শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিশেষজ্ঞের অভাবে অচল কয়েকটি বিভাগ

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ ওমর ফারুক, ফেনী থেকে : দুপুরের আগেই ডাক্তার শূন্য হয়ে যায় ২৫০ শয্যার ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ডাক্তাররা প্রতিদিন নানা অজুহাতে চলে যান প্রাইভেট চেম্বারে বা অন কলে রোগী দেখার জন্য। গত কয়েকদিন ধরে ফেনী সদর হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আউটডোর খোলা থাকবে। এ সময় মেডিকেল অফিসাররা রোগী দেখবেন বলে নোটিশ বোর্ডে উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মেডিকেল অফিসারদের প্রেরিত রোগী দেখবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এ নিয়ম উপেক্ষিত হচ্ছে। ডাক্তারদের কেউই হাসপাতালে প্রবেশ এবং ত্যাগের সময়সীমা মানছেন না। সকাল ৮টায় হাসপাতালে প্রবেশের নির্ধারিত সময় হলেও ৯টা বা সাড়ে ৯টার আগে কোন ডাক্তার আসেন না। আবার দুপুর ১টা বাজতেই আর হাসপাতালের চেম্বারে বসতে চান না তারা। যে কোন অজুহাতে পালানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। অনেকে নামাজের উছিলায় গিয়ে আর চেম্বারে ফিরেন না। আবার ক্ষমতাধররা এসবের ধার ধারেন না। ফলে তারা ১টা বাজতেই চেম্বার ছেড়ে চলে যান।
এদিকে রোগীদের গালাগাল ও খারাপ ব্যবহার, জরুরী বিভাগের মতো জায়গায় বসে টিভি দেখা, নির্ধারিত সময়ের অনেক পূর্বে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছেন মেডিকেল অফিসার গোলাম সদরুদ্দীন। তিনি এ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন মাত্র ২ মাস পূর্বে। মেডিকেল অফিসার হলেও সম্প্রতি তিনি কার্ডিওলজিতে এমডি সম্পন্ন করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তাই হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে তার মূল্য অনেক বেশি। শহরের ফেনী ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে ৭শ’ টাকা ভিজিটের বিনিময়ে রোগী দেখেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার ও কয়েকজন শিক্ষানবীশ নার্স জানান, শুধু রোগীদের সাথে নয় প্রতিবাদ করার সুযোগ না থাকায় সদরুদ্দীনের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন তারাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগটি টেকনিশিয়ানের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে। এ বিভাগে মন্ত্রণালয় থেকে ১টি অত্যাধুনিক মেশিন পাঠানো হলেও ৩ মাস ধরে অজ্ঞাত কারণে তা সংযোজন করা হয়নি।
এদিকে বিশেষজ্ঞ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগ। হাসপাতালে তত্ত¡াবধায়ক না থাকায় এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এই বিভাগে কোন ডাক্তার যোগ দেননি। অর্থোপেডিক বিভাগের শুন্যতা পূরণে ডিজির পক্ষ থেকে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ওএসডি ডাক্তার শ্যামল চন্দ্র বর্মণকে পদায়ন করা হয়। তার নিবন্ধন কোড নং-১১৪৬৩৭। এর ১ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
এদিকে অর্থোপেডিক ডাক্তার না থাকায় প্রতিদিন এ বিভাগের প্রায় শতাধিক রোগী জেলার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। এসব প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তার না থাকলেও প্রথমে ডিউটি ডাক্তার আর নার্সের মাধ্যমে নামমাত্র প্লাষ্টার করে রোগীদের ধরে রাখা হয়। পরে সাপ্তাহিক ভাড়াটে ডাক্তার এনে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সচেতন মহল মনে করছেন পরিকল্পিতভাবে ২৫০ শয্যার ফেনী সদর হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগটি ডাক্তার শূন্য রাখা হয়েছে। জেলার ১৬ লাখ ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোর আরো ১৬ লাখ মিলিয়ে মোট ৩২ লাখ লোকের চিকিৎসা সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ফেনী সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি সচল করতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ফেনীবাসী। জানতে চাইলে সার্জারী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কামারুজ্জামান বলেন, অর্থোপেডিকের মতো এমন গুরত্বপূর্ণ বিভাগ ডাক্তার শূন্যতায় অচল থাকায় প্রচুর রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক নিজেই জানেন না কবে এ বিভাগে ডাক্তার আনা সম্ভব হবে। ডাক্তার শূন্যতায় অর্থোপেডিক বিভাগের অচলাবস্থার বিষয়ে জানতে ফেনী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ারের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে এ বিভাগের ডাক্তার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বার বার মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেও কোন ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এক্স-রে বিভাগেও টেকনিশিয়ান নেই বলে জানান তিনি। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন সিভিল সার্জন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন