণে প্রতিদিন উপজেলার কোন না কোন ইউনিয়নে অথবা পৌর সদরে মারামারি, জায়গা দখল-বেদখল ছাড়াও প্রকাশ্যে মাদকের ব্যবসা চলছে। মাদকের কারণে খুন-খারাবিসহ অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ এ পর্যন্ত পৌর সদর ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে খুনসহ ১৮টি লাশ উদ্ধার করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার একদিনে উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নাইখাইন ও কেলিশহর ইউনিয়নের শান্তি নিকেতন এলাকা থেকে পুলিশ দুইটি লাশ উদ্ধার করে। ফলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সাত মাসে পটিয়া পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পুলিশ প্রায় ১৮টি লাশ উদ্ধার করেছে। গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রাম থেকে ইশরাত জাহান (২০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের লাশ নিজ বসত ঘর থেকে উদ্ধার করে। গত ১ ফেব্রæয়ারি উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে মো. ওয়াসিম (২৮) নামের এক যুবক, ১০ ফেব্রæয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় চিটাগাং ডক ইয়ার্ডে ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন প্রজন্মলীগ উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ বাহাদুর (৩০)। ১৪ ফেব্রæয়ারী উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সেনপাড়া এলাকায় ধনা সেন (১৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে গোপনে পুড়ে ফেলার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। পরের দিন ১৫ ফেব্রæয়ারী ছনহরা ইউনিয়নে ইয়াছমিন আকতার (৩০) নামের এক গৃহিনীর লাশ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ মর্গে করে। ২১ এপ্রিল উপজেলার খরনা ইউনিয়নে এস এম শফি (৩৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। ২ মে উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড় থেকে জেসমিন আকতার ঝিনু (২৬) নামের এক নববধূর লাশ উদ্ধার করে। একই ঘটনায় মারা গেছেন মোঃ রাসেল (৩০) নামের আরো একব্যক্তি। ১৮ মে উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের থানা মহিরা গ্রামের কুতুবিয়া মাদ্রাসার পুকুর থেকে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। ২ জুন পারিবারিক কলহে খুন হয়েছেন উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মালিয়ারা গ্রামের মো. এরমরান হোসেনের কণ্যা কুলসুমা (২৩)। ৮ জুন উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নে পানি নিস্কাশনে বাধা ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন আবদুল হক নামের এক যুবক। ১৪ জুন পটিয়া সদরের হাসপাতাল গেইট এলাকা থেকে ২২ বছর বয়সের অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। ৬ জুলাই থানার ২০ গজের ব্যবধানে অজ্ঞাতনামা এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ জুলাই সকালে উত্তর হাইদগাঁও এলাকা থেকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে খুন করে জমির হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যাক্তিকে। ঐদিন বিকেল ৪টায় পুলিশ উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের চন্দ্রকলা ব্রীজ এলাকা থেকে অনিমা দাশ (৫৫) নামের এক গৃহিনীর গলিত লাশ উদ্ধার করে। ৩১ জুলাই উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের চানখালি খালের একটি শাখা খাল থেকে নজরুল ইসলাম নামের একব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। ৩ আগস্ট উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নাইখাইন গ্রাম থেকে কামাল উদ্দিন (২৭) ও একইদিন দুপুরে কেলিশহর ইউনিয়নের শান্তি নিকেতন এলাকা থেকে রুপম দেব (৪৫) নামের এক দিনমজুরের লাশ পুলিশ পুকুর থেকে উদ্ধার করে।
পুলিশ বাহাদুর হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর যেসব খুনের ঘটনা ঘটেছে তার কোন ক্লু কিংবা প্রকৃত আসামীদের ধরতে পারেনি। এদিকে, গত রবিবার পটিয়া উপজেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পটিয়ার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদারদের পুলিশ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, থানার কিছু আনসার কনস্টেবল দীর্ঘদিন এ থানায় থাকায় ইয়াবা সহ মদ ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের সখ্যতা রয়েছে। তাই ইয়াবা ও মাদক সেবীদের অভিযান সফল করতে হলে ৩ মাস অন্তর অন্তর এই আনসার সদস্যদের রদবদল করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন